ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মাদারীপুরে দৃষ্টিনন্দন মসজিদ দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড়

প্রকাশিত: ২১:১২, ১৪ জুন ২০২১

মাদারীপুরে দৃষ্টিনন্দন মসজিদ দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড়

সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর থেকে ॥ জেলা শিবচরে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন একটি মসজিদ। অসাধারণ নির্মাণ শৈলী, মসজিদের রং, লাইটিং ও এর অবস্থান দূর থেকে কাছে টানে দর্শনার্থীদের। নির্মাণের পর থেকে প্রতিদিন এই মসজিদ দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন দর্শনার্থীরা। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত থেকে অসাধারণ লাইটিংয়ে মসজিদের মহোনীয় সৌন্দর্যে মুগ্ধতার আবেশ নিয়ে বাড়ি ফেরেন তারা। এই মসজিদকে ঘিরে মুগ্ধতার কোনো শেষ নেই দর্শনার্থী ও স্থানীয়দের কাছে। মসজিদটি পুরো জেলা গর্বের একটি ধর্মীয় স্থাপনা স্বপ্নের পদ্মাসেতুর এক্সপ্রেসওয়ের পাঁচ্চর-ভাঙ্গা অংশের দত্তপাড়া ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনে নির্মিত এই মসজিদটি শুধু দর্শনার্থীদেরই নয় এই মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রীদেরও মুগ্ধ করছে। কলেজের নামানুসারে মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজ মসজিদ। দিনের আলোয় এক রকম সৌন্দর্য। সন্ধ্যার ঠিক আগ মুহুর্তে অন্য রকম এবং রাতের অন্ধকার নামলে আরেক রকম সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে এই দৃষ্টি নন্দন মসজিদটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ, মাদারীপুর ১ আসনের সংসদ সদস্য নূর ই আলম চৌধুরী পারিবারিকভাবে নিজস্ব অর্থায়নে মসজিদটি নির্মাণ করেছেন। মসজিদ নির্মাণ করতে প্রায় তিন বছর সময় লেগেছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে এর নির্মাণ কাজ শেষ হলে চলতি বছরের শুরু থেকেই মসজিদটি নামাজের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। মসজিদটির বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে অসাধারণ নির্মাণ শৈলী, গম্বুজের কারুকাজ, ভেতরের ৮ পাখা বিশিষ্ট বৈদ্যুতিক ফ্যান। চীন থেকে আনা ১২ ফুট দৈর্ঘ্যের এই ফ্যানগুলো। যা পুরো মসজিদকে সার্বক্ষণিক শীতল রাখে। রয়েছে তুর্কি থেকে আনা ঝাড়বাতি। মসজিদের মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত ২৫ ফিট উচ্চতা রয়েছে। মসজিদের চারপাশে বড় আকারের একাধিক জানালা থাকায় পর্যাপ্ত বাতাস প্রবেশ করতে পারে। ফলে ভেতরে সারাক্ষন শীতলভাব বজায় থাকে। মসজিদে একজন ইমাম, একজন মুয়াজ্জিন ও ২ জন খাদেম রয়েছেন। ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ কমিটি মসজিদের পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করতে দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ আসেন। এদিকে বিকেল থেকে মসজিদ প্রাঙ্গন দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখর হয়ে ওঠে। মসজিদের সামনে ছবি তুলতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায় তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে বয়স্কদেরও। বাবা-মার হাত ধরে শিশুদেরও দেখা গেছে ছবি তুলতে। নামাজের সময় হলে দর্শনার্থীদের নামাজ আদায় করতেও দেখা গেছে। সন্ধ্যার পর মসজিদের লাইট জ্বালানো হলে অদ্ভুত সৌন্দর্য ফুটে উঠে। সন্ধ্যার পর মসজিদ ও মহাসড়কে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। মূলত বিকেল থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত দর্শনার্থীদের ভীড় বেশি থাকে মসজিদ প্রাঙ্গণে। গোপালগঞ্জ থেকে আসা আব্দুর রহমান নামের এক দর্শনার্থী বলেন, 'ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার সময় হঠাৎ মসজিদটি দেখে চোখ আটকে যায়। বাসে এক মূহুর্তের জন্য দেখেছিলাম। এখন সময় নিয়ে দেখতে এসেছি।' গৌরনদী থেকে আসা আহসান হাবিব বলেন, 'একদিকে দৃষ্টিনন্দন প্রশস্ত মহাসড়ক, ঠিক পাশেই দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। এক অসাধারণ সৌন্দর্য!' দত্তপাড়া টিএন একাডেমীর সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওহাব মিয়া বলেন, 'আমরা চিফ হুইপ মহোদয়ের কাছে একটি মসজিদ চেয়েছিলাম। তিনি এতো চমৎকার করে একটি মসজিদ নির্মাণ করে দেবেন এমনটা ভাবনায় ছিল না। আমরা গর্বিত এবং আনন্দিত এরকম চমৎকার নির্মাণ শৈলীর মসজিদ পেয়ে।' মসজিদ নির্মাণ কাজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা পিটার খান বলেন, 'মসজিদটির অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো চিফ হুইপ মহোদয় নির্মাণ শৈলী থেকে শুরু করে জানালার নেট পর্যন্ত নিজের পছন্দ অনুযায়ী করেছেন। মসজিদটির স্থাপত্য নকশা করেছেন কাজী মোহাম্মদ হানিফ। যিনি বায়তুল মোকাররম মসজিদের এক্সটেনশনের ডিজাইনসহ দেশের অসংখ্য মসজিদের ডিজাইন করেছেন। এক্সপ্রেসওয়ে থেকে মসজিদটি প্রায় সাড়ে ১২ ফুট উচ্চতায় রয়েছে। এতে মহাসড়ক থেকে মসজিদটি দেখতে চমৎকার লাগে।' মসজিদের নির্মান ব্যয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মসজিদ নির্মাণে কি পরিমান অর্থ ব্যয় হয়েছে তা আসলে জানা নেই। তাছাড়া যারা অর্থায়ন করেছেন তারা বিষয়টি প্রকাশযোগ্য মনে করছেন না।' তবে স্থানীয়দের ধারনা দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটি তৈরিতে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত দর্শনার্থীদের পদচারনায় মুখর থাকে মসজিদের চারপাশ। একদিকে এক্সপ্রেসওয়ে, অন্যদিকে তার ঠিক সাথেই অনন্য নির্মাণ শৈলীর মসজিদ নানা শ্রেনি-পেশার মানুষের নজর কেড়েছে। দিন দিন মসজিদটি ঘিরে বাড়ছে দর্শনার্থীদের আসা-যাওয়া।
×