ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

তৃতীয় তরঙ্গের পূর্বাভাস

প্রকাশিত: ২০:২১, ১২ জুন ২০২১

তৃতীয় তরঙ্গের পূর্বাভাস

পৃথিবী নামক এই গ্রহে করোনা মহামারী দ্বিতীয় তরঙ্গের অপ্রতিবন্ধ সংক্রমণ বিস্তার-নির্দয় প্রাণ সংহার সকল বিশ্ববাসীর আর্থ-সামাজিক-মনস্তাত্ত্বিকতা পুরো মানব সভ্যতাকে কঠিন এক ক্রান্তিকালের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। দারিদ্র্য-বেকারত্ব-মন্দা-দুর্ভিক্ষ মহাসঙ্কটে অযাচিত হওয়ার বিভিন্ন পরিসংখ্যান ও আভাস বিশ্ববাসীর হৃদয়-গভীরে অজানা নির্মম আশঙ্কার গভীর অনুরণন অপরিমেয় অসহায়ত্ব-কাতরতার দৃশ্যপট তৈরি করে চলেছে। আপামর বিশ্ব জনতা ঐহিক কষ্ট-বেদনায় প্রগাঢ় যন্ত্রণাদগ্ধ, ভারাক্রান্ত ও ভীতসন্ত্রস্ত। আগামীতে বিশ্ব কোন প্রক্রিয়ায় এগিয়ে কোন ধরনের পন্থা অবলম্বনে কিভাবে এবং কখন এই মহামারী পরিত্রাণে মুক্ত ধরিত্রীর নবতর আবিষ্কারে স্পন্দিত হবে তা নিয়ে নানা আরোপিত ধারণা-সংশয়-চিন্তনে বিপন্ন পুরো বিশ্ব। চলমান বিশ্ব মহামন্দার গতিপ্রবাহ সামগ্রিক মানবজীবনে বিরূপ প্রভাব উত্তরণ ও সমুদয় বিশ্ব ব্যবস্থার প্রকৃতি-পরিধি নির্ধারণে উন্নত-অনুন্নত দেশসমূহের বৈশ্বিক সমীকরণ মানবিক চেতনায় কতটুকু সমৃদ্ধ হয়ে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখবে, এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা-গবেষণার শেষ নেই। ইতোমধ্যে মুক্তির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার সরকার করোনা অতিমারীর ভয়ঙ্কর দুঃসময়ে মহান সংসদে দ্বিতীয় দফায় বাজেট পেশ করেছে। প্রস্তাবিত বাজেটকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল-ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে গণমুখী-গণবিরোধী-উচ্চাভিলাষী-বাস্তবায়ন অনুপোযোগী-ব্যবসাবান্ধব-দারিদ্র্য দূরীকরণে ধোঁয়াশা নির্দেশনা নানা বিশেষণে বাজেট পর্যালোচনায় মুখর। করোনা তৃতীয় তরঙ্গের পূর্বাভাস বিবেচনায় দেশবাসীর আর্থ-সামাজিক সামগ্রিক উন্নয়নে ক্রমবর্ধমান বাজেটের আকার এবং পরিকল্পিত কর্মকৌশল প্রায়োগিক কার্যকারিতায় কালক্রমে অবশ্যই এর সুফল দৃশ্যমান হবে; সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে দৃঢ়ভাবে তা বলা যায়। সম্প্রতি সংক্রমণের হার কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও মৃত্যুর হার সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে বলে ধারণা করা যেতে পারে। টিকার প্রথম ডোজ সুচারুরূপে প্রয়োগ ব্যবস্থা সুসম্পন্ন ও দ্বিতীয় ডোজের ক্ষেত্রে ক্রয়-সংগ্রহ-ব্যবহারে সরকারের নানামুখী উদ্যোগ সঙ্কট উত্তরণে আশার সঞ্চার করেছে। টিকা বিক্রয়-সরবরাহে যুক্তরাষ্ট্রসহ পাঁচটি দেশের প্রতিশ্রুতি এবং দেশে এর উৎপাদনের পদক্ষেপ সমগ্র নাগরিক সমাজকে নিগূঢ় মনোবলে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে উজ্জীবিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আডানম গেব্রিয়াসিস নিকট অতীতে করোনা সংক্রমণের উর্ধমুখী হার নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতানুসারে, ‘১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে ৯ মাস লেগেছিল, ২০ লাখ পৌঁছাতে লেগেছিল ৪ মাস। কিন্তু এখন ৩ মাসে মৃত্যু ৩০ লাখে পৌঁছে গেছে। তাই শিগগির সবাইকে সাবধান হতে হবে এবং বৈষম্য না করে পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে।’ ভাইরাসের কারণে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৭ কোটি আক্রান্ত ও সাড়ে ৩৭ লাখের বেশি মৃত্যুবরণের প্রেক্ষাপটে যারপরনাই ক্ষতবিক্ষত পুরো ধরিত্রী। একইসঙ্গে ‘হু’র প্রধান সুখের বাণী উচ্চারণ করেছেন এইভাবে যে, ‘ধারাবাহিক ও ন্যায্যতার সঙ্গে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে কয়েক মাসের মধ্যেই মহামারীকে নিয়ন্ত্রণে আনার মতো হাতিয়ার আমাদের আছে।’ জীবন-জীবিকার দোলাচলে গণমানুষের স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার প্রবণতা দ্বিতীয় তরঙ্গকে যেভাবে প্রভাবিত করেছে অনুরূপ চলমান প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মতানুসারে বাংলাদেশে তৃতীয় তরঙ্গের অদ্ভুত আবহ দেশকে একেবারে লন্ডভন্ড করে ছাড়বে। যথাসময়ে এই সম্পর্কে পরিপূর্ণ সচেতন হয়ে যথার্থ ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হলে বেসামাল ও অরাজক পরিস্থিতির মোকাবেলা শুধু দুরূহ নয়, অসম্ভব হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রাসঙ্গিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রদত্ত ২০ এপ্রিলের বক্তব্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি নতুন প্রত্যয়গত বিশ্লেষণে কভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে ‘বৈশ্বিক গণপণ্য’ অভিধায় ভূষিত করে বিশ্ববাসীর কাছে যে আহবান জানিয়েছেন তা শুধু যুগান্তকারী নয় পরিশুদ্ধ মানবিক প্রচেতায় বহুমুখী সমস্যা সমাধানে প্রণিধানযোগ্য নির্দেশনা হিসেবেই বিবেচ্য। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ন্যায়সঙ্গতভাবে ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে প্রত্যেকের ভ্যাকসিন এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের চাহিদা মেটাতে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্তৃত্বে বিশ্বাস করে। ডব্লিউএইচও, জিএভিআই এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থা অবশ্যই সদস্য রাষ্ট্রের অধিকারকে সমর্থন করবে এবং ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে। ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী দেশগুলো সর্বজনীন ভ্যাকসিনের কভারেজ অর্জনের লক্ষ্যে অন্যদেরও ভ্যাকসিন তৈরি করতে সহায়তা করা উচিত।’ দেশরত্ন শেখ হাসিনার এই অপরিসীম বিচক্ষণ ও দূরদর্শী বক্তব্য বিশ্বনেতারই যথার্থ পরিচায়ক। এটি সর্বজনবিদিত যে, বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু একটি অসাম্প্রদায়িক মানবিক, আধুনিক ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নে জীবন উৎসর্গ করেছেন। দীর্ঘকাল নিপীড়িত, নির্যাতিত ও অবহেলিত বাংলাদেশ নামক এই জনপদে মাটি ও মানুষের অধিকার আদায় এবং ভাগ্য পরিবর্তনে ক্ষুন্নিবৃত্ত স্বাধীনতা সংগ্রাম ও অভিষ্ট মুক্তির লক্ষ্যে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী বিশ্বখ্যাত আইনজীবী ম্যাকব্রাইডের মতে, ‘শেখ মুজিব বুঝতে পেরেছিলেন স্বাধীনতা শুধু পতাকা পরিবর্তন ও দেশের নতুন নামকরণ বোঝায় না, তাঁর দৃষ্টিতে স্বাধীনতার অর্থ হলো সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য ও নীতিবোধসম্পন্ন আদর্শবাদ।’ মৃত্যুঞ্জয়ী বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ৩০ জুন নতুন কর আরোপ ছাড়াই ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের জন্য ৭৫২ কোটি ৩৫ লাখ টাকার পেশকৃত বাংলাদেশের প্রথম বাজেটে রাজস্ব এবং উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয় যথাক্রমে ৪৩৪ কোটি ৫ লাখ এবং ৩১৮ কোটি ৩ লাখ টাকা। ১৯৭৩-৭৪ সালের অর্থবছরে জন্য বাজেট ছিল ৮৩০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং এই বাজটে রাজস্ব ও উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয় যথাক্রমে ২৯৫ কোটি ৩০ লাখ এবং ৫২৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। ১৯৭৪-৭৫ সালে শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দসহ রাজস্ব এবং উন্নয়ন ব্যয় যথাক্রমে ৪৭০ কোটি ২৩ লাখ টাকা এবং ৫২৫ কোটি টাকা সর্বমোট ৯৫৫ কোটি ২৩ লাখ টাকার ব্যয় প্রস্তাব করা হয়। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কল্যাণ ও উন্নয়নমুখী ১৯৭৫-৭৬ সালের বাজেটের পরিমাণ ছিল সর্বমোট ১৫৪৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এ বাজেটে রাজস্ব ও উন্নয়ন ব্যয় ছিল যথাক্রমে ৫৯৯ কোটি ১৯ লাখ এবং ৯৫০ কোটি টাকা। সুদূরপ্রসারী গণতান্ত্রিক-সমাজতান্ত্রিক মানবিক ও উন্নত মানবসম্পদসমৃদ্ধ জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় উল্লিখিত বাজেটসমূহের ক্রমবর্ধমান ব্যাপ্তি সহজে অনুমেয়। এভাবেই পরিকল্পিত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা বিনির্মাণে অসাধারণ জ্ঞান ও যুক্তিনির্ভর জাতির ভবিষ্যত নির্ধারণে যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সমতুল্য উদ্দেশ্য ও জনকল্যাণ নিশ্চিতকল্পে ২০২১-২২ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটে সামাজিক অবকাঠামো, মানবসম্পদ, সামাজিক নিরাপত্তা, কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন, যোগাযোগ ও অবকাঠামো, বিদ্যুত ও জ্বালানি, করোনা মোকাবেলা, স্বাস্থ্য খাতের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ যথাক্রমে ১ লাখ ৭০ হাজার ৫১০ কোটি, ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৪৭ কোটি, ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি, ৭৪ হাজার ১০২ কোটি, ৬৯ হাজার ৪৭৪ কোটি, ২৭ হাজার ৪৮৪ কোটি, ১০ হাজার কোটি, ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে উল্লিখিত খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩৬, ১ লাখ ৪০ হাজার ২২২, ৯৫ হাজার ৫৭৪, ৬৯ হাজার ৫৫৩, ৬১ হাজার ৪৩৫, ২৬ হাজার ৭৫৮, ১০ হাজার ও ২৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। ২০২১-২২ বাজেটে পরিলক্ষিত হয় যে, রাজস্ব খাতে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকার অনুপাতে অনুদান ব্যতীত মোট রাজস্ব ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি বাজেটের উৎস হিসেবে ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে যথাক্রমে ৭৬ হাজার ৪৫২ ও ৩২,০০০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত হয়েছে এবং বৈদেশিক ঋণ ও অন্যান্য উৎস থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে যথাক্রমে ৯৭ হাজার ৭৩৮ ও ৫ হাজার ১ কোটি টাকা। জাতীয় কবি নজরুলের ‘বিশ্বাস ও আশা’ কবিতা নিবিড়ভাবে উপলব্ধি করেই সম্ভবত বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সুরক্ষার সকল নির্দেশনার কার্যকর প্রতিপালন এবং জীবন-জীবিকার দৈনন্দিন ভারসাম্য রক্ষার্থে সাহসী বাজেট প্রণয়ন করেছেন। কবিতার কয়েকটি পঙক্তি উপস্থাপনে বাজেটকে গ্রহণযোগ্য করার প্রত্যয় ঘোষিত হোক- ‘বিশ্বাস আর আশা যার নাই, যেয়ো না তাহার কাছে/নড়াচড়া করে, তবুও সে মড়া, জ্যান্তে সে মরিয়াছে।/শয়তান তারে শেষ করিয়াছে, ঈমান লয়েছে কেড়ে,/পরান গিয়াছে মৃত্যুপুরীতে ভয়ে তার দেহ ছেড়ে।/থাকুক অভাব দারিদ্র্য ঋণ রোগ শোক লাঞ্ছনা,/যুদ্ধ না ক’রে তাহাদের সাথে নিরাশায় মরিও না।/ভিতরে শত্রু ভয়ের ভ্রান্তি মিথ্যা ও অহেতুক/নিরাশায় হয় পরাজয় যার তাহার নিত্য দুখ।’ অনুদান ও ঋণনির্ভর ঘাটতি বাজেটের অনুকূলে ভবিষ্যতে সরকারের কর্মপরিকল্পনার যথার্থ প্রক্রিয়া অবশ্যই প্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা দুঃসাধ্য হবে বলে মনে হয় না। বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই বাজেট প্রণয়ন ও উপস্থাপনে যে চারটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য, তা হলো- জাতীয় ব্যয় ও আয়ের প্রাক্কলন, ঘাটতির পরিমাণ এবং তা পূরণে যৌক্তিক পন্থার অনুসন্ধান ও পরিকল্পনা। সাম্প্রতিক জাতীয় বাজেট পর্যালোচনায় দেখা যায় ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৬১ হাজার কোটি টাকা। ২০১৯-২০ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকায়। ২০২০-২১ সালে ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা এবং ২০২১-২২ সালের বাজেটের আকার হয় ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর পরিমাণ ছিল ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নে প্রায় নব্বই ভাগই ছিল নিজস্ব অর্থায়ন। একই অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮.১৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ছিল ছয় শতাংশের নিচে। ২০২১-২২ সালের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর পরিমাণ ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির হার নির্ধারণ করা হয় যথাক্রমে ৭.২ ও ৫.৩ শতাংশ। বাজেটে স্বাস্থ্য-কৃষি-শিক্ষা-কর্মসংস্থান-সামাজিক নিরাপত্তা সর্বোচ্চ প্রাধান্য পেলেও পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের সার্থকতা নিয়ে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হবেই। কালো টাকা সাদা করার মধ্য দিয়ে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির বক্তব্য প্রকৃতপক্ষে টেকসই উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও দুর্নীতিকে পাকাপোক্ত করার দুর্বৃত্তায়নের কোন অপকৌশল প্রকাশ পাচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। অতীতে এই অর্থ ব্যবস্থার সুবিধাভোগীরা দেশের সার্বিক উন্নয়নে কি ধরনের ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে তার পূর্ণাঙ্গ নিরীক্ষণ ও মূল্যায়ন অপরিহার্য। অন্যথায় এই দুষ্ট অপসংস্কৃতি পুরো দেশের অর্থনীতিকে গিলে খাওয়ার প্রাবল্যকে অধিকতর ক্ষিপ্রমান করার বিষয়টিও গভীর বিবেচনার দাবি রাখে। রাসায়নিক অস্ত্র বা অণুজীব আক্রমণ, যুদ্ধসহ যে কোন মানবতাবিরোধী মানবরূপী দানবের অশুভ হিংস্র শক্তির কাছে বিশ্বমানবতা পরাজিত হবে, ধ্বংস হবে বিশ্বসভ্যতা- তা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রায় প্রতিটি বক্তব্যে এ ধরনের জ্ঞাপিত উচ্চারণ নিঃসন্দেহে মানবিক ও মনুষ্যত্বের ত্রৈকালিক বস্তুনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গি সৃজনে অনবদ্য ভূমিকা পালন করে চলেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা, মানবসম্পদ ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাজেট প্রাক্কলন অনুমেয় অর্থনীতির পুনরুদ্ধার, কর্মসংস্থান এবং দুঃসময়ে সকল দুর্যোগকে মোকাবেলা সর্বোপরি ২০২৪ সালে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা চূড়ান্তকরণের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে প্রতীয়মান হওয়ার প্রত্যাশা পোষণ করি। সমকালীন সমাজে করোনা অতিমারীর চেয়েও ভয়াবহ কিশোর গ্যাং-টিকটক-এলএসডির মতো নৃশংস মাদক ব্যবহার, হত্যা-আত্মহত্যা-শিশু ও নারীর প্রতি সহিংসতা, ভূমি-নদী-নালা-খাল-বিল-জলাশয়, অবৈধ-অনৈতিক পন্থায় লবিং-তদবির বাণিজ্য বিশেষ করে ৮ জুন, ২০২১ মহামান্য হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ অনুসারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অপব্যবহার করে ব্যক্তিস্বার্থে চরিতার্থে অপকর্মের রুদ্ধতা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে জনজীবনে বাজেটের ইতিবাচক প্রতিফলন ঘটবে না। দেশ ধ্বংসের পিছনে ছদ্মবেশী অশুভ-অন্ধকার শক্তিকে পরাভূত করার লক্ষ্যে সামরিক- বেসামরিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত প্রয়াস এবং যথোপযুক্ত কর্ম প্রণোদনা বাজেটে অন্তর্ভুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
×