ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশ এখনও কোন রহস্য ভেদ করতে পারেনি

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ১৩ জুন ২০২১

পুলিশ এখনও কোন রহস্য ভেদ করতে পারেনি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর কলাবাগানে গ্রীন লাইফ হাসপাতালের চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমান লিপি (৪৭) হত্যাকাণ্ডের কোন ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, তদন্ত করতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি এখনও পুরো রহস্যঘেরা। হত্যাকাণ্ডের ১২ দিন পর হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে ঘটনার পর থেকে সন্দেহভাজন, প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের স্বজনদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারা কেউ হত্যার কারণ জানাতে পারেনি। তবে বাড়ির দারোয়ান পুলিশকে জানিয়েছে, চল্লিশোর্ধ শ্যাম বর্ণের ও শরীরের গঠন হালকাপাতলা এক ব্যক্তি প্রায়শই সাবিরার ফ্ল্যাটে যাতায়াত করতেন। ঘটনার পর থেকে তাকে আর দেখা যাচ্ছে না। এদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ঘটনার আলামত বিশ্লেষণ করে ধারণা করা হচ্ছে, খুনী ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে পালিয়েছে। কারণ সাবিরার পেছন থেকে ছুরি চালানো হয়। যাতে সেটি এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে যায়। পরে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। ডাঃ সাবিরার কোন পরকীয়া আছে কিনা। তার মোবাইল কললিস্ট যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। ডাকাতি ও পারিবারিক দ্ব›দ্বকে গুরুত্ব দিয়ে ক্লু খোঁজা হচ্ছে। সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাদের সন্দেহ রয়েছে সহভাড়াটিয়া কানিজ সুবর্ণা ও নুরজাহানের প্রতিও। স্বজনরা জানান, ছেলেকে নিয়ে তিনি সম্প্রতি কানাডায় পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান জানান, এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তদন্তে প্রয়োজনে ডাক্তার সাবিরার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু, সহকর্মীসহ যাকেই প্রয়োজন হচ্ছে তাকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে এখনও কাউকে গ্রেফতার বা আটক করা হয়নি। ডাক্তার সাবিরার মরদেহ উদ্ধারের ৩৫ ঘণ্টা পর রাজধানীর কলাবাগান থানায় একটি হত্যা ও হত্যার আলামত নষ্ট চেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন ডাঃ সাবিরার মামাত ভাই রেজাউল হাসান মজুমদার জুয়েল। মামলায় আসামি অজ্ঞাত উল্লেখ করলেও বাদীর সন্দেহ চিকিৎসক লিপির ভাড়ার বাসার সাবলেটে থাকা বাসিন্দা মডেল কানিজ সুবর্ণাকে ঘিরে। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, আমার বোনের মরদেহ দেখে ঘটনার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি, গত ৩০ মে রাত আনুমানিক ১০টা থেকে পরদিন ৩১ মে সকাল ১০টার মধ্যবর্তী সময়ে অজ্ঞাতনামা আসামিরা তার শয়নকক্ষে প্রবেশ করে ছুরিকাঘাত ও তীক্ষè অস্ত্র দিয়ে গলাকেটে হত্যা করে। হত্যার ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য আলামত নষ্ট করতে শরীরে ও বিছানায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। এ খুনের সঙ্গে একই ফ্ল্যাটে সাবলেটে থাকা কানিজ সুবর্ণা অথবা অন্য কোন এক বা একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে মর্মে আমার দৃঢ় সন্দেহ হয়। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি বছরের ফেব্রæয়ারি মাসে কানিজ সুবর্ণা ডাক্তার সাবিরার ভাড়া বাসায় সাবলেটে ওঠেন। ডাক্তার সাবিরার মরদেহ উদ্ধারের পর সুবর্ণাকে ডিবি পুলিশ হেফাজতে নেয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। গত ৩১ মে কলাবাগানের ৫০/১ ফার্স্ট লেনের ভাড়া বাসা থেকে ডাক্তার সাবিরার রক্তাক্ত ও দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার পিঠে দুটি ও গলায় একটি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট। আলামত সংগ্রহের পর ক্রাইম সিন ইউনিট জানায়, সাবিরাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের পর বিছানায় আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। দাহ্য পদার্থ না থাকায় আগুন তেমন ছড়ায়নি। তবে সাবিরার শরীরের কিছু অংশ এতে দগ্ধ হয়।
×