ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভূমধ্যসাগর পাড়ির সময় ১৬৪ বাংলাদেশী উদ্ধার

প্রকাশিত: ২২:১৮, ১৪ জুন ২০২১

ভূমধ্যসাগর পাড়ির সময় ১৬৪ বাংলাদেশী উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়া সব সময়ই ঝুঁকিপূর্ণ। এটা জেনেও বার বার বাংলাদেশীরা এই সাগর পাড়ি দিয়ে জীবন বিসর্জন দিচ্ছে। মূলত ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাবার জন্যই তারা এতবড় ঝুঁকি নিচ্ছে। সর্বশেষ গত শনিবারও ইউরোপ যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার সময় ১৬৪ বাংলাদেশীসহ অন্তত ৪৩৯ অভিবাসন প্রত্যাশীকে উদ্ধারের পর আটক করেছে লিবিয়া। উত্তর আফ্রিকার এই দেশটির উপকূলরক্ষী বাহিনী ভূমধ্যসাগর থেকে অভিবাসন প্রত্যাশীদের উদ্ধারের পর আটক করে। গত শনিবার দুুপুরে লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ মিশন ১৬৪ বাংলাদেশীকে ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার এবং আটকের তথ্য নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়া একই দিন মেসিডোনিয়ার কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়ে ৮২ বাংলাদেশীকে আটক করেছে দেশটির পুলিশ। তারাও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবেশের জন্য অবৈধভাবে যাচ্ছিল। জানা গেছে- ভূমধ্যসাগরে বেশ কজন বাংলাদেশী নৌকায় ভাসছে এমন সংবাদ প্রথমেই পাঠানো হয় লিবিয়ায়। এর পরই অভিযান চালানো হয়। বৃহস্পতিবার ভূমধ্যসাগরে বেশ কয়েকটি নৌকায় ভাসতে থাকা অভিবাসন প্রত্যাশীদের উদ্ধার করে লিবিয়ার উপকূলরক্ষী বাহিনীর দু’টি জাহাজ। উদ্ধারকৃত অভিবাসন প্রত্যাশীর সবাই আফ্রিকা এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশের নাগরিক বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। লিবিয়ার নৌবাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, উদ্ধারের পর অভিবাসন প্রত্যাশীদের ত্রিপোলিতে নৌবাহিনীর একটি ঘাঁটিতে নেয়া হয়। পরে দেশটির অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধ কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে ত্রিপোলির একটি আশ্রয় কেন্দ্রে তাদের রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স গাজী মোঃ আসাদুজ্জামান কবির বলেছেন- তারা এই ঘটনার ব্যাপারে অবগত আছেন। চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত লিবিয়ার উপকূলরক্ষী বাহিনী ইউরোপ পাড়ি দেয়ার চেষ্টাকারী অন্তত ৯ হাজার ২১৬ অভিবাসন প্রত্যাশীকে ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার করে। যদিও গত বছরের একই সময়ে ভূমধ্যসাগর থেকে অভিবাসন প্রত্যাশীদের উদ্ধারের এই সংখ্যা ছিল ৭ হাজারের কিছু বেশি। লিবিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খালেদ তিজানি মাজেন ইউরোপীয় কমিশনার ফর হোম এ্যাফেয়ার্স ইলভা জোহানসনের সঙ্গে এক বৈঠকে এ তথ্য জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত অপর এক বৈঠকে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেসকে মাজেন বলেছেন, বর্তমানে লিবিয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নথিবিহীন প্রায় ৭ লাখ অভিবাসন প্রত্যাশী অবস্থান করছেন। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের প্রায় ১১ হাজার অভিবাসন প্রত্যাশী সাগরপথে অবৈধভাবে লিবিয়ায় পৌঁছেছেন। এছাড়া জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে ৭০০ জনের বেশি অভিবাসন প্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে। গত বছর ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে মৃত্যুর এই সংখ্যা ছিল এক হাজার ৪০০। গত ১৮ মে ভূমধ্যসাগরে ডুবতে থাকা একটি নৌকা থেকে ৬৮ বাংলাদেশীকে উদ্ধার করে তিউনিশিয়ার নৌবাহিনী। লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার চেষ্টার সময় সাগরে ডুবে যায় নৌকাটি। মেসিডোনিয়ায় আটক ২০ বাংলাদেশী ॥ এদিকে ইউরোপের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বলকান রাষ্ট্র নর্থ মেসিডোনিয়ায় পৃথক অভিযান চালিয়ে ভ্যান ও ট্রাক থেকে অন্তত ৮২ অভিবাসন প্রত্যাশীকে আটক করা হয়েছে। দেশটির কর্মকর্তারা বলেছেন, শুক্র এবং শনিবার অভিযান চালিয়ে এই অভিবাসন প্রত্যাশীদের আটক করা হয়- যাদের মধ্যে অন্তত ২০ বাংলাদেশী রয়েছেন। পুলিশের স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, নর্থ মেসিডোনিয়া এবং ্েস্লাভেনিয়ার সীমান্ত কর্মকর্তাদের একটি যৌথ দল গ্রিস সীমান্তের কাছের উত্তর-দক্ষিণ মহাসড়কে একটি ট্রাকে লুকিয়ে থাকা ৬২ জনকে আটক করেছে। এই অভিবাসন প্রত্যাশীদের ৪৬ পাকিস্তানের, ১৩ ইরিত্রিয়ার এবং তিনজন মালির। এছাড়া সার্বিয়ার ৩৩ এবং ৩৭ বছর বয়সী দুই নাগরিককেও আটক করেছেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ বিষয়ে শনিবার নর্থ মেসিডোনিয়ার পুলিশের এক ঘোষণায় বলা হয়- কর্মকর্তারা নিয়মিত যানবাহন তল্লাশির সময় সার্বিয়া সীমান্তের কাছের মহাসড়কে একটি ভ্যান থেকে ২০ বাংলাদেশীকে আটক করেছেন। ওই ভ্যানের ৪৪ বছর বয়সী মেসিডোনিয়ার চালককেও আটক করা হয়েছে। আটকদের মধ্যে ৯ শিশু রয়েছে। বাবা-মা অথবা অন্য কোন অভিভাবকের সঙ্গে ভ্রমণ করেছেন কি-না সে বিষয়ে জানতে শিশুদের সঙ্গে একজন সমাজকর্মী কথা বলেছেন। পুলিশ বলছে, আটক সব অভিবাসন প্রত্যাশীকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত শহর গেভজেলিজার আশ্রয় শিবিরে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে তাদের গ্রিসে পাঠানো হবে। গ্রিস থেকেই তারা নর্থ মেসিডোনিয়ায় প্রবেশ করেছে বলে ধারণা করছে দেশটির পুলিশ। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে সীমান্ত বন্ধ এবং মানুষের চলাচলে বিধিনিষেধ থাকলেও বলকান অঞ্চলের দেশগুলোতে মানব পাচারকারীরা সক্রিয় রয়েছেন। গ্রিস হয়ে নর্থ মেসিডোনিয়াকে ব্যবহার করে ইউরোপের বিভিন্ন উন্নত দেশে প্রায়ই পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করেন অভিবাসন প্রত্যাশীরা। গত ৮ বছরে লাখ লাখ মানুষ এই দেশটির সীমান্ত পেরিয়ে ইউরোপে ঢুকে পড়েছে।
×