ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম ব্যবসায় ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতির শঙ্কা

প্রকাশিত: ১৬:১৯, ১৩ জুন ২০২১

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম ব্যবসায় ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতির শঙ্কা

সংবাদদাতা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রধান অর্থকরি ফল আম। আমকে ঘিরেই আবর্তিত হয় এ জেলার অর্থনীতির চাকা। এ বছর রেকর্ড ছাড়িয়েছে আমের উৎপাদন। এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার আমের উৎপাদন হয়েছে। এছাড়াও আম মৌসুমে হোটেল, রেস্টুরেন্ট, সুতলি, পেপার, ঝুড়ি মিলিয়ে আরও শতকোটি টাকা লেনদেন হয়। তবে বৈশ্বিক মহামারি করোনার থাবায় এবার তছনছ চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম-বাণিজ্য। লকডাউন আর বিধিনিষেধের কারণে আম অর্থনীতিতে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। করোনা মহামারির কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ব্যবসায়ীদের ৫০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হবে বলে জানিয়েছেন আম ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ম্যাংগো প্রডিওসর মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সুমিষ্ট আমের খ্যাতি দেশজুড়েই। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রভাবে আম-বাণিজ্য ধ্বংসের মুখে পড়েছে। করোনায় আমের দরপতনে হতাশ আমচাষিরা। আমের পর্যাপ্ত ক্রেতা না থাকায় গাছেই পাকছে আম। প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ এসব পাকা আম ঝরে পড়ছে। আমচাষিদের অভিযোগ, করোনার কারণে বাইরের ক্রেতার অভাবে আমের বাজার ও বিপণন নিয়ন্ত্রণ করছেন স্থানীয় আড়তদার ও ফড়িয়ারা। এতে করে অনেক কৃষক আমের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে আমচাষিদের চোখেমুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট। আমচাষিরা বলছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় আমের ভরা মৌসুমে ১৪ দিনের লকডাউন শেষে এখনও বিধিনিষেধ চলমান। ফলে বাইরের ক্রেতারা হাটে আসতে পারেননি। এ সুযোগে স্থানীয় আড়তদাররা আম বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। যারা অন্যান্য বছর বাইরের ব্যবসায়ীদের কমিশনে আম কিনে দিতেন, তারাই এখন চাষিদের কাছে কম দামে আম কিনে বেশি দামে বাইরের ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করছেন। বাইরের ক্রেতা না আসায় অনেক আমচাষি স্থানীয় আড়তদারের কাছে আম বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তথ্য মতে, গত বছরের চেয়ে প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে আম। গত বছর খিরসাপাত বাজারে বিক্রি হয়েছে ২৫০০ থেকে ২৭০০ টাকা মণ দরে। এ বছর বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ১৭০০ টাকায়। গত বছর ল্যাংড়া আম বিক্রি হয়েছিল ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা এবার বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা মণ। ক্রেতা না থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে ৫৫ কেজিতে মণ হিসেবেও আম বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন চালু হওয়ায় অনেকেই অনলাইনে অর্ডার করে কুরিয়ার অথবা ট্রেনযোগে আম সংগ্রহ করছেন। এতে চাষিরা ন্যায্য দাম না পেলেও গ্রাহকদের বেশি দামেই আম কিনতে হচ্ছে। করোনার কারণে বাজারে দেখেশুনে আম কেনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ক্রেতারা। এতে অনলাইন আম ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা লাভবান হলেও লোকসান গুণছেন চাষিরা। এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আমচাষী বাদশা বলেন, করোনার কারণে ক্রেতা আসছে না। ফলে আমের দাম গত বছরের তুলনায় অনেক কম। খরার কারণে এ বছর আমের উৎপাদন খরচও বেশি হয়ে হয়েছে। প্রতিবছর আমরা বাগান থেকে আম বিক্রি করে দিই। কিন্তু এ বছর ক্রেতাদের দেখা মিলছে না। ফলে স্থানীয় আড়তদাররা এক রকম বাধ্য করে কম দামে আম কিনছেন। আমরাও বাধ্য হয়ে আড়তে বিক্রি করছি। রেকর্ড পরিমাণ আম উৎপাদনের বছরেও প্রত্যাশার অর্ধেক দাম পাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, এখন বিপুল পরিমাণ আম গাছেই ঝুলছে। আম নিয়ে কি হবে ভেবে পাচ্ছি না। মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে আম নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছি। ম্যাংগো ফাউন্ডেশনের সদস্যসচিব আহসান হাবিব জানান, এ বছর আমের ফলন ভালো হওয়ায় দাম কিছুটা কম। করোনা ভাইরাসের কারণে বাজারে ক্রেতা কম হলেও বেচাকেনা হচ্ছে। অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে অন্য জেলার ব্যবসায়ীরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আম সংগ্রহ করছেন। তিনি আরও বলেন, চাষিদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের জন্য বৈদেশিক বাজার সৃষ্টির বিকল্প নেই। এ জন্য আম রফতানি ব্যয় ও প্রক্রিয়া সহজ করতে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। এখন যে আম রফতানি হচ্ছে তা খুবই সামান্য। আম রফতানি বৃদ্ধি করা গেলে একদিকে যেমন চাষিদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা সম্ভব অন্যদিকে সমৃদ্ধ হবে দেশের অর্থনীতিও। বাংলাদেশ ম্যাংগো প্রডিউসার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, আমের দাম কম হওয়ায় এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের ব্যবসায়ীদের ৫০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে দেড় হাজার কোটি টাকার আম উৎপাদন হলেও ৯০০ থেকে ১০০০ কেটি টাকা আসতে পারে। করোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউন ও চলমান বিধিনিষেধের কারণে অনেক ক্রেতা এবার চাঁপাইনবাবগেঞ্জ আসতে পারেননি। চাঁপাইনবাবগঞ্জে উৎপাদিত আম বাজারজাতের জন্য একটি স্থায়ী সমাধান দরকার। উৎপাদিত আমের ন্যায্যমূল্য না পেলে চাষিরা আম চাষে নিরুৎসাহিত হবেন বলেও মনে করেন তিনি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, এ বছর রেকর্ড পরিমাণ আমের উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছর আমের উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৮ হাজার মেট্রিক টন। এ বছর ৩৪ হাজার ৭৩৮ হেক্টর জমিতে আম উৎপাদন আড়াই লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে। বাজারমূল্য অনুযায়ী এবার চাঁকপাইনবাবগঞ্জে আমের উৎপাদন হবে দেড় হাজার কোটি টাকা।
×