ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রমেক রক্ষার পদযাত্রায় পুলিশী বাধা, ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম

প্রকাশিত: ২১:৩৪, ১৪ জুন ২০২১

রমেক রক্ষার পদযাত্রায় পুলিশী বাধা, ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর ॥ রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতাল রক্ষার দাবিতে ডাকা গণপদযাত্রায় বাঁধা দিয়েছে পুলিশ। করোনার সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতেই হাসপাতাল অভিমুখে যেতে দেয়া হয়নি বলে পুলিশ দাবি করেছে। পরে পুলিশি বাঁধা মূখে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সংগঠকেরা। এতে হাসপাতালকে সিন্ডিকেট ও দালালমুক্ত করতে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই শিক্ষার্থীর উপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। সোমবার (১৪ জুন) বিকেল সাড়ে চারটায় রংপুর টাউন হল চত্বর থেকে প্রতিবাদী রংপুরবাসীর ব্যানারে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রক্ষার গণপদযাত্রাটি বের করা হয়। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে বাকবিতন্ডা সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশি বাধার মুখে গণপদযাত্রা রমেক হাসপাতাল অভিমুখে যেতে না পেরে জিলা স্কুল মোড় বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল চত্বরে গিয়ে সমাবেশের মধ্য দিয় শেষ করা হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সবরকমের দালাল সিন্ডিকেট নির্মূল করতে হবে। সাধারণ মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে প্রতিনিয়ত হাসপাতালের কর্মী ও দাললদের হাতে জিম্মি হচ্ছেন। এই পরিস্থিতি চলতে দেওয়া হবে না। মায়ের চিকিৎসা নিতে এসে অতিরিক্ত টাকা না দেয়ায় হাসপাতালের কর্মচারীরা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করেছে কিছু সন্ত্রাসী। এরা কারা, হাসপাতালের স্টাফ, দালাল নাকি সন্ত্রাসী? এই ঘটনা নিন্দনীয় ও ন্যাক্কারজনক। হাসপাতাল প্রশাসনের পরোক্ষ মদদে হাসপাতালে দালাল সিন্ডিকেট সক্রিয় বলে বক্তারা অভিযোগ করেন। সমাবেশে বক্তব্য দেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ, একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক, জেলা জাতীয় ছাত্রসমাজের আহবায়ক আরিফুল ইসলাম, রংপুর উন্নয়ন ফোরামের সদস্য সচিব রাকিবুল হাসান রাকিব, বেরোবি শিক্ষার্থী বায়েজিদ, তানভির প্রমুখ। বক্তারা আরো বলেন, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গুরুতর অসুস্থ। এর চিকিৎসা দরকার। বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি হাসপাতাল যেখানে প্রতিটি পদে পদে বাড়তি টাকা গুণতে হয়। লিফ্টে রোগী উঠলে, লাশের ট্রলি ধরলেও স্টাফকে টাকা দিতে হয়। এই হাসপাতাল প্রশাসন চালায় না, চালায় দালালরা। সেবা নিতে আসা রংপুর বিভাগের আট জেলার ২ কোটি মানুষের দুর্ভোগ, কষ্ট, বিড়ম্বনার খবর কেউ রাখে না। পুলিশ, প্রশাসন ও রাজনীতিবিদ চুপ। গুরুতর অসুস্থ এই হাসপাতালের চিকিৎসা জরুরী হয়ে উঠেছে। আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষর্থীদের ওপর মারধরের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও দালালমুক্ত হাসপাতাল গড়তে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে আরো কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারী দেন তারা। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (১১ জুন) সন্ধ্যায় মায়ের চিকিকৎসার জন্য হাসপাতালে এসে কর্মচারী ও দালালদের হাতে মার খেয়ে আহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ ও তার ছোট ভাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাশেদ করিম। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় শুরু হলে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। ওই ঘটনায় মেডিকেল কর্তৃপক্ষ চার সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। শিক্ষার্থী হেনস্তার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে শনিবার রংপুর নগরীতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাড়াও রংপুর জেলা ও মহানগর জাতীয় ছাত্রসমাজ মানববন্ধন সমাবেশ করেছে।
×