ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জড়িত ইউএনওর শ্যালক ॥ প্রজেক্ট সুপারভাইজার গ্রেফতার

আশ্রয়ণের ঘর দেয়ার নামে বাণিজ্যের অভিযোগ

প্রকাশিত: ২১:০২, ১২ জুন ২০২১

আশ্রয়ণের ঘর দেয়ার নামে বাণিজ্যের অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ১১ জুন ॥ হরিপুর উপজেলা ইউএনওর শ্যালক তানবিন হাসান মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিভিন্ন অসহায় মানুষকে দেয়ার নাম করে প্রায় দুই লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেই অসহায় মানুষকে ঘরবাড়ি দিতে না পারায় বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী ইউএনওর শ্যালক ও তার সহযোগীকে আটক করে। তবে কৌশলে ইউএনওর শ্যালক পালিয়ে গেলে গ্রামবাসী তার সহযোগী প্রকল্পের সুপারভাইজার আবুল কালাম আজাদকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। এ ঘটনায় জেলাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। জানা যায়, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প দুই এর আওতায় দ্বিতীয় ধাপে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার ভাতুরিয়া রামপুর গ্রামে নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে নয়শ’ ৩৬টি ভূমিহীন পরিবারের স্বপ্নের ঠিকানা। এর মধ্যে পাঁচশ’ ৩৬টি ঘরের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং চারশ’টি ঘর নির্মাণাধীন। আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাইয়ের পর এসব ঘর বা বাড়ি প্রকৃত ভূমি ও আশ্রয়হীনদের মাঝে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদানের নির্দেশ থাকলেও হরিপুরের ভাতুরিয়া রামপুর গ্রামে টাকা ছাড়া কাউকে ঘর দেয়া হচ্ছে না এবং নিম্নমানের কাজ হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠলে এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, হরিপুর উপজেলার ইউএনও আব্দুল করিম তার শ্যালক তানবিন হাসানকে উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি নির্মাণের কাজ তদারকির দায়িত্ব দেন। শ্যালক ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভাতুরিয়া রামপুর গ্রামের সাধারণ মানুষকে বাড়ি দেয়ার নাম করে প্রায় দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। ওই গ্রামের লোকজনের কাছে শ্যালক নিজেকে বড় কর্মকর্তা দাবি করে বাড়ি দেয়ার আশা দিয়ে ২০/২৫ জন ব্যক্তির কাছে ১৫/২০ হাজার টাকা করে আদায় করে। এসব টাকা শ্যালকের হয়ে আদায় করে তারই সহযোগী প্রকল্পের সুপারভাইজার আবুল কালাম আজাদ। কিন্তু প্রথম ধাপে বাড়ি দিতে না পারায় এলাকাবাসী শ্যালকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। গত মঙ্গলবার রাতে শ্যালক তানবিন ও তার সহযোগী রামপুর গ্রামে গেলে গ্রামের লোকজন তাদের টাকা ফেরত দেয়ার জন্য অবরুদ্ধ করে। এক পর্যায়ে সুযোগ বুঝে তানবিন সেখান থেকে পালিয়ে যায়। আর তানবিনের সহযোগী আবুল কালাম আজাদকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় এলাকাবাসী। রামপুর গ্রামের ভুক্তভোগী জহুরা খাতুন বলেন, আমি ঘর পাওয়ার আশায় আমার শেষ সম্বল জমিটুকু বিক্রি করে ইউএনওর শ্যালককে ১৫ হাজার টাকা দিয়েছি। কিন্তু উনি ঘর দিতে টালবাহানা করে তাই উনার সহযোগীসহ উনাকে আটক করি আমরা। ওই গ্রামের সফিউর রহমান বলেন, আমাকে ইউএনওর শ্যালকের সহযোগী আবুল কালাম আজাদ ঘর দিতে চায়। তার বদলে আমার কাছে ৩০ হাজার টাকা চায়। কিন্তু আমি অত টাকা কোথায় পাব তাই আমার হালের গরু“ বিক্রি করে ২৫ হাজার টাকা দেই। এখন আমার গরুও নাই আমাকে ঘরও দিচ্ছে না। হরিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমজাদ আলী বলেন, এই উপজেলায় যতগুলো ঘরের কাজ হয়েছে সবগুলো নিম্নমানের। প্রধানমন্ত্রীর উপহার নিয়ে এমন অবহেলা একদমই ঠিক নয়। এছাড়াও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নেয়ার জন্য মোটা অঙ্কের টাকাও দিতে হচ্ছে শুনেছি আমি। হরিপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ এস এম আওরঙ্গজেব বলেন, মঙ্গলবার রাতে খবর পেয়ে রামপুর গ্রামে গিয়ে আটক আবুল কালাম আজাদ নামে একজনকে উদ্ধার করা হয়। বুধবার রামপুর এলাকার সাইদুর রহমান বাদী হয়ে আটক আবুল কালাম আজাদের নামে টাকা আত্মসাতের মামলা করে। মামলায় বাদী উল্লেখ করে আবুল কালাম আজাদ ইউএনওর শ্যালক তানবিন হাসানের সহযোগী হিসেবে কাজ করে এবং মঙ্গলবার এলাকাবাসী দুই জনকেই আটক করেছিল। কিন্তু তানবিন পালিয়ে যায়। তাকে আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে। পরে আজাদকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়। এ বিষয়ে হরিপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল করিম বলেন, আইন সকলের জন্য সমান। অপরাধী যে কেউ হোক না কেন তদন্ত সাপেক্ষে তার যা শাস্তি তাকে পেতেই হবে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দের নামে বাণিজ্য ও প্রতারণাকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হলে প্রকৃত ভূমি ও আশ্রয়হীনেরাই সুফল লাভ করবেন এমনটাই মনে করে সচেতন মহল।
×