ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তৃণমূলের সৎ প্রার্থী

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ১৫ জুন ২০২১

তৃণমূলের সৎ প্রার্থী

২৮ জুলাই ঢাকা, সিলেট ও কুমিল্লা-তিনটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে রীতিমতো চমক দেখিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থ-বিত্তবৈভব-প্রভাব প্রতিপত্তি নয়, সবিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের সৎ, যোগ্য ও ত্যাগী নেতা মনোনয়নের ওপর। উল্লেখ্য, এই তিনটি আসন নির্বাচন কমিশন কর্র্তৃক শূন্য ঘোষিত হয় স্থানীয়ভাবে নির্বাচিত সংসদ সদস্যের মৃত্যুতে। ঘোষিত হয় উপনির্বাচনের তফসিল। শনিবার গণভবনে তিন আসনে ৯৪ জন মনোনয়ন প্রত্যাশীর আবেদন যাচাই-বাছাই করে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বৈঠকের সভা শেষে ঘোষিত হয় চ‚ড়ান্ত মনোনয়ন। বাঘা বাঘা বিভিন্ন পর্যায়ের বিত্তশালী নেতাদের, যাদের মধ্যে ছিলেন মরহুম সংসদ সদস্যের স্ত্রীরাও, তাদের বাদ দিয়ে তৃণমূলের মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষিত নেতাদের বেছে নিয়ে চ‚ড়ান্ত করা হয় নৌকার প্রার্থী। উল্লেখ্য, এবারে করোনা মহামারীর প্রেক্ষাপটে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সরাসরি সাক্ষাতকার নেয়া হয়নি। পরিবর্তে চ‚ড়ান্ত মনোনয়নে গুরুত্ব পায় প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত, মাঠ পর্যায়ের জরিপ রিপোর্ট, দলের প্রতি আনুগত্য, সর্বোপরি সততা, নীতি-নৈতিকতা ইত্যাদি, যা চমকের অন্যতম কারণ। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দীর্ঘদিন আসীন থাকলে কোন রাজনৈতিক দল ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলোতে জং বা মরিচা পড়া অস্বাভাবিক নয়। বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সরকার একটানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতাসীন হয়েছে। ইত্যবসরে দেশের যে অভাবনীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি ঘটেছে, তা নিয়েও দ্বিমতের অবকাশ নেই। তবে এই ব্যাপক উন্নয়নের অবকাশে দল ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর মধ্যে অনিবার্য কিছু লোভী নেতৃত্বও ঢুকে পড়েছে। যে কারণে ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়ম-অব্যবস্থার অনুপ্রবেশ বিচিত্র কিছু নয়। বিশেষ করে সেই দেশে, যে দেশটির রয়েছে দীর্ঘদিনের সামরিক স্বৈরতন্ত্র কবলিত দুর্বিনীত স্বেচ্ছাচারিতার প্রেক্ষাপট, যেখানে নিয়ত ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়েছে ‘মানি ইজ নো প্রবলেম’ জাতীয় বাক্য। এ প্রসঙ্গে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম জিয়ার ‘আই উইল মেক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট’ স্মর্তব্য বৈকি। অতীতের সেই পঙ্কিল প্রেক্ষাপট থেকে সুস্থ ও স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক ধারার জবাবদিহিমূলক রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন মোটেও সহজ কথা নয়। এই বিষয়টি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বিলক্ষণ জানেন। আর তাই তিনি সময় থাকতেই শুরু করেছেন শুদ্ধি অভিযান, তাও আবার নিজ দল থেকেই। প্রথমে শুরু করেছিলেন ছাত্রলীগ দিয়ে। পরে পর্যায়ক্রমে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা লীগ ইত্যাদি। ক্ষমতাসীন দলের অনেক এমপিও রয়েছেন চলমান শুদ্ধি অভিযানের আওতায় নজরদারির তালিকায়। শূন্য ঘোষিত তিনটি আসনের উপনির্বাচনে দলীয় প্রধান শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত স্বচ্ছ, ত্যাগী ও জবাবদিহিমূলক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চান আন্তরিকভাবে। সেই সঙ্গে এক ঝাঁক তরুণ নেতা-কর্মী, যারা স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগকে ভালবাসে ও বাসবে। এরই অনিবার্য অংশ হিসেবে নিয়ে আসা হয়েছে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব। তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনের গতিশীলতা বৃদ্ধি ও শক্তিশালী করতে প্রয়োজন সৎ, ত্যাগী ও দক্ষ নেতৃত্ব, যার প্রতিফলন ঘটেছে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে।
×