ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উৎস হতে পারে মেঘনা মোহনা

বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে দিনে পানির চাহিদা হবে এক শ’ কোটি লিটার

প্রকাশিত: ২১:৫০, ১২ জুন ২০২১

বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে দিনে পানির চাহিদা হবে এক শ’ কোটি লিটার

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর চূড়ান্ত রূপ পেলে সেখানে দৈনিক পানির চাহিদা হবে প্রায় এক শ’ কোটি লিটার। শিল্প স্থাপনের কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। কিন্তু এতবড় একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটিতে উৎপাদন কাজ চালাতে এই পরিমাণ পানির জোগান কীভাবে দেয়া হবে, তা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। চট্টগ্রামের হালদা নদী থেকে ১৪ কোটি লিটার পানি উত্তোলনের পরিকল্পনা থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অতি সামান্য। এ অবস্থায় বিরাট উৎস বিবেচনায় এখন মেঘনা নদীর কথা ভাবছে পরিকল্পনা কমিশন। এ ব্যাপারে একটি ধারণাপত্র ইতোমধ্যেই দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের হালদা নদী থেকে দৈনিক ১৪ কোটি লিটার পানি উত্তোলনের পরিকল্পনায় এগিয়ে যাচ্ছিল চট্টগ্রাম ওয়াসা। এ নিয়ে পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের সমালোচনাও রয়েছে। কারণ, হালদা নদী কার্পজাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র, যা ইতোমধ্যে হ্যারিটেজ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর পানির চাহিদার একটি বড় অংশ এই নদী থেকেই উত্তোলিত হয়ে আসছে। আরও পানি উত্তোলন করতে গেলে শুষ্ক মৌসুমে নদীতে সাগরের নোনা পানি প্রবেশের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে মৎস্য প্রজনন। এখন বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে পানির চাহিদা বিবেচনায় উৎস হিসেবে হালদা নদী যথেষ্ট কিনা সে বিষয়টিও ভাবনায় এসেছে। চট্টগ্রামের হালদা নদী থেকে মীরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর পর্যন্ত পানি নিয়ে যেতে পাইপ লাইন স্থাপন করতে হবে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার। ব্যয়বহুল এ প্রকল্প বাস্তবায়নের পর পানি পাওয়া যাবে দৈনিক ১৪ কোটি লিটার, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। কিন্তু মেঘনা মোহনা থেকে ১৩৩ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপন করা হলে সেই উৎস হবে বিরাট। তাছাড়া আনার পথে হাজীগঞ্জ, লাকসাম, ফেনী, বারৈয়ারহাট এবং আরও কয়েকটি স্থানে সেই পাইপ লাইনের পানি সংযোগ দেয়া সম্ভব হবে। দ্বিগুণ পাইপ লাইন স্থাপনের কারণে প্রথমে এটিকে ব্যয়বহুল মনে হলেও দীর্ঘমেয়াদী চিন্তায় এটিই লাভজনক হবে, এমনই বিবেচনা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ এ ব্যাপারে জনকণ্ঠকে জানান, হালদা থেকে পানি উত্তোলন ও সরবরাহের জন্য ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের একটি প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু মেঘনার পানি ব্যবহারে সুফল বেশি পাওয়া যাবে, এতে সন্দেহ নেই। কারণ, লোয়ার মেঘনায় পাওয়া যাবে পদ্মা, আড়িয়াল খাঁ, যমুনাসহ বিভিন্ন নদীর পানি; যেহেতু দেশের ছোট- বড় বেশিরভাগ নদী মেঘনা হয়েই বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। এ ব্যাপারে একটি ধারণাপত্র দেয়া আছে। ধারণাপত্রটি তৈরি করেছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম)। যদি মেঘনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয় তবে হালদা নদী থেকে পানি উত্তোলনের প্রয়োজন হবে না। সেক্ষেত্রে প্রকল্পটিও বাদ যেতে পারে। চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম এ ব্যাপারে বলেন, হালদা থেকে ১৪ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করা যাবে, এমন বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতেই আমরা প্রকল্পটির দিকে এগিয়েছি। কিন্তু মেঘনা যদি আরও ভাল উৎস হয় সে অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। ধারণাপত্রটি নিয়ে গত ৬ জুন পরিকল্পনা কমিশনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে কিছু পর্যবেক্ষণ তারা দিয়েছেন, যা আমরা এখনও অফিসিয়ালি পাইনি। এক্ষেত্রে পরিবেশ, মৎস্য, নদীসহ বিভিন্ন কমিশন ও কর্তৃপক্ষের অভিমত পেতে হবে। তবে উৎস হিসেবে হালদার তুলনায় মেঘনা মোহনা যে অনেক বিরাট, এ বিষয়ে তিনি একমত পোষণ করেন। ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী জানান, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) থেকে যে ধারণা দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক অঞ্চলে ২০৪০ সাল নাগাদ পানির প্রয়োজন হবে দৈনিক সাড়ে ৯৬ কোটি লিটার, যা এক শ’ কোটির কাছাকাছি। আর ২০২৫ সালের মধ্যে পানির চাহিদা হবে দৈনিক ২৫ কোটি লিটার। শিল্পায়নের সঙ্গে সঙ্গে এ চাহিদা দ্রুতই বাড়তে থাকবে। মেঘনা মোহনা থেকে দুটি ফেজে ৪৫ কোটি করে মোট ৯০ কোটি লিটার পানি উত্তোলনের বিষয়টি চিন্তা-ভাবনার পর্যায়ে রয়েছে। পর্যায়ক্রমে দুই ফেজ বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। তবে সার্বিক বিবেচনায় সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে সেভাবেই কাজ করবে ওয়াসা। ধারণাপত্র অনুযায়ী, মেঘনা মোহনা থেকে পানি উত্তোলনের জন্য ইনটেক স্টেশন, ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, বুস্টিং স্টেশন ও রিজার্ভয়ার করার প্রস্তাব রয়েছে। সেখান থেকে তোলা যাবে দৈনিক ৯০ কোটি লিটার পানি। এরমধ্যে হাজীগঞ্জ, ফেনী, বারৈয়ারহাট এবং আরও কয়েকটি শহরকে ৪৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা যাবে। অবশিষ্ট ৪৫ কোটি লিটার পানি পাইপ লাইনে চলে আসবে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে। পানির উৎস হিসেবে মেঘনা অনেক বড় হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী ভবিষ্যতে আরও বেশি পানি উত্তোলনের প্রকল্প গ্রহণ করা সম্ভব হবে। চট্টগ্রামের হালদা নদী থেকে এখনই পানি উত্তোলন করে চট্টগ্রাম মহানগরে সরবরাহ করা হচ্ছে। এখানে দুটি পানি প্রকল্প রয়েছে, যার পানি শোধণ ক্ষমতা দৈনিক ২৮ কোটি লিটার। নতুন করে আরও ১৪ কোটি লিটার পানি ওঠানো হলে নদীতে লবণাক্ততা দেখা দিতে পারে, এই শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। তবে হালদার প্রস্তাবটিও পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেয়া আছে। তুলনামূলক বিবেচনায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। এছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ে চাহিদা মেটাতে বৃষ্টির পানি, ভূগর্ভ, ফেনী নদী, মুহুরি, সিলোনিয়া, ছোট ফেনী ও সারফেজ ওয়াটার প্ল্যান্ট এবং সাগরের পানি লবণমুক্ত করার প্রকল্পও রয়েছে।
×