ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উত্তেজনাপূর্ণ লড়াইয়ে আবাহনীকে হারাল মোহামেডান

প্রকাশিত: ২১:২৮, ১২ জুন ২০২১

উত্তেজনাপূর্ণ লড়াইয়ে আবাহনীকে হারাল মোহামেডান

মোঃ মামুন রশীদ ॥ উত্তাপটা সেভাবে টের পাওয়া যায়নি শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী দুটি দল আবাহনী-মোহামেডান দ্বৈরথ মানেই বাড়তি উত্তেজনা আর সমর্থক-ক্রিকেটার-কর্মকর্তাদের মধ্যে নানা কথার লড়াই। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অবশ্য সেই উত্তেজনায় অনেকখানি ভাটা পড়ে গেছে। কিন্তু দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ক্রিকেটীয় লড়াইয়ে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ছড়াল উত্তেজনা। সব উত্তাপ একাই ছড়ালেন মোহামেডান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। আম্পায়ারের সঙ্গে বিত-া, লাথি হাঁকিয়ে স্টাম্প উপড়ানো, স্টাম্প তুলে আছড়ে ফেলা এবং আবাহনী সমর্থকদের সঙ্গে কথার লড়াই চালিয়েছেন তিনি। এদিন ব্যাট হাতেও ২৭ বলে ৩৭ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন। মোহামেডানের হয়ে যেন একাই লড়েছেন সাকিব আবাহনীর সঙ্গে। উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্য শাস্তির মুখে থাকলেও সেই লড়াইয়ে জিতেছেন সাকিব। কারণ চিরশত্রু আবাহনীকে ডার্কওয়াথ-লুইস মেথডে ৩১ রানে হারিয়ে দিয়েছে মোহামেডান। মোহামেডান ৬ উইকেটে ১৪৫ রান তোলার পর ব্যাটিংয়ে নেমে আবাহনী ৫.৫ ওভারে ৩ উইকেটে ৩১ রান তোলার পর বৃষ্টি নামে। পরবর্তীতে ৯ ওভারে ৭৬ রানের জয়ের লক্ষ্য দেয়া হয় আবাহনীকে। তারা ৬ উইকেটে ৪৪ রান করতে পেরেছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর মুখোমুখি হওয়ার ম্যাচে কোণঠাসা হয়েই নামে মোহামেডান। অধিনায়ক সাকিব ব্যাটে ফর্মহীন, দলও ৬ ম্যাচে টানা ৩ হারে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ৬ নম্বর অবস্থানে। অন্যদিকে ৬ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকা আবাহনী হাওয়াই উড়ছে। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে মোহামেডান। ৩৭ রানের ওপেনিং জুটি ভাঙ্গেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। ২৬ বলে ৪ চার, ১ ছক্কায় ২৬ রানে আউট হন পারভেজ হোসেন ইমন। আরেক ওপেনার আব্দুল মজিদ ১৮ বলে ১ ছক্কায় ১৬ রানে আউট হন দলীয় ৬১ রানে। তবে এরপর দ্রুত কয়েকটি উইকেট হারায় তারা। ৭ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে মোহামেডান। এদিন একধাপ নিচে চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে দারুণ খেলেন সাকিব। আগের ৬ ম্যাচে ব্যর্থ এ অলরাউন্ডার ২৭ বলে ১ চার, ২ ছক্কায় ৩৭ রান করেন। পরে মাহমুদুল হাসান লিমন ২২ বলে ২ চার, ১ ছক্কায় ৩০ রানে অপরাজিত থাকেন। ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৪৫ রান তোলে মোহামেডান। তানজিম ৪ ওভারে ১৭ রানে ২টি ও একেএস স্বাধীন ২৪ রানে ৩ উইকেট নেন। জবাব দিতে নেমে আবাহনী ৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে পড়ে বিপর্যয়ে। ইনিংসের প্রথম বলেই নাইম শেখকে (০) বোল্ড করে দেন শুভাগত হোম। তৃতীয় বলে স্বাধীনকেও বোল্ড করে দেন তিনি। তৃতীয় ওভারে আবার আফিফ হোসেনকেও (২) শিকার করে শুভাগত আতঙ্ক হয়ে ওঠেন। তবে এরপর অধিনায়ক মুশফিক ও নাজমুল হোসেন শান্ত দেখে শুনে খেলছিলেন। তবে পঞ্চম ওভারের শেষ বলে মুশফিকের বিপক্ষে সাকিবের এলবিডব্লিউ আবেদন আম্পায়ার নাকচ করতেই মেজাজ হারান সাকিব। স্টাম্পে লাথি হাঁকিয়ে পরে আবার আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কে জড়ান। পরের ওভারের পঞ্চম বল হতেই টিপটিপ বৃষ্টি নামে এবং আম্পায়াররা কাভার আনতে বলে চরম অসন্তোষ নিয়ে সাকিব দৌড়ে এসে স্টাম্প তুলে আছাড় দেন। সামান্য বৃষ্টিতেই কাভার আনতে বলায় আম্পায়ারের সঙ্গে বিত-ায় জড়ান তিনি। ফলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মাঠ ছাড়ার সময় আবাহনী সমর্থকদের সঙ্গেও বচসা হয় সাকিবের। ৫.৫ ওভারে তখন ৩ উইকেটে ৩১ রান ছিল আবাহনীর। ৮৩ মিনিট পর খেলা শুরু হলে আবাহনীকে ৯ ওভারে জয়ের লক্ষ্য দেয়া হয় ৭৬ রানের। কিন্তু বৃষ্টির পরই শান্ত (২০ বলে ১৫) ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে (০) শিকার করেন পেসার তাসকিন আহমেদ। মোসাদ্দেক হোসেনও ৩ রানে আবু জায়েদের পেসে সাজঘরে ফেরেন। ফলে ৯ ওভারে ৬ উইকেটে ৪৪ রানের বেশি তুলতে পারেনি আবাহনী। মুশফিক ১৮ বলে ১ চার, ১ ছক্কায় ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন, কিন্তু আবাহনী হেরে যায় ৩১ রানে। শুভাগত ৩, তাসকিন ২ উইকেট নেন। ২০১৫-১৬ মৌসুসের পর এই প্রথম আবার আবাহনীর বিপক্ষে জিততে সক্ষম হলো মোহামেডান। মাঝের সবগুলো লড়াইয়ে জিতেছে আবাহনী। এ পরাজয়ে ৭ ম্যাচে দুই হারে ১০ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে নেমে গেল আবাহনী আর মোহামেডান সমান ম্যাচে চতুর্থ জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে উঠে এলো চারে। স্কোর ॥ মোহামেডান ইনংস- ১৪৫/৬; ২০ ওভার (সাকিব ৩৭, মাহমুদুল ৩০*, ইমন ২৬; স্বাধীন ৩/২৪, সাকিব ২/১৭)। আবাহনী ইনিংস- (লক্ষ্য ৯ ওভারে ৭৬) ৪৪/৬; ৯ ওভার (মুশফিক ১৮*, শান্ত ১৫; শুভাগত ৩/১৭, তাসকিন ২/৫)। ফল ॥ বৃষ্টি আইনে মোহামেডান ৩১ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ শুভাগত হোম (মোহামেডান)।
×