ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অনার্সে ফেলসহ দ্বিতীয় শ্রেণী পেয়েও শিক্ষক হলেন অধ্যাপকের ছেলে

প্রকাশিত: ২৩:৩৫, ১১ জুন ২০২১

অনার্সে ফেলসহ দ্বিতীয় শ্রেণী পেয়েও শিক্ষক হলেন অধ্যাপকের ছেলে

রাবি সংবাদদাতা ॥ দুর্নীতি ও অনিয়মের দায়ে অভিযুক্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিদায়ী উপাচার্য আবদুস সোবহান শেষ কার্য দিবসে ৯ শিক্ষকসহ ১৩৮ জনের বিশাল অবৈধ নিয়োগ দিয়ে গেছেন। গত ৬ মে দেয়া ত্রæটিপূর্ণ ওই নিয়োগে ইন্দ্রনীল মিশ্র নামের এক প্রার্থী অনার্সে এক বিষয়ে ফেলসহ দ্বিতীয় শ্রেণী পেয়েও শিক্ষক পদে চাকরি পেয়েছেন। তার পিতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ায় ভর্তি পরীক্ষাতে চান্স না পেয়ে তিনি ওয়ার্ড কোটায় ভর্তি হয়েছিলেন বলেও জানা যায়। এমন কাণ্ডে হতবাক ও ক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। নিয়োগ পাওয়া ইন্দ্রনীল মিশ্রর ফলাফল প্রতিবেদকের হাতে পৌঁছেছে। ফলাফলে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু হল থেকে ০৬১১৫৬২২ রোল নম্বরধারী ইন্দ্রনীল মিশ্র অনার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণী অর্জন করতে পারেননি বরং দ্বিতীয় শ্রেণী পেয়ে যে ১৪ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে, তার মধ্যে ইন্দ্রনীল মিশ্র মেধাক্রম অনুযায়ী রয়েছেন দশম স্থানে। শুধু তাই নয়, তিনি-ই একমাত্র ছাত্র যিনি অনার্সে ৪০৩ নম্বর কোর্সে ফেল করেছিলেন। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর-নবেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত বিএসসি (সম্মান) ফাইনাল পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয় শ্রেণী পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ফলাফল খারাপ হওয়ায় এমএসসিতে থিসিস গ্রæপে যাওয়ারই সুযোগ পাননি তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইন্দ্রনীল মিশ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন এ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পাননি। পিতা শিক্ষক হওয়ায় তিনি ‘ওয়ার্ড কোটায়’ ভর্তি হয়েছিলেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। তার পিতা অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন মিশ্র ইতিহাস বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক। বিদায়ী উপাচার্য আবদুস সোবহানের সঙ্গে অধ্যাপক চিত্তরঞ্জনের গভীর সখ্যতা আছে বলে জানান একাধিক শিক্ষক। এমন একজন ছাত্রকে বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করছেন স্বয়ং বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এমদাদুল হক। তিনি বলেন, বিভাগে নিয়োগের জন্য সার্কুলার দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই সার্কুলার ভিত্তিতে মৌখিক পরীক্ষা না নিয়েই এমন একজনকে নিয়োগ দেয়া হল যে কোনভাবেই শিক্ষক পদের যোগ্য নয়। উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখছে। যদি এটা বাতিল হয় তবে বিভাগের জন্য যেমন মঙ্গল হবে, সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও মঙ্গল হবে। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেছেন, যার বাবা বিশ্ববিদ্যালের একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক, সব মিলিয়ে দেড় লাখের কাছাকাছি মাসিক বেতন পান, তাকে বিদায়ী উপাচার্য নিয়োগ দিয়েছে মানবিক কারণে ! এটা খুবই লজ্জাকর বিষয়। ক্ষোভ প্রকাশ করে একাধিক শিক্ষার্থী বলেছেন, বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ায় কোটায় ভর্তি হলেন। তারপর ফেলসহ অনার্সে দ্বিতীয় শ্রেণী পেয়েও শিক্ষক হচ্ছেন। এটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নাকি পারিবারিক বিশ্ববিদ্যালয় ? জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, এমন প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া বিস্ময়কর। এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেখভাল করছে। তাদের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আমরা পরবর্তীতে তাদের যোগদান করতে দেব কিনা সেটা জানাতে পারব।
×