ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিতর্কের আরেক নাম সাকিব

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ১৩ জুন ২০২১

বিতর্কের আরেক নাম সাকিব

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ক্যারিয়ারের মধ্যগগন থেকেই নানাবিধ বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। এমনকি আইসিসিও তাকে ১ বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যা শেষ হয় গত বছর ২৮ অক্টোবর। অতীতের অনেক ভুল থেকে শিক্ষা নেননি এক সময় তিন ফরমেটেই বিশ্বের সেরা সাকিব। জৈব সুরক্ষা বলয় নীতি লঙ্ঘন করার মাত্র ৭ দিন না যেতেই অনেক বড় ঘটনার জন্ম দিয়ে দেশের ক্রিকেটাঙ্গন ও বিশ্বব্যাপী ক্রিকেটপ্রেমীদের মাঝে সমালোচনা ও আলোচনার ঝড় তোলেন। এবার ম্যাচ চলাকালীন আম্পায়ারের সঙ্গে দফায় দফায় তর্কে লিপ্ত হওয়া, দুই দফা স্টাম্প উপড়ে ফেলা এবং প্রতিপক্ষ সমর্থক ও কোচের সঙ্গে অশালীন অঙ্গভঙ্গিসহ দুর্ব্যবহার করে আর পার পেলেন না। ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিশ (সিসিডিএম) ৩ ম্যাচের জন্য নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি ৫ লাখ টাকা জরিমানা করে তাকে। ঘটনাটি শুক্রবার দুপুরে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুই চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচের। সাকিবের আচরণে লেভেল-৩ পর্যায়ের লঙ্ঘন হওয়ায় ম্যাচ রেফারিই মূলত এ শাস্তি দেন। পরে শনিবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে শাস্তির ঘোষণা দেন সিসিডিএম চেয়ারম্যান কাজী ইনাম আহমেদ। ২০১১ বিশ্বকাপে প্রথমবার চরম সমালোচনার মুখে পড়েন সাকিব। সেবার ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে বাজেভাবে হারের জন্য স্বাগতিক দর্শকরা ক্ষিপ্ত হয়ে গালাগাল ও দুয়োধ্বনি দিতে থাকে। অশোভন ইঙ্গিত করেন অধিনায়ক সাকিব দর্শকদের প্রতি। সেই ঘটনার রেশ হিসেবে এমনকি সাকিবের গ্রামের বাড়িতে দুর্বৃত্তরা হামলাও করেছিল। ব্যাপক সমালোচিত হন সাকিব। সে সময় অনেকে তাকে ‘বেয়াদব’ আখ্যা দিতেও ছাড়েননি। পরের বছর তৎকালীন বিসিবি সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামালের সঙ্গে তার রেষারেষির সূত্রপাত হয় সাকিব অশোভন আচরণ ও বিতর্কিত মন্তব্য করে। এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচে অশোভন আচরণ করে ৩ ম্যাচ নিষিদ্ধ হন। ওই বছরের শেষদিকে বিসিবি থেকে অনাপত্তিপত্র (এনওসি) না নিয়েই খেলতে যান ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (সিপিএল) টি২০ আসরে। পরে তার এনওসি বাতিল করে দেশে ফিরিয়ে আনা হয় এবং ৬ মাসের জন্য বিসিবি তাকে নিষিদ্ধ করে। বছর দুয়েক পর সহধর্মিণীকে অশালীন মন্তব্য করায় গ্যালারিতে গিয়ে দর্শককে পিটিয়ে আলোচনার জন্ম দেন তিনি। পরবর্তী ঘটনা ২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফি ত্রিদেশীয় টি২০ আসরে। স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে লঙ্কান ক্রিকেটারদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন। আম্পায়ার, ম্যাচ রেফারিদের সঙ্গেও বিতÐায় জড়ান। ক্রিজে থাকা দুই ব্যাটসম্যানকে মাঠ ছেড়ে আসতে বাধ্য করেন তিনি। এরপর ড্রেসিং রুমের কাচের দরজাও চড়া মেজাজ দেখিয়ে ভেঙ্গে ফেলেন। সে জন্য অবশ্য ডিমেরিট পয়েন্ট পাওয়া ও জরিমানাকেই বেঁচে গিয়েছিলেন। এরপরের ঘটনা আরও সাঙ্ঘাতিক। জুয়াড়িদের কাছে একাধিক ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েও গোপন করেন। সে জন্য বিধি অনুসারে আইসিসি তাকে দোষী সাব্যস্ত করে সবধরনের ক্রিকেট থেকে ১ বছর নিষিদ্ধ হন তিনি ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর। সেই নিষেধাজ্ঞা ভাঙ্গে গত বছর ২৮ অক্টোবর। এই নিষেধাজ্ঞার আগেই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেটারদের নিয়ে বিভিন্ন দাবি-দাওয়ায় আন্দোলনের প্রধান ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হন তিনি এবং দেশের ক্রিকেটকে অস্থিতিশীল করে তোলেন। এছাড়া জাতীয় দলের হয়ে বেশ কয়েকবার না খেলে বিশ্রাম চেয়েও বিতর্কিত হন তিনি। সর্বশেষ এ বছর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে (আইপিএল) খেলতে চেয়ে শ্রীলঙ্কা সফর থেকে ছুটি নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেন সাকিব। এতকিছু পেছনে ফেলে এবার ডিপিএল টি২০ আসরে খেলছিলেন মোহামেডানের অধিনায়ক হিসেবে। সেখানেও অশোভন আচরণ, অশালীন কথা বলা ও উচ্ছৃঙ্খলতা দেখিয়ে আবার নিষিদ্ধ হলেন। অথচ এ আসরেই গত ৪ জুন ঐচ্ছিক অনুশীলনে জৈব সুরক্ষা বলয়ের বাইরে থাকা ক্রিকেটারদের নিয়ে নেটে ব্যাটিং করেন। এতে অবশ্য দল মোহামেডান শুনানির সম্মুখীন হয়। তবে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা ও দুঃখ প্রকাশ করায় কোন শাস্তি দেয়নি বিসিবি বা সিসিডিএম। মাত্র ৭ দিন পরই আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচ চলাকালীন অসংলগ্ন আচরণ করে বিতর্কের জন্ম দেন। ব্যাট হাতে বেশ বাজে সময় কাটছিল তাই কিছুটা বিপর্যস্তই ছিলেন। আর দুই চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে উত্তাপটা বেশিই থাকে। ৫ বছর ধরে আবাহনীকে হারাতে না পারার আক্ষেপ তো আছেই মোহামেডানের। গুটিকয়েক উপস্থিত আবাহনী সমর্থক আবার ক্রমাগত ¯েøজিং করে গেছেন তাকে। ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে পরে আবাহনীর ব্যাটিংয়ের সময় একবার লাথি মেরে স্টাম্প উপড়ে ফেলেন এবং আরেকবার স্টাম্প দু’হাতে তুলে আছাড় মারেন। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে বিরক্ত হয়ে তর্কও করেন। পরে আবাহনী সমর্থকদের সঙ্গে ও কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনের সঙ্গেও বিতÐা হয়। সন্ধ্যায় অবশ্য নিজের ভুল স্বীকার করে ভক্ত, সমর্থক, ক্লাব, ক্রিকেট কর্মকর্তা, ম্যাচ অফিসিয়াল সবার কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা ও দুঃখ প্রকাশ করে ফেসবুক পেজে পোস্ট দেন। কিন্তু সিসিডিএম জানিয়ে দিয়েছিল আম্পায়ারদের দেয়া রিপোর্ট ও ম্যাচ রেফারির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার। শনিবার দুপুর থেকেই শোনা যাচ্ছিল বড় শাস্তি পেতে চলেছেন তিনি। আম্পায়ার্স কমিটি ৫ ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাব করলেও ম্যাচ রেফারি মোরশেদুল চৌধুরী ৩ ম্যাচ নিষিদ্ধ ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেন সাকিবকে। সাকিব সেই শাস্তি মেনে নেয়াতে আর শুনানির প্রয়োজন পড়েনি। ম্যাচ রেফারির দেয়া শাস্তিই বহাল রাখে সিসিডিএম। ফলে চলতি লীগের প্রাথমিক পর্বে শুধু শেষ ম্যাচটা খেলতে পারবেন সাকিব। টানা ৩ ম্যাচ তাকে বসেই থাকতে হবে।
×