ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুক্তিযোদ্ধার পাশাপাশি রাজাকারের তালিকা প্রকাশের সুপারিশ

প্রকাশিত: ২২:০৮, ১৪ জুন ২০২১

মুক্তিযোদ্ধার পাশাপাশি রাজাকারের তালিকা প্রকাশের সুপারিশ

সংসদ রিপোর্টার ॥ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা সংগ্রহ এবং চিহ্নিত রাজাকারের পরবর্তী প্রজন্মকে সরকারী চাকরি প্রদানের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুসরণের সুপারিশ করা হয়েছে। কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণ তালিকা সম্পন্ন করার পাশাপাশি রাজাকারদের তালিকা প্রকাশেরও সুপারিশ করেছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জিয়া শিশুপার্কের স্থানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের সুপারিশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। রবিবার জাতীয় সংসদ ভবনে কমিটির সভাপতি শাজাহান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। বৈঠকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ‘গার্ড অব অনার’ প্রদানের ক্ষেত্রে দিনেরবেলায় আয়োজন করা এবং মহিলা ইউএনও’র বিকল্প ব্যক্তি নির্ধারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে। সভায় কিছু জায়গায় বিভিন্ন দিবসে স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন সম্পর্কিত ঘটনার সমাধানের লক্ষ্যে সমস্যার বিবরণী তুলে ধরে একটি সারসংক্ষেপ ক্যাবিনেটে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী, কোন বীর মুক্তিযোদ্ধা মারা যাওয়ার পর তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানায় সংশ্লিষ্ট জেলা/উপজেলা প্রশাসন। ডিসি বা ইউএনও সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে থাকেন। কফিনে সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী কর্মকর্তা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। অনেক স্থানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে নারী কর্মকর্তারা রয়েছেন, আর সেখানেই আপত্তি তুলেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা ওঠার পর সরকারের কাছে সুপারিশ রাখা হয়েছে গার্ড অব অনার দেয়ার ক্ষেত্রে নারী ইউএনওদের বিকল্প খুঁজতে। জানা গেছে, বৈঠকে এ বিষয়ে একটি বিকল্প প্রস্তাব রাখা হয়। সেখানে মহিলার বিকল্প একজন পুরুষকে দিয়ে গার্ড অব অনার দেয়ার বিষয়টি এসেছে। কমিটি মন্ত্রণালয়কে এটা পরীক্ষা করে দেখতে বলেছে। বৈঠক সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জিয়া শিশুপার্কের স্থানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। সার্কিট হাউজের সামনের যে জায়গাটিতে পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল, স্মৃতি রক্ষার্থে সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের সুপারিশ করা হয়। কমিটি বলেছে, সেখানে যে কক্ষটিতে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে, সেটা সংরক্ষিত থাকবে। কিন্তু শিশু পার্কের স্থলে স্মৃতিস্তম্ভ হবে। সভায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনাসমূহ অবহিত করা হয়। এছাড়া মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গৃহীত কর্মসূচী ও পরিকল্পনা এবং মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চট্টগ্রামে অবস্থিত ‘টাওয়ার ’৭১’ ও ‘জয়বাংলা’ বাণিজ্যিক ভবনের কাজের সর্বশেষ অগ্রগতি বিষয়ে আলোচনা করা হয়। সভায় যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধোদের পুনর্বাসন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গঠিত ‘মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ফান্ড’ এর তহবিল গঠনে কোন্ কোন্ উৎসগুলোকে প্রতিষ্ঠার সময়ে নির্ধারণ করা হয়েছিল মন্ত্রণালয়কে তার বিবরণী আগামী বৈঠকে বিস্তারিতভাবে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়। সভায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্ধারিত হাসপাতালের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করানো হলে চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করাসহ ওষুধ খরচ বাবদ নির্ধারিত ৫০ হাজার টাকা থেকে উন্নীত করে ৭৫ হাজার টাকায় নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়। এছাড়া বিশেষায়িত সরকারী হাসপাতালগুলোতে শতভাগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিনামূল্যেকরণ বিষয়ক সংশোধিত নীতিমালাটি আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়। সভায় মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে অনুষ্ঠান নির্ধারণের লক্ষ্যে সভাপতিকে আহবায়ক করে মোট ৬ সদস্যের একটি সংসদীয় সাবকমিটি গঠন করা হয়। শাজাহান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, রাজি উদ্দিন আহমেদ, মুক্তিযুদ্ধকালীন সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম (বীরউত্তম), কাজী ফিরোজ রশীদ, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল এবং মোছলেম উদ্দিন আহমদ সভায় অংশগ্রহণ করেন। সভায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভিন্ন সংস্থার প্রধানগণসহ মন্ত্রণালয় এবং সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
×