ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কারামুক্তি দিবস পালন

হাসিনাকে গ্রেফতারের মাধ্যমে গণতন্ত্রের পায়ে শিকল দেয়া হয়

প্রকাশিত: ২২:২৩, ১২ জুন ২০২১

হাসিনাকে গ্রেফতারের মাধ্যমে গণতন্ত্রের পায়ে শিকল দেয়া হয়

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ করোনার কারণে বড় কোন কর্মসূচী না থাকলেও দোয়া, মিলাদ মাহফিল, দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ, সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস পালন করেছে দল ও সহযোগী সংগঠনগুলো। এছাড়া মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জায় প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার রাজধানীসহ সারাদেশে করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব কর্মসূচী পালিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর কলাবাগান মাঠে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে স্বেচ্ছাসেবক লীগ আয়োজিত আলোচনা সভা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ২০০৮ সালের ১১ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবসটি প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রের মুক্তি দিবস। গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের মাধ্যমে গণতন্ত্রের পায়ে শেকল পরানো হয়েছিল। ১১ জুন জনগণের দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁকে মুক্ত করে সেই অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকেই মুক্ত করা হয়েছিল। তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অর্জিত স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দাঁড়িয়ে আমাদের বড় সার্থকতা এখানেই যে, আজ পাকিস্তান আমাদের উন্নতি দেখে হাহুতাশ করে। সমস্ত সূচকে আমরা তাদেরকে অনেক আগেই পেছনে ফেলেছি। তাদের প্রধানমন্ত্রী যখন পাকিস্তানকে ১০ বছরের মধ্যে সুইডেন বানানোর কথা বলে, তাদের দেশের জনগণ বলে- সুইডেন লাগবে না, ১০ বছরের মধ্যে আমাদেরকে বাংলাদেশের অবস্থানে নিয়ে যান। ভারতকেও সামাজিক, মানবিক সূচকে ছাড়িয়ে আমরা তাদেরকে এখন মাথাপিছু আয়েও ছাড়িয়ে গেছি উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ভারত শুধু আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থনই দেয়নি, তাদের মানুষ আমাদের সঙ্গে রক্তও ঝরিয়েছে। আমাদের এই উন্নতিতে ভারতে আলোচনার ঝড়, তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তিনি আরও বলেন, জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে মুক্ত করে পরপর তিনবার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়ার ফলেই আজ বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত। আজ বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নতিতে ভারতে আলোচনার ঝড়, পাকিস্তানে হা-হুতাশ এবং জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বব্যাপী প্রশংসা করছে। অথচ এদেশের টিভিতে যারা রাত বারোটার পর টকশোতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে পর্দা ফাটান, তাদের আর বিএনপির মুখে কোন প্রশংসা শুনতে পাওয়া যায় না। পরে তথ্যমন্ত্রী স্বেচ্ছাসেবক লীগের করোনা প্রতিরোধ সামগ্রী সরবরাহ বুথের উদ্বোধন করেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক একেএম আফজালুর রহমান বাবুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নেতা গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, কাজী শহিদুল্লাহ লিটন, নির্মল চ্যাটার্জী, আবদুস সালাম, এ্যাডভোকেট শাহনাজ আক্তার, আবদুল্লাহ আল সায়েম, আরিফুর রহমান, আবির আল হাসান, মেহেদী হাসান মোল্লা, ওবায়দুল হক খান, আজিজুল হক আজিজ, রফিকুল ইসলাম বিটু ও একেএম মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল। দিনটি উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন সংগঠন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে। দিবসটি উপলক্ষে ছাত্রলীগের উদ্যোগে বাদ জুমা ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মেহেদী হাসান, সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেন। এছাড়া ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড কমিটির উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মন্দির ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। সংস্কারপন্থীদের জন্য নেত্রীর মুক্তির সভা করতে পারিনি ॥ এদিকে বাংলানিউজ জানায়, সেনাসমর্থিত ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যুক্তরাষ্ট্রে সংস্কারপন্থীরা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। সে সময় এই সংস্কারপন্থীদের জন্য নেত্রীর মুক্তির সভা করতে পারিনি। শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন একথা বলেন। শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে নিজ বাসভবনে ড. মোমেন সেনাসমর্থিত ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়ে আলাপ করেন। তিনি সেই সময় নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন ওই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি থাকতেন বোস্টনে। মোমেন বলেন, শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য আমরা শেখ হাসিনা মুক্তি আন্দোলন শুরু করেছিলাম। প্রতি সপ্তাহে মিটিংয়ের জন্য বোস্টন থেকে নিউইয়র্কে যেতাম। শুক্রবার ক্লাস শেষ করেই রওনা দিতাম নিউইয়র্কে। রবিবার সেখান থেকে ফিরতে ফিরতে রাত ৪টা সাড়ে ৪টা বেজে যেত। পরদিন সোমবার সকাল ৮টায় ক্লাসে যেতাম। ছেলেমেয়েরা গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়ত। তিনি বলেন, ওই সময়ে শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলন শুরু করেছিলাম। আমরা যখন মিটিং করতাম, সংস্কারপন্থীরাও একই সময়ে মিটিং আহ্বান করত। যেন আমাদের মিটিং বাধাগ্রস্ত হয়। ড. মোমেন বলেন, জেল থেকে চিকিৎসার জন্য ছাড়া পেয়ে শেখ হাসিনা বোস্টনে গিয়েছিলেন। আমরা তখন বলেছিলাম, আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। আপনি অবশ্যই দেশে ফিরবেন। তিনি সব বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে দেশে ফিরেছিলেন। সেনাসমর্থিত ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেফতার হয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় কারাগারের অভ্যন্তরে শেখ হাসিনা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন বিদেশে চিকিৎসার জন্য তাকে মুক্তি দেয়ার দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। আওয়ামী লীগসহ অন্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ক্রমাগত চাপ, আপোসহীন মনোভাব ও অনড় দাবির মুখে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস শুক্রবার। দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগের পর ২০০৮ সালের ১১ জুন সংসদ ভবন চত্বরে স্থাপিত বিশেষ কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
×