ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এ কেমন আচরণ সাকিবের!

প্রকাশিত: ২১:২৮, ১২ জুন ২০২১

এ কেমন আচরণ সাকিবের!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শুক্রবার বঙ্গবন্ধু ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ (ডিপিএল) টি২০ আসরের সপ্তম রাউন্ডে এসে ব্যাট হাতে নিজেকে কিছুটা ফিরে পেলেন সাকিব আল হাসান। আর সেটিও এমন এক ম্যাচে যে ম্যাচকে ঘিরে থাকে উত্তেজনা। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী-মোহামেডানের মুখোমুখি লড়াই হয়েছে এদিন মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। চলতি আসরে নিজের সর্বোচ্চ ৩৭ রানের ইনিংস খেলে মোহামেডান অধিনায়ক যেন নিজেকে ফিরে পাওয়ার ইঙ্গিত দিলেন। কিন্তু আবাহনী ব্যাটিংয়ে নামার পরই সব উত্তেজনা ছড়ালেন সাকিব নিজেই। আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়লেন বোলিং করার সময় সিদ্ধান্ত তার পক্ষে না আসাতে। স্টাম্পে লাথি হাঁকিয়েছেন সে যাত্রা। পরবর্তীতে বৃষ্টি নামলে আম্পায়াররা কাভার আনতে বললে দৌড়ে এসে স্টাম্প তুলে আছাড় দেন। মাঠ ছাড়ার সময় উপস্থিত গুটিকয়েক আবাহনী সমর্থকদের সঙ্গেও বিত-ায় জড়ালে আবাহনী কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনের সঙ্গেও বিতর্ক হয় তার। সাকিবের এমন আচরণের পর ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিশের (সিসিডিএম) চেয়ারম্যান কাজী ইনাম আহমেদ জানিয়েছেন, ম্যাচ রেফারির রিপোর্টের ভিত্তিতে শাস্তি দেয়া হবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। যদিও ম্যাচ শেষে নিজের ফেসবুক পেজ থেকে নিজের আচরণের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন সাকিব। আবাহনী-মোহামেডান বাংলাদেশের দু’টি ঐতিহ্যবাহী ক্লাব। ফুটবল, ক্রিকেট কিংবা হকি যে কোন ক্রীড়ায় দু’দলের ময়দানী লড়াই মানেই বাড়তি উত্তেজনা, সমর্থকদের মধ্যে বিত-াসহ অনেক ধরনের অযাচিত ঘটনার ইতিহাস রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এ দুই দলের মধ্যে মাঠের লড়াইয়ে আগের সেই উত্তেজনার রেশ পাওয়া যায় না। কিন্তু শুক্রবার মিরপুরে ডিপিএল টি২০তে দু’দলের লড়াইয়ে পুরনো সেই উত্তেজনা দেখা গেছে। যদিও করোনা পরিস্থিতির কারণে দর্শক-সমর্থকরা সেভাবে আসতে পারেননি। তবে এদিন দু’দলের বেশ কিছু সমর্থক উপস্থিত ছিলেন। মোহামেডানের ব্যাটিং এবং ফিল্ডিংয়ের সময় তাদের মধ্যে তপ্ত বাক্য বিনিময়ও হয়েছে। আবাহনী সমর্থকরা মোহামেডান অধিনায়কসহ অন্যদের বিভিন্ন মন্তব্যও করেছেন। এতেই হয়তো মেজাজ হারিয়ে ফেলেন সাকিব। চলতি লীগে ব্যাট হাতে চরমভাবে ব্যর্থ সাকিব এদিন ২৭ বলে ১ চার, ২ ছক্কায় দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৭ রান করেন। এটি চলতি লীগে সাকিবেরও সর্বোচ্চ রান। ব্যাটিংয়ের সময় তার আচরণে কোন অসংলগ্নতা দেখা যায়নি। সাকিব নিজের মেজাজ হারিয়ে ফেলেন আবাহনী ব্যাটিংয়ে নামার পর। দলটির সমর্থকরা ওই সময় আরও বেশি স্লেজিং করছিলেন সাকিবদের। ইনিংসের পঞ্চম ওভারের শেষ বলে আবাহনী অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের বিপক্ষে এলবিডব্লিউ’র আবেদন নাকচ করেন আম্পায়ার। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্টাম্পে লাথি হাঁকিয়ে উপড়ে ফেলেন সাকিব। আম্পায়ারের সঙ্গেও অশোভন আচরণ করেন ও তর্কে জড়ান। পরের ওভারের পঞ্চম বলের সময় হাল্কা বৃষ্টি নামলে গ্রাউন্ডসম্যানদের কাভার আনার ইশারা করেন আম্পায়ার। বিষয়টি মানতে পারেননি সাকিব। দৌড়ে এসে স্টাম্প তুলে আছাড় মারেন তিনি এবং আবারও আম্পায়ারদের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হন। মাঠ ছাড়ার সময় আবাহনী সমর্থকদের দিকে তেড়েফুঁড়ে যান তিনি এবং অশালীন ভাষায় জবাব দেন। আবাহনী কোচ সুজন সে সময় তেড়ে আসেন। সাকিবের সঙ্গে তার কিছু উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হলেও দু’দলের ক্রিকেটার ও কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতায় বিষয়টি বেশিদূর গড়ায়নি। সাকিব দাবি করেন তিনি সুজনকে কিছু বলেননি। ম্যাচ শেষে তিনি নিজের ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘প্রিয় ভক্ত ও ফলোয়ারবৃন্দ, আমার মেজাজ হারানোর জন্য এবং ম্যাচের পরিবেশ নষ্ট করার জন্য অত্যন্ত দুঃখিত। বিশেষ করে যারা বাসায় বসে দেখেছেন। আমার মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের এভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত হয়নি। মাঝে মাঝে এসব যুক্তির বাইরে ঘটে থাকে। আমি দল, ম্যানেজমেন্ট, টুর্নামেন্ট অফিসিয়াল ও আয়োজক কমিটির কাছে এই মানবিক ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আশা করছি এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ভবিষ্যতে ঘটবে না।’ অবশ্য এর আগেই সিসিডিএম চেয়ারম্যান কাজী ইনাম বলেছেন, ‘আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে অনেক কিছুই ঘটে থাকে। আজকে এমনই ঘটনা আমরা দেখলাম। যা ফেসবুক লাইভ, ইউটিউবের মাধ্যমে সবাই দেখেছে। সাকিবের ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। আমরা আশাকরি এমন ঘটনা ঘটবে না। আপনারা জানেন এটা আইসিসির স্বীকৃত ম্যাচ। এসব দেখার জন্য আমাদের প্যানেল আছে। এটা দেখে থাকেন বিসিবির আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারি। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে সাকিবের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
×