ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় কর্মশালায় ড. আব্দুর রাজ্জাক

কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বিপ্লব ঘটাতে চাই

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ১৫ জুন ২০২১

কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বিপ্লব ঘটাতে চাই

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, কৃষিভিত্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য আমরা দেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের বিপ্লব ঘটাতে চাই। এজন্য আমরা ৩ হাজার কোটি টাকার কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প নিয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা কৃষকদের ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে কৃষি যন্ত্র দিচ্ছি। এটি সারা বিশ্বে একটি বিরল ঘটনা। এর মাধ্যমে কৃষকের যেমন সময় বাঁচবে, তেমনি কৃষকের খরচও সাশ্রয় হবে। রবিবার বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের জাতীয় কর্মশালায়’ বক্তৃতা দিতে গিয়ে কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা দেশেই কৃষি যন্ত্র উৎপাদন করে চাহিদা মেটাতে চাই। এজন্য বাজেটে ব্যাপক ছাড় দেয়া হয়েছে। বর্তমানে বেশিরভাগ কৃষি যন্ত্রই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। এই যন্ত্র দেশে উৎপাদন হলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। শুধু তাই না, কৃষির যান্ত্রিকীকরণ ঘটলে দেশে স্থানীয়ভাবে খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি ও মেরামত কারখানা গড়ে উঠবে। ফলে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হবে। মন্ত্রী বলেন, দেশেই ট্রাক্টর, হার্ভেস্টার তৈরি জন্য আমরা টাটা, ইয়ানমারের মতো বড় কোম্পাানিকে এদেশে আনার চেষ্টা করছি। তারা বলেছে, এদেশে তারা বিনিয়োগ করবে, কৃষি যন্ত্র বানাবে। সেই চেষ্টাই আমরা করছি। কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষকদের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এই টাকা কৃষকদের পেছনেই ব্যয় করা হবে। এছাড়া বাজেটে কৃষি যন্ত্র তৈরি ও আমদানির ওপর কর ছাড় করা হয়েছে। এর ফলে দেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের প্রসার ঘটবে। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, কৃষি যান্ত্রিকীরণ করা হলে দেশের জেলায় জেলায় যন্ত্র মেরামতের ওয়ার্কশপ গড়ে উঠবে। বিরাট বাজার তৈরি হবে কৃষি খুচরা যন্ত্রাংশের। তিনি কৃষি যন্ত্র সরবরাহকারীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা যারা কৃষি যন্ত্র সরবরাহ করছেন, তাদের যন্ত্র দেয়ার পর তা নষ্ট হলে মেরামতের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষক যাতে সহজে যন্ত্রাংশ কিনতে পারে সেজন্য কৃষি যন্ত্রাংশ সহজলভ্য করতে হবে। কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে, যাতে নিজেদের কৃষি যন্ত্র নিজেরাই মেরামত করতে পারেন। মন্ত্রী বলেন, এক সময় আমরা চিন্তাও করিনি যে, হাওড় অঞ্চলে যন্ত্র দিয়ে ধান কাটব। গত দুই বছর ধরে আমরা সেই হাওড়ে কৃষি যন্ত্র দিয়ে ধান কাটছি। ফলে খুব দ্রæত হাওড়ের ধান কাটা হয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, এতে কৃষকের যেমন ধান কাটতে সময় কম লাগছে, তেমনি অর্থও সাশ্রয় হচ্ছে। আমরা এখন পরিকল্পনা নিয়েছে একই দিনে বিভিন্ন এলাকায় ধান লাগানোর এবং একই দিনে ধান কাটার। এটা করতে পারলে আমরা কৃষি যন্ত্রের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারব। এজন্য আমরা কর্মসূচী নিচ্ছি। আগামী অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, গত বছর আমরা এই করোনার মধ্যেও ৫.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। চলতি বছর এই প্রবৃদ্ধি ছয় শতাংশ হবে। আর করোনা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি সাত শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, আমরা যখন ২০০৮-০৯ সালে দায়িত্ব নিয়েছিলাম তখন এদেশের জিডিপির আকার ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। আর এখন এই জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২৮ লাখ কোটি টাকা। আমরা মাথাপিছু আয়ে ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছি। ভারতের চেয়ে যেখানে মাথাপিছু আয়ে আমরা পিছিয়ে ছিলাম, সেখানে এখন আমাদের মাথাপিছু আয় ভারতের চেয়ে ১০ ডলার বেশি। এমন অনেক অর্জন বাংলাদেশের আছে। সুশীল সমাজকে উদ্দেশ করে মন্ত্রী বলেন, এক শ্রেণীর সুশীল সমাজ টক শোতে বলছেন আমরা দরিদ্রদের জন্য কিছু করিনি। বর্তমান সরকার যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে তখন দেশে ডিএপি (ডাই-এ্যামোনিয়াম ফসফেট) সারের দাম ছিল প্রতি কেজি ৯০ টাকা। দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম মন্ত্রিসভা বৈঠকেই আমরা সেই সারের দাম ২৫ টাকায় নামিয়ে আনি। আর আমি কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর সেই সারের দাম ১৬ টাকা করেছি। আসলে সারে বিদ্যমান নাইট্রোজেন ও ফসফেট হিসাব করলে এই সারের দাম পড়ে প্রতি কেজি ১২ টাকা। আর ভারতে এই সারের দাম ৪৫ টাকা। আগে দেশে এই সার বছরে ব্যবহার হতো ৭ লাখ টন। দাম কমানোর কারণে বর্তমানে এই সার ব্যবহার হচ্ছে ১৫ লাখ টন। এই যে বিপুল ভর্ভুকি দিয়ে ডিএপি সার দিচ্ছি তা তো এদেশের দরিদ্র কৃষকরাই লাভবান হচ্ছে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতির প্রাণশক্তি হলো কৃষি। বিশ্বের সব দেশই উন্নতি করেছে কৃষি দিয়ে। বাংলাদেশের কৃষিও হবে অর্থনীতির সকল উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু। তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ছাড়া কোন অর্থনীতিই উন্নতি করতে পারে না। বাংলাদেশের কৃষি সেই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। দানা জাতীয় খাদ্যে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। ফলে দারিদ্র্য কমছে। কারণ দারিদ্র্য পরিমাপের প্রধান ্উপকরণই হচ্ছে খাদ্য। আমরা এখন নিরাপদ খাদ্য এবং পুষ্টি সহায়তা নিশ্চিত করতে চাই দেশের মানুষের। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ আসাদুল্লাহ এই কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন। এতে আরও বক্তব্য রাখেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ মেজবাহুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোল, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আবদুস সাত্তার মন্ডল, বার্কের চেয়ারম্যান শেখ মোঃ বখতিয়ার, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মঞ্জুরুল আলম, এসিআই মোটরসের ব্যবস্থাপনা পারিচালক এস এ আনসারি, আলী ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক আলী হাসান চৌধুরী, কৃষি বিশেষজ্ঞ হামিদুর রহমান প্রমুখ। কর্মশালায় দুজন কৃষক কৃষি যন্ত্র ব্যবহারে তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।
×