ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রেমিটেন্সের ৬৩ শতাংশই আসে পাঁচ দেশ থেকে

প্রকাশিত: ২৩:২১, ১৪ জুন ২০২১

রেমিটেন্সের ৬৩ শতাংশই আসে পাঁচ দেশ থেকে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনা মহামারীর মধ্যেও রেমিটেন্স পাঠানো অব্যাহত রেখেছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) দেশে ২ হাজার ২৮৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছে। এর আগে কোনো অর্থবছরে এত পরিমাণ রেমিটেন্স আসেনি দেশে। এর মধ্যে সিংহভাগ রেমিটেন্স এসেছে পাঁচটি দেশ থেকে। গত ১১ মাসে মোট আহরিত রেমিটেন্সের প্রায় ৬৩ শতাংশই পাঠিয়েছেন ওই পাঁচ দেশের প্রবাসীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেশভিত্তিক রেমিটেন্স সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রথম ১১ মাসে বৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্স এসেছে ২ হাজার ২৮৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ১ লাখ ৯৪ হাজার ১১৪ কোটি টাকা)। এর মধ্যে প্রবাসী আয় পাঠানোর শীর্ষে থাকা ১০ দেশ থেকে এসেছে ২ হাজার ১৯ কোটি ৮ লাখ ডলার, যা মোট রেমিটেন্সের ৮৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। প্রবাসী আয় পাঠানোর শীর্ষ ১০টি দেশ হলো : সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, ওমান, কাতার, ইতালি ও সিঙ্গাপুর। এর মধ্যে শীর্ষ ৫ দেশ (সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাজ্য) থেকে রেমিটেন্স এসেছে ১ হাজার ৪৪৭ কোটি ৫৮ লাখ ডলার বা ৬৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ। শুধু মধ্যপ্রাচ্যের ৫ দেশ (সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান ও কাতার) থেকে এসেছে ১ হাজার ১৯৮ কোটি বা প্রায় ৫২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। বিশ্বের ১৬৮ দেশে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ বাংলাদেশী বসবাস করেন। বাংলাদেশের প্রবাসীদের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব। বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ২২ লাখের মতো বাংলাদেশী অভিবাসী সৌদি আরবে কর্মরত আছেন। তথ্য বলছে, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে সৌদি আরব থেকে। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে দেশটি থেকে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ৫২৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার, যা মোট আহরিত রেমিটেন্সের ২৩ শতাংশ। অর্থবছরের ১০ মাসে রেমিটেন্স আহরণের দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি থেকে রেমিটেন্স এসেছে ৩১৬ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। তৃতীয় স্থানে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। দেশটি থেকে রেমিটেন্স এসেছে ২২৬ কোটি ডলার। চতুর্থ স্থানে থাকা মালয়েশিয়া থেকে রেমিটেন্স এসেছে ১৯০ কোটি ডলার, ৫ম দেশ যুক্তরাজ্য থেকে রেমিটেন্স এসেছে ১৮৭ কোটি ৯৮ লাখ ডলার। এছাড়া কুয়েত থেকে ১৭৩ কোটি ২২ লাখ ডলার, ওমান থেকে ১৪১ কোটি ৭১ লাখ ডলার, কাতার থেকে ১৩০ কোটি ডলার, ইতালি থেকে ৭৩ কোটি ৪১ লাখ ডলার এবং সিঙ্গাপুর থেকে রেমিটেন্স এসেছে ৫৮ কোটি ১৩ লাখ ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে রেমিটেন্স এসেছিল ১ হাজার ৬৩৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। সেই হিসেবে চলতি অর্থবছরে ১১ মাসে রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এদিকে রেমিটেন্সের প্রবাহ চাঙ্গা থাকায় ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। সর্বশেষ ২ জুন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৪৫.০৮ বিলিয়ন বা চার হাজার ৫০৮ কোটি ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। অর্থবছর হিসাবে যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স আহরণ। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিটেন্স আহরণের রেকর্ড হয়। ওই সময় ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিটেন্স আসে দেশে। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে আরও ২ টাকা যোগ করে মোট ১০২ টাকা পাচ্ছেন সুবিধাভোগী। এছাড়া ঈদ ও উৎসবে বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সরকারের প্রণোদনার সঙ্গে বাড়তি এক শতাংশ দেয়ার অফার দিচ্ছে। এতে বৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠাতে উৎসাহী হচ্ছেন প্রবাসীরা।
×