ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

উল্লসিত আলোকিত গ্রামের মানুষ

দুর্গম দ্বীপে বিদ্যুত, ঘরে ঘরে আলোর উৎসব

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ১৫ জুন ২০২১

দুর্গম দ্বীপে বিদ্যুত, ঘরে ঘরে আলোর উৎসব

শংকর লাল দাশ ॥ মুজিববর্ষেই আলোকিত হচ্ছে পটুয়াখালীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দুর্গম ১৬১ টি দ্বীপগ্রাম। ইতোমধ্যে গলাচিপা উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিছিন্ন দুই দ্বীপ ইউনিয়ন- চরকাজল ও চরবিশ^াসের ২২ গ্রামে বিদ্যুত পৌঁছে গেছে। এসব গ্রামের ঘরে ঘরে চলছে আলোর উৎসব। বর্তমানে আরেক বিচ্ছিন্ন উপজেলা রাঙ্গাবালীর ১৩৯টি দ্বীপগাঁয়ে বিদ্যুত পৌঁছে দিতে চলছে নিরলস প্রচেষ্টা। ঝড়-বৃষ্টিসহ প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে চলছে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার নানাবিধ কর্মযজ্ঞ। এসব দ্বীপগাঁয়ে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার কাজ শেষ হলে সাগরপারের পটুয়াখালী জেলা শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আসবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার ১২ ইউনিয়নের মধ্যে ১০ ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকা অনেক আগেই বিদ্যুতায়িত হয়েছে। বাকি ছিল কেবল দ্বীপ ইউনিয়ন চরবিশ^াস ও চরকাজল। ইউনিয়ন দুটিতে বিদ্যুত সংযোগে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায় একপাশে তেঁতুলিয়া নদী। আরেকপাশে বুড়াগৌরাঙ্গ ও কাজল নদী। শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার মুজিবনগর সাবস্টেশন থেকে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে তেঁতুলিয়া নদীর তলদেশ দিয়ে চরবিশ^াস-চরকাজলে বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হয়। কর্তৃপক্ষের মতে-এটি দেশের অন্যতম দীর্ঘ সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ, যার দৈর্ঘ্য চার কিলোমিটার। সরকারের ভিশন-২০২১ এর আওতায় দেশ শতভাগ বিদ্যুতায়নের অংশ হিসেবে গত ১০ জুন আনুষ্ঠানিক সংযোগ উদ্বোধনের মাধ্যমে গোটা এলাকা আলোকিত হয়ে ওঠে। এ উপলক্ষে চরবিশ^াস কে আলী কলেজ মাঠে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিদ্যুত সংযোগ উদ্বোধন করেন, অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পটুয়াখালী-৩ আসনের এমপি এসএম শাহজাদা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গলাচিপা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুঃ শাহিন শাহ, ভোলা পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার আবুল বাশার আজাদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশিষ কুমার, আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক সন্তোষ দে, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা টিটো, ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ নিজামউদ্দিন, চরবিশ্বাস ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জেল হোসেন বাবুল মুন্সি ও চরকাজল ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রুবেল। ভোলা পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার আবুল বাশার আজাদ জানান, দুর্গম ইউনিয়ন দুটির ২২ টি দ্বীপগাঁয়ে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার জন্য চরকাজলে ২৩৮ কিলোমিটার ও চরবিশ^াসে ২২৭ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন টানা হয়েছে। ৫০৪ টি ট্রান্সফর্মার স্থাপন করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে চরকাজলে ২৩৮টি সংযোগের মাধ্যমে ৭ হাজার ৫ শ’ ৯৮ জন ও চরবিশ^াসে ২২৭টি সংযোগের মাধ্যমে ৬ হাজার ১৪ গ্রাহক বিদ্যুত সুবিধার আওতায় এসেছে। পর্যায়ক্রমে শিগগির ইউনিয়ন দুটির প্রান্তিক দুর্গম পর্যায়ে বিদ্যুত পৌঁছে যাবে। তিনি আরও জানান, ইউনিয়ন দুটিতে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়া ছিল একটি কঠিনতম লড়াই। যা বিদ্যুত বিভাগের কর্মীরা সাফল্যের সঙ্গে মোকাবেলা করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে বিদ্যুত পৌঁছে দিতে গ্রাহক পিছু ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বিদ্যুত সংযোগ উদ্বোধনে ইউনিয়ন দুটির ২২টি গ্রামই ছিল উৎসবমুখর। স্থানীয় মানুষ এতদিন কেবল বিদ্যুতের আলো শহরেই দেখে এসেছে, কিন্তু তা যে নিজ বাড়ির আঙিনায় পৌছবে; তা ছিল কল্পনার বিষয়। এদিকে ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুত’ ¯েøাগান বাস্তবায়নে বর্তমানে পটুয়াখালীর সাগরপারের দুর্গম উপজেলা রাঙ্গাবালীর ১৩৯ গ্রামে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দিতে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলছে। পটুয়াখালীর সর্বশেষ দক্ষিণপ্রান্তে বঙ্গোপসাগরের তীরঘেঁষে ৩৪৩ দশমিক ৬৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের রাঙ্গাবালী ২০১১ সালে উপজেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও সেখানে আজও পৌঁছেনি বিদ্যুতের আলো। সেখানে সব কাজকর্ম হয় পুরনো পদ্ধতিতে। জেলা সদরের সঙ্গে নেই সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা। উত্তাল আগুনমুখা, বুড়াগৌরাঙ্গ আর রামনাবাদ নদী পাড়ি দিয়ে পৌঁছাতে হয় রাঙ্গাবালী উপজেলা সদর বাহেরচরে। উপজেলার গ্রামগুলো আরও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এবার সে রাঙ্গাবালীর দেড়লাখ বাসিন্দা বৈদ্যুতিক আলোর সুফল পেতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী, মুজিববর্ষেই বিদ্যুতের আলো যাবে সেখানে। অফগ্রিড অর্থাৎ দেশের যেসব এলাকায় সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুত সরবরাহ সম্ভব নয়, সেসব এলাকায় বিদ্যুত পৌঁছে দিতে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এসব এলাকায় সাবমেরিন ক্যাবল ব্যবহার করে গ্রিডলাইনে বিদ্যুতায়ন করা হচ্ছে। পলী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। বর্তমানে আরইবির আওতায় গ্রিডভিত্তিক উপজেলা ৪৬১টি। আর অফগ্রিড তালিকায় রয়েছে একমাত্র উপজেলা রাঙ্গাবালী। উপজেলার পুরোটাই চর ও দ্বীপ এলাকা। অনেক নদী দ্বারা বেষ্টিত। সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে নদী অতিক্রম করে গ্রিডলাইনে বিদ্যুত সরবরাহ করা হবে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের গলাচিপা জোনের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মোঃ মাঈনুদ্দিন জানান, মুজিববর্ষেই রাঙ্গাবালী উপজেলায় বিদ্যুত পৌঁছে দিতে বিভাগীয় কর্মীরা রাতদিন কাজ করে চলছেন। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মাঝেও সব প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে সরকারের দেয়া অঙ্গীকার বাস্তবায়নে নিরলস চেষ্টা চলছে। আশা করা হচ্ছে, শীঘ্রই রাঙ্গাবালীর দ্বীপগাঁয়ের মানুষ বিদ্যুত পাবে।
×