ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কোম্পানীগঞ্জে সড়ক অবরোধ ॥ পুলিশের ওপর হামলা

প্রকাশিত: ২৩:১০, ১৩ জুন ২০২১

কোম্পানীগঞ্জে সড়ক অবরোধ ॥ পুলিশের ওপর হামলা

নিজস্ব সংবাদদাতা, নোয়াখালী, ১২ জুন ॥ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের ওপর হামলার প্রতিবাদে এবং আবদুল কাদের মির্জা ও তাঁর অনুসারীদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আতঙ্কে দিনভর বসুরহাটের অনেক দোকানপাট বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের মুখপাত্র ও কাদের মির্জার ভাগ্নে মাহবুবুর রশিদ মঞ্জু দুপুর ১২টার দিকে নিজের ফেসবুক লাইভে এসে কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচী পালনের ডাক দেন। হামলায় আহত আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান বাদল কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। আর আবদুল কাদের মির্জা বসুরহাট পৌরসভার মেয়র। এদিকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে টেকেরবাজারে বসুরহাট-চাপরাশিরহাট সড়ক থেকে মিজানুরের অনুসারীদের অবরোধ সরাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কমপক্ষে ৩০টি গুলি ছুড়ে। এ সময় ইটের আঘাতে পুলিশের চারজন এবং শটগানের গুলিতে চারজন অনুসারী বিদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বসুরহাটের ইসলামী ব্যাংকের সামনে মিজানুরের ওপর দুর্বৃত্তদের হামলা ও গাড়ি ভাংচুরের প্রতিবাদে সকাল ১০টা থেকে তাঁর অনুসারীরা উপজেলা সদরে প্রবেশের বসুরহাট-দাগনভ‚ঞা, বসুরহাট-চাপরাশিরহাট ও বসুরহাট-কবিরহাটসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো অবরোধ করেন। সকাল থেকে কোম্পানিগঞ্জ থানার পুলিশ দফায় দফায় অবরোধ সরিয়ে দেয়। এরপর আবার মিজানুরের অনুসারীরা সড়কের ওপর গাছের গুঁড়িসহ বিভিন্ন ভারি বস্তু ফেলে এবং টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপক জ্যোতি খীসার নেতৃত্বে একদল পুলিশ চাপরাশিরহাট-বসুরহাট সড়কের টেকেরবাজারে অবরোধ সরাতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন মিজানুরের অনুসারীরা। এ সময় পুলিশ তাঁদের ধাওয়া দিলে দুপক্ষে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ শটগান থেকে কমপক্ষে ৩০টি গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মিজানুর রহমান বাদলের আহত চার অনুসারী হলেন ফখরুল ইসলাম ওরফে সবুজ (৫৫), তাঁর ছেলে মোঃ চয়ন (২০), ভাগ্নে মোঃ আরিয়ান হোসেন (২৩) ও মোঃ হৃদয় হোসেন (২৮)। ইটের আঘাতে পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ ও তিন পুলিশ কনস্টেবল আহত হয়েছেন। তাঁদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। কোম্পানিগঞ্জে অবস্থানকারী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপক জ্যোতি খীসা বিকেলে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, এখনও বিভিন্ন সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে। পুলিশ ব্যারিকেড সরিয়ে নিয়ে স্থান ত্যাগ করলে আবার ব্যারিকেড দেয়া হচ্ছে। সকাল ৯টার দিকে বসুরহাট বাজারে মিজানুর রহমান বাদলের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলা থেকে রেহাই পাননি মিজানুর রহমান বাদলের সঙ্গে থাকা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হাসিবুল হোসেনও। মির্জা কাদেরের ভাগ্নে ও উপজেলা আওয়ামী লীগের মুখপাত্র মাহবুবুর রশিদ মঞ্জু অভিযোগ করেছেন, কাদের মির্জার উপস্থিতিতে তাঁর অনুসারীরা মিজানুর রহমানের ওপর হামলা চালিয়েছেন। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বাদলের ওপর হামলা \ কোম্পানিগঞ্জে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের (৫২) ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার সকালে বসুরহাটের ইসলামী ব্যাংকের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় মিজানুরের ব্যক্তিগত গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে এবং তাঁর সঙ্গে থাকা উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা হাসিবুল হোসেন ওরফে আলালকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সাজেদা আক্তার জানান, মিজানুর রহমান বাদল মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। তাঁর বাঁ কানের একটি অংশ কেটে গেছে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাটা চিহ্ন আছে। অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাঁকে নোয়াখালীর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকাল নয়টার দিকে মিজানুর রহমান তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বসুরহাট বাজার হয়ে ফেনীর দাগনভ‚ঞার দিকে যাচ্ছিলেন। ইসলামী ব্যাংকের সামনে পৌঁছামাত্র একদল সন্ত্রাসী তাঁর গাড়ির গতি রোধ করে। এ সময় মিজানুর রহমান পাশের একটি দোকানে ঢুকে যান। সেখানে গিয়ে তাঁর ওপর হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। হামলাকারীরা এ সময় মিজানুরের ব্যবহৃত গাড়ি এবং তাঁর সঙ্গে থাকা উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা হাসিবুল হোসেনকেও কুপিয়ে আহত করেছে। শনিবার সকাল সোয়া ৯টায় কোম্পানিগঞ্জ থানার সামনে মির্জা কাদেরের ভাগ্নে মাহবুবুর রশিদ মঞ্জু গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে অভিযোগ করেন, বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার নেতৃত্বে রাসেল, মাসুদসহ ৪০ থেকে ৫০ সশস্ত্র সন্ত্রাসী গাড়িতে হামলা ও ভাংচুর চালিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান এবং তাঁর সঙ্গে থাকা ছাত্রলীগ নেতা হাসিবুল হোসেনকে কুপিয়ে আহত করেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য মিজানুর রহমানকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আর হাসিবুলকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। হামলার বিষয়ে জানার জন্য আবদুল কাদের মির্জার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করে তা ব্যস্ত পাওয়া যায়। পরে তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুসারী স্বপন মাহমুদ বলেন, দুদিন আগে বসুরহাটে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে কাদের মির্জার অনুসারী পৌর যুবলীগের দুই নেতা মিজানুর রহমানের অনুসারীদের হামলায় আহত হন। ওই ঘটনার জের ধরে তাঁদের পরিবারের লোকজন সকালে মিজানুর রহমানের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে তাঁরা শুনেছেন। ঘটনার সময় মেয়র আবদুল কাদের মির্জা পৌরসভা ভবনে ছিলেন। কোম্পানিগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রতিপক্ষের হামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা মিজানুর রহমান আহত হয়েছেন এবং তাঁর গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে বলে মিজানুর রহমান বাদল জানিয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে কাউকে পায়নি। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশ কাজ শুরু করেছে। একটা হামলার বিচার না হলে পাল্টা হামলা অস্বাভাবিক নয়- কাদের মির্জা \ কোম্পানিগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান বাদলের ওপর কে বা কারা হামলা চালিয়েছে তা জানেন না বলে দাবি করেছেন বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। তিনি বলেন, একটা হামলার বিচার না হলে পাল্টা হামলা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আমি বাজার ঘুরে পৌরসভায় আসার পর শুনলাম কে বা কারা বাদলের ওপর হামলা চালিয়েছে। শনিবার বেলা ১টায় ফেসবুক লাইভে এসে কাদের মির্জা এসব কথা বলেন। তিনি দাবি করেন, এমপি একরামের নেতৃত্বে কবিরহাটে বৈঠক করে শনিবার অথবা রবিবার আমার বাড়িতে হামলার পরিকল্পনা ছিল। শনিবার তারা মিটিং শেষে একরাম ভ‚ঞারহাট দিয়ে ফেনীর নিজাম হাজারীর কাছে অথবা চট্টগ্রাম এবং বাদল ও আলাল বসুরহাট আসে। পরে আলমগীর, জিসানসহ আগের আহত ১১ জনের আত্মীয়-স্বজনরা খবর পেয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। কাদের মির্জা আবারও কোম্পানিগঞ্জে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি জানান। এছাড়া অস্থিতিশীল কোম্পানিগঞ্জে শান্তি ফিরবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
×