ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টার মামলা পরীমনির

প্রকাশিত: ১৩:১৮, ১৪ জুন ২০২১

ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টার মামলা পরীমনির

অনলাইন ডেস্ক ॥ ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলার করেছেন ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী পরীমণি। আজ সোমবার (১৪ জুন) সাভার থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। এতে নাসির উদ্দিন ও তার বন্ধু অমির নাম উল্লেখ করে আরও ৪ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এর আগে সকালে রূপনগর থানার মাধ্যমে লিখিত অভিযোগ করেন পরীমণি। সাভার থানার পরিদর্শক কাজী মাইনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পরীমণি নিজে বাদী হয়ে মোট ৬ জনের নামে এ মামলা করেছেন (মামলা নম্বর ৩৮)। জানা যায়, ৯ জুন (বুধবারে) রাতে ঢাকা বোট ক্লাবে পরীমণিকে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টা করা হয়। রবিবার (১৩ জুন) রাতে প্রথমে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরেন এই অভিনেত্রী। পরে তার নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সামনে এ ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বুধবার রাতে উত্তরার বোট ক্লাবে ঘটনাটি ঘটে। নাসির উদ্দিন নামে একজন তাকে নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে এ ঘটনা ঘটাতে চেয়েছিলেন।’ পরীমণি বলেন, এমন ঘটনায় সাধারণ মেয়েরা প্রথমে কোথায় যায়? থানায় যায়। আমিও থানায় গিয়েছি। আমি বারবার বলেছি, ঘটনাটা যদি নিজের সঙ্গে না ঘটে তাহলে কেউ বুঝবে না। ওইদিন পর্যন্ত কি তবে অপেক্ষা করবেন? কী ঘটেছিল সেটা জানতে চাই, আপনি নির্ভয়ে বলুন— উপস্থিত সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে পরীমণি বলেন, ‘আমার মুখটা সাদা কাপড়ে ঢাকা পড়লেই কেবল বুঝতেন। আমি চার দিন ধরে কারও সাপোর্ট পাইনি। আপনারা সত্যিটা খোঁজেন।’ পরীমণি আরও বলেন, ‘সাধারণ কোনো মেয়ের হলে সে খবর হয়তো আপনাদের কাছে পৌঁছায় না। সাংবাদিকদের কাছে খবর পৌঁছানো হয় না। আমার মতো যখন কোনো মেয়েকে ভয় দেখানো হয় তখন সাধারণ মেয়ের খবর তো পাবেন না!’ তিনি বলেন, বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে তার এক বন্ধু (অমি) বাসায় আসেন। বাসা থেকে তাকে উত্তরার বোট ক্লাবে (ঢাকা বোট ক্লাব) নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন জিমি (ব্যক্তিগত রূপসজ্জাশিল্পী)। বোট ক্লাবে যাওয়ার পর সেখানে সাত/আটজনের একটা গ্রুপ ছিল। তাদের মুরব্বি ছিলেন নাসির উদ্দিন (নাসির ইউ মাহমুদ)। তিনি বোর্ড ক্লাবের চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দেন। ‘নাসির উদ্দিনসহ (নাসির ইউ মাহমুদ, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী) উপস্থিত সাত/আটজন আমাকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করতে থাকে। আমাকে আটকে ফেলে। জোর করে নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করার চেষ্টা করে। জিমিকে মারধর করা হয়। অশ্লীল নানা কথাবার্তা বলা হয়। মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়।’ নাসির উদ্দিন (নাসির ইউ মাহমুদ) তার সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ করেন পরীমণি। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী পরীমনি তাকে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনেছেন। এখন নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন বলে জানান তিনি। উল্লেখ্য, রবিবার (১৩ জুন) সন্ধ্যায় পরীমনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে প্রথম এই অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি খোলা চিঠি লেখেন। এরপর সাংবাদিকরা যোগাযোগ করলে তিনি তৎক্ষণাৎ তার নিজ বাসায় একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সংবাদ সম্মেলনে পরীমনি বলেন, ‘গত চারদিন ধরে একজন সাধারণ মেয়ে হিসেবে আমি দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। কিন্তু কারো হেল্প পাইনি। সবাইকে বলেছি, আমি সুইসাইড করার মতো মেয়ে না। যদি আমি মরে যাই, মনে করবেন আমাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আর আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ আপনারা আমাকে হত্যার বিচার করবেন। ’ এর আগে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আলোচিত এই অভিনেত্রী জানান, নাসির ইউ. মাহমুদ নামে একজন তাকে নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে এ ঘটনা ঘটাতে চেষ্টা করেছিলেন। পরীমনি বলেন, ‘আমার কস্টিউম ডিজাইন করেন জিমি, আমাদের কাজের বাইরেও পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। তার মাধ্যমে অমির সঙ্গে আমার পরিচয়। উনি বাসায় আসেন চারদিন আগে (ঘটনাটির দিন রাতে)। এর আগে সিনেমার ব্যাপারে মিটিংয়ের জন্য ডেট চাচ্ছিল কিন্তু আমি সময় দিতে পারছিলাম না। আমার নানু কয়েকদিন আগে অসুস্থ ছিলেন সেটা আপনারা জানেন। ’ তিনি আরও বলেন, ‘গত বুধবার রাত ১২টায় আমাকে বিরুলিয়ায় নাছির ইউ. মাহমুদের কাছে নিয়ে যায় অমি। সেসময় নাছির ইউ. মাহমুদ নিজেকে ঢাকা বোট ক্লাবের সভাপতি হিসেবে পরিচয় দেন। সেখানে নাছির ইউ. মাহমুদ আমাকে মদ খেতে অফার করে। আমি রাজি না হলে আমাকে জোর করে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করে। একপর্যায়ে আমাকে চড় থাপ্পড় মারে। তারপর আমাকে নির্যাতন ও হত্যা চেষ্টা করেন। অমিও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। ’ এরপর সাংবাদিকদের সামনে নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন বলে জানান পরীমনি। একইসঙ্গে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। নিজের সঙ্গে ঘটা এমন অপ্রীতিকর ঘটনা কোনোভাবেই মানতে পারছেন না পরীমনি। তাই এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন তিনি।
×