ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইউএইর বিনিয়োগ

প্রকাশিত: ২০:৫৯, ১৩ জুন ২০২১

ইউএইর বিনিয়োগ

এবারের ঘোষিত বাজেট যে বিনিয়োগ ও ব্যবসাবান্ধব হয়েছে, সে বিষয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। সরকার কর্পোরেট কর হ্রাস, কর অবকাশ, সহজ শর্তে স্বল্প সুদে সিঙ্গেল ডিজিটে ব্যাংক ঋণসহ নানাবিধ প্রণোদনা ও সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা করেছে- ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের কথা মাথায় রেখে। প্রধানত বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কথা চিন্তা করেই সারা দেশে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোসহ নতুন ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। সেসব স্থানে বড়জোর এক সপ্তাহের মধ্যে গ্যাস-বিদ্যুত, পানিসহ যোগাযোগ নেটওয়ার্কের ব্যবস্থা করা হবে। সবই মূলত করা হচ্ছে গত দুবছর ধরে দেশে ও বিশ্বব্যাপী চলমান করোনা মহামারী মোকাবেলাসহ প্রায় স্থবির অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি দ্রæত পুষিয়ে নেয়ার জন্য। ইতোপূর্বে দেশে সৌদি আরব ও জাপানের বিপুল বিনিয়োগের প্রতিশ্রæতি পাওয়া গেছে। এবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত বা ইউএইর প্রতিশ্রæত ১০ বিলিয়ন ডলার, যা টাকার অঙ্কে প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব বাস্তবায়নে। দেশের বিদ্যুত, জ্বালানি, সমুদ্রবন্দর ও অবকাঠামো নির্মাণে ব্যবহৃত হবে এই বিনিয়োগ। আগামী আগস্ট মাসে বাংলাদেশ ও ইউএইএর মধ্যে যৌথ বাণিজ্য কমিশনের (জেটিসি) গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগেই এ বিষয়ে আলোচনা উন্মুক্ত করতে চায় আরব আমিরাত সরকার, যা অত্যন্ত ইতিবাচক। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর সঙ্কটেও বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধির খবরটি নিঃসন্দেহে স্বস্তিদায়ক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা সহজীকরণ সূচকে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দুই অঙ্কে নিয়ে আসার লক্ষ্যে সূচকভিত্তিক একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এই সূচকে চলতি বছর বাংলাদেশে অবস্থান ১৭৬ থেকে ৮ ধাপ এগিয়ে উন্নীত হয়েছে ১৬৮টিতে। নতুন ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রস্তুতির পথে। বিনিয়োগকারীদের ৩৫টি সংস্থা থেকে দেয়া ১৫৪টি সেবা এক স্থানে তথা ওয়ান স্টপ সার্ভিসের আওতায় আনার কাজ চলছে। এরই ফলে বিডা প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রার বিনিয়োগ বাস্তবায়ন হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৪৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যার মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রেরিত অর্থই প্রধান। এসবই দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি, নতুন নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপনসহ নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। করোনা মহামারীর ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার বদ্ধপরিকর। জাতীয় বাজেটেও তারই প্রতিফলন ঘটেছে। সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ, নতুন নতুন শিল্প কারখানা স্থাপনসহ কর্মসংস্থানের ওপর। এর জন্য গত বছর সরকার এক লাখ কোটি টাকার বেশি বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে, যার সুফল পেয়েছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। এর বাইরেও রয়েছে ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে অন্তত দু’মাসের কর রেয়াত, ৪ শতাংশ হারে ব্যাংক ঋণ সুবিধা, যার সুবিধা পাবেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা। এর পাশাপাশি কৃষিসহ গবাদি পশু, পোল্ট্রি, ফুল-ফল উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের জন্য দেয়া হয়েছে স্বল্পসুদে ঋণ সুবিধা ও প্রণোদনা। যার মধ্যে রয়েছে কর্পোরেট করহার কমানো, স্বল্পসুদে দীর্ঘ ও মধ্য মেয়াদী শিল্পঋণ সুবিধা, সর্বোপরি অপ্রদর্শিত আয় তথা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ। করমুক্ত আয়ের পরিসীমাও বাড়ানো হয়েছে। এসবই আগামীতে দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়ক হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
×