ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এ ধরনের অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ

টিকটক-লাইকির ৪০ গ্রæপের সন্ধান

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ১৫ জুন ২০২১

টিকটক-লাইকির ৪০ গ্রæপের সন্ধান

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রযুক্তি ব্যবহারে মাধ্যমে যে অপরাধ হচ্ছে তা দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি এ ধরনের অপরাধে সারাদেশে তোলপাড় চলছে। উন্নয়নের সঙ্গে পাল্টে যাওয়া অপরাধের ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে হাতিয়ার বানিয়ে চলছে এইসব অপরাধ। টিকটক-লাইকির সঙ্গে ইমো, মাইস্পেস, ফেসবুক, ইউটিউব, স্ট্রিমকার, হাইফাইভ, বাদু ইত্যাদি এ্যাপে কঠোর নজরদারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একই সঙ্গে অপরাধীদের তালিকা তৈরির কাজ হাতে নিয়েছে। জানা গেছে, টিকটক-লাইকি সিন্ডিকেটের অন্তত ৪০টি গ্রæপের সন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই ৪০টি গ্রæপে কাজ করছে ৫ শতাধিক তরুণ-তরুণী। এসব গ্রæপের সদস্যরা নারী পাচার, কিশোর গ্যাং, যৌন হয়রানি, যৌন নিপীড়ন, চাঁদাবাজি, ছিনতাই-রাহাজানি থেকে শুরু করে হত্যাকাণ্ডের মতো বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্নস্থানে তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে এসব অপরাধ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে অশ্লীল ভিডিও, কুরুচিপূর্ণ ও অসামাজিক অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করছে সিআইডি, র‌্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। টিকটক ও লাইকির মাধ্যমে তরুণ-তরুণীদের আকৃষ্ট করে প্রলোভনের টোপে ফেলে পাচার করার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হয়। নারী পাচারের ঘটনাগুলোর বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এ্যাকশনে যাওয়ায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে গ্রেফতার অভিযান চালিয়ে অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অশ্লীল ভিডিও তৈরিতে জড়িত লাইকি ও টিকটকের সিন্ডিকেটের এইসব গ্রæপের সন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তরুণ-তরুণীদের অশ্লীল ও উদ্ভট ভঙ্গিমার দৃশ্য ধারণ করে বানানো হচ্ছে টিকটক-লাইকির কনটেন্ট। পরে এ্যাপ ব্যবহার করে এসব প্রচার করা হচ্ছে। এসব লাইকি ও টিকটক তৈরির ক্ষেত্রে প্রতিটি গ্রæপের একজন এ্যাডমিন থাকে। সেই এ্যাডমিনের প্রতিটি গ্রæপে ১০ থেকে ১৫ জন তরুণ-তরুণী জড়িত। এ পর্যন্ত যে ৪০টি গ্রæপের সন্ধান পাওয়া গেছে তাতে পাঁচ শতাধিক তরুণ-তরুণী জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে। লাইকি ও টিকটকের এসব অশ্লীল ভিডিও দেখে তরুণ-তরুণীসহ শিশুরা বিপথে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ওই সব টিকটক ও লাইকি নির্মাণকারী এবং এসব প্ল্যাটফর্মে অভিনয়কারীদের শনাক্ত করতে মাঠে নেমেছে পুলিশ ও র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জেই লাইকি ও টিকটক গ্রæপের সংখ্যা বেশি। সম্প্রতি তা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। গাজীপুরে টিকটক-লাইকি বানানোর জন্য একদল তরুণী ভাড়ায় পাওয়া যায়। তারা নিয়মিত এসব অশ্লীল ভিডিওতে কাজ করে। প্রতিটি কনটেন্টের জন্য তারা এক থেকে দুই হাজার টাকা নিয়ে থাকে। টিকটক-লাইকি তৈরির জন্য তরুণীদের আলাদা গ্রæপ রয়েছে। অল্প টাকা দিয়ে তাদের অভিনয় করানো যায় বলে গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, টিকটক এ্যাপ ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে টিকটক হৃদয়, অপু, সজীব, নয়ন বন্ড, সুজন ফাইটারের মতো অপরাধীরা। এসব কিশোর গ্যাং যৌন হয়রানি, যৌন নিপীড়ন, চাঁদাবাজি, ছিনতাই-রাহাজানি থেকে শুরু করে হত্যাকাণ্ডের মতো বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। অনলাইনভিত্তিক এসব গ্যাং কালচার রোধে সাইবার নজরদারি করা হচ্ছে। পৃথিবীর কোন কোন দেশে টিকটক-লাইকির মতো এ্যাপ বন্ধ করেছে এবং করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ে আলাপ আলোচনা ও বৈঠক হয়েছে। টিকটক অপু (ইয়াসিন আরাফাত অপু) গত বছরের ২ আগস্ট ঢাকার উত্তরায় কয়েক বন্ধুসহ সড়ক বন্ধ করে দিয়ে টিকটক তৈরির জন্য ভিডিও করে আলোচনায় এসে তোলপাড় সৃষ্টি করে। সেখানে একজনের গাড়ি আটকে যায়। পরে তার সঙ্গে অপুর মারামারির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে উত্তরা পূর্ব থানায় সেই গাড়িচালকের করা মামলায় গ্রেফতার হয় অপু। তার তৈরি করা সেই টিকটক ভিডিওতে দেখা যায় রঙিন চুল ঝাঁকিয়ে অপু বলছে ‘নামটা শুধু মনে রেখো, অপু বাই...।’ এটুকু বলে আরেকটা হাসি দেয়। এভাবেই ছোট্ট ভিডিওর মাধ্যমে তৈরি হয়ে যায় টিকটক আইটেম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, টিকটক নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। টিকটক এ্যাপ বন্ধের কাজটা করবে আইসিটি মন্ত্রণালয়। তবে স্বরাষ্ট্্র মন্ত্রণালয় থেকে তা বন্ধ করতে কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তও হয়নি। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে যাদের চিহ্নিত করা গেছে, তাদের আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে। তবে লাইকি, টিকটক, ইমো, মাইস্পেস, ফেসবুক, ইউটিউব, স্ট্রিমকার, হাইফাইভ, বাদু ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কী ধরনের অপরাধ হচ্ছে, তা নজরদারি করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, লাইকি-টিকটক সুস্থ কোন বিনোদন হতে পারে না। এগুলো বন্ধ করার সময় এসেছে। যারা এগুলো চালাচ্ছে, তাদের আমরা খুঁজে বের করছি। আমরা তদন্তে নেমে এরই মধ্যে আট জনকে গ্রেফতার করেছি। র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের প্রধান খন্দকার আল মঈন বলেছেন, টিকটক-লাইকির নামে যারা অশ্লীল ভিডিও তৈরি করছে, তাদের বিষয়ে তথ্য নেয়ার জন্য দেশের সব ব্যাটালিয়নকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এসবের সঙ্গে জড়িতদের তালিকা করা হচ্ছে। জনগণের প্রতি আহŸান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আপনারা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন। তথ্যদাতাদের নাম-পরিচয় গোপন রাখা হবে বলে ওই কর্মকর্তার দাবি।
×