ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এবারও মুক্তি নেই ঢাকাবাসীর ॥ জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ২১:১৩, ১২ জুন ২০২১

এবারও মুক্তি নেই ঢাকাবাসীর ॥ জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। কিন্তু সেই জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মেলেনি নগরবাসীর। চলতি মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিতেই নাজেহাল ঢাকা। টানা একঘণ্টা বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় নগরের অনেক এলাকার প্রধান সড়ক। ডিএনসিসিতে আতিকুল ইসলাম এবং ডিএসসিসিতে শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরপরই জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন উদ্যোগ নেন। তারই অংশ হিসেবে ছয় মাস আগে ওয়াসার কাছ থেকে খাল, নর্দমা, বক্স কালভার্ট ও পাম্পিং স্টেশনের নিয়ন্ত্রণ নেন নিজেদের হাতে। ধারাবাহিকভাবে খালে চালান অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং পরিচ্ছন্নতা অভিযান। কিন্তু তারপরও অনেক এলাকায় বৃষ্টির পানি নামতে দু’একদিন লেগে যায় বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নাগরিকরা। নগরবাসীর অভিযোগ, বৃষ্টি হলেই নগরে জলাবদ্ধতা এখন নগরবাসীর নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকার দুই মেয়রের কোন প্রতিশ্রুতিই কাজে আসছে না। চলাচলে আগের মতোই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শুধু খাল, নর্দমা, বক্স কালভার্ট পরিষ্কার করলেই নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন হবে না বলে মনে করেন নগরবিদরা। তারা জানান, খালে পানিপ্রবাহ সৃষ্টির পাশাপাশি ঢাকার চারপাশের নতুন ওয়ার্ডকে গুরুত্ব দিতে হবে। রাজধানীর বৃষ্টির পানি যাওয়ার পথগুলো যেন ভরাট না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। এছাড়া এই কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং স্থানীয় জনগণকে যুক্ত করতে হবে। পরিকল্পিতভাবে কাজ করলে ঢাকার দুই মেয়র যে পরিকল্পনা নিয়েছেন, আগামী দু’এক বছর পর তার সুফল মিলবে। আবহাওয়া অধিদফতরের দেয়া তথ্যমতে, গত ১ জুন বছরের প্রথম ভারি বৃষ্টিপাত হয়। ওইদিন সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ঢাকায় বৃষ্টি হয় ৮৫ মিলিমিটার। এছাড়া শনিবার (৫ জুন) সকাল এবং বিকেলে দুই দফায় ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ১১১ মিলিমিটার যা গত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৭ সালের ১২ জুন রাজধানীতে ১৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। গত শনিবারের বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। জলজটের কারণে কয়েকটি সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন অফিসগামী লোকজন। এর মধ্যে উত্তর সিটির তেজতুরীবাজার, পশ্চিম কাজীপাড়া, পূর্ব শেওড়াপাড়া, পীরেরবাগ, কল্যাণপুর, উত্তরা-১ নম্বর সেক্টর, বিমানবন্দর সড়ক, মানিক মিয়া এভিনিউ, তেজগাঁও সাতরাস্তাসহ বিভিন্ন অলিগলিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে অনেক এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। পশ্চিম কাজীপাড়ার বাসিন্দা এম কে নাসির বলেন, ‘আকাশ মেঘলা হলেই এ এলাকার মানুষের মুখে কালো মেঘের ছায়া নেমে আসে। সবাই জলাবদ্ধতার আশঙ্কায় থাকেন। অনেকের বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকে যায়। সড়কের পানি নামতে সাত থেকে আট ঘণ্টা লাগে। ফলে সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।’ গত শনিবার বিকেলের বৃষ্টিতে তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড় থেকে নাবিস্কো পর্যন্ত সড়কে প্রায় হাঁটু পরিমাণ পানি জমেছিল। সড়কের পশ্চিম পাশের ফুটপাথও পানিতে তলিয়ে যায়। এতে পথচারীদের এ পথে চলতে দেখা যায়নি। এর মধ্যে কোন গাড়ি দ্রুতগতিতে চললেই নদীর মতো পানি ঢেউ খেলতে দেখা গেছে। ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্র জানায়, ডিএনসিসি এলাকায় নর্দমা রয়েছে এক হাজার ৩৭০ কিলোমিটার। এছাড়া খাল রয়েছে ২৯টি। এসব খাল এবং নর্দমায় জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে পৃথক দুটি প্রক্রিয়ায় কাজ করছে ডিএনসিসি। এর মধ্যে পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে খাল-নর্দমা পরিষ্কারে কাজ করছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ। গত ৪ জানুয়ারি থেকে ২ মে পর্যন্ত ১৭ হাজার ৩৪০ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ২ জুন মিরপুর-১৪ নম্বরের বাউনিয়া খাল থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ডিএনসিসি। উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্ব দেন ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম। এ প্রসঙ্গে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা খাল, নর্দমার দায়িত্ব নেয়ার পর বসে নেই। প্রতিটি খাল থেকে অবৈধ স্থাপনা ও বর্জ্য অপসারণ করেছি। খালগুলোতে পানি প্রবাহ তৈরি হয়েছে। তারপরও নগরের কোন্ কোন্ সড়কে পানি জমে তা নোট করেছি। এখন সেগুলো নিয়ে কাজ করব। আশাকরি আসন্ন বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসব।’ গত শনিবারের বৃষ্টিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটির আওতাধীন বংশাল, নাজিরাবাজার, কাঁঠালবাগান, ধানমন্ডি-২৭ নম্বর, রামকৃষ্ণ মিশন, আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড, রাজারবাগ, যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, দনিয়াসহ অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিল। নাজিরাবাজারের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বছর বর্ষায় এ এলাকার সড়কে পানি জমে। ফলে যানবাহন চলাচলে সমস্যা হয়। ফুটপাথ না থাকায় সড়কের পাশে ড্রেনে পা পড়ে অনেকেই আহত হচ্ছেন। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন এ সমস্যার সমাধান করছে না। অথচ নাজিরাবাজার থেকে নগর ভবনের দূরত্ব এক কিলোমিটারেরও কম।’ ডিএসসিসির প্রকৌশল দফতর সূত্র জানায়, গত ৩১ ডিসেম্বর নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ওয়াসার কাছ থেকে খাল, নর্দমা ও পাম্প স্টেশনের দায়িত্ব নেয় ডিএসসিসি। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটির আছে ৯৯৯ কিলোমিটার নর্দমা। এছাড়া বক্স কালভার্ট আছে ছয় কিলোমিটার। খাল আছে পাঁচটি। পরে গত ২ জানুয়ারি পান্থপথ বক্স কালভার্ট পরিষ্কারের কাজ শুরু করে ডিএসসিসি। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বক্স কালভার্ট এবং জিরানী খাল, মান্ডা খাল, কালুনগর খাল, শ্যামপুর খাল থেকে বর্জ্য অপসারণ এবং দুই পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালায় সংস্থাটি। এখন এসব খালে পানি প্রবাহ সৃষ্টি হয়েছে। নর্দমাগুলো যথাসময়ে পরিষ্কার করতে না পারায় অনেক সড়কেই পানি জমছে। ডিএসসিসির এক প্রকৌশলী জানান, সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়- এমন ২৫ জায়গা চিহ্নিত করে ১০৩ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে ডিএসসিসি। জায়গাগুলোতে বৃষ্টির পানি সচল এবং বর্ষা মৌসুমে প্রতিটি নর্দমা পরিষ্কার রাখতে ওয়ার্ডভিত্তিক আরও ৩৬ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হতে আরও দুই থেকে তিন বছর সময় লাগবে। নগরবাসীকে এ সময়টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
×