ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় আরও ১২ জনের মৃত্যু

রামেক হাসপাতালে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে রোগীর স্বজনরা

প্রকাশিত: ২৩:১৮, ১১ জুন ২০২১

রামেক হাসপাতালে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে রোগীর স্বজনরা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ মহামারী করোনার ‘হটস্পট’ হয়ে উঠেছে এখন রাজশাহী। প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা আর পাল্লা দিয়ে ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। মানুষের অসচেতনতায় দমানো যাচ্ছে না রাজশাহীতে করোনার থাবা। করোনা সংক্রমিত রোগীর স্বজনদের হাসপাতালে অবাধ যাতায়াত রাজশাহীতে করোনা ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। সর্বশেষ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে একদিনে আরও ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে রাজশাহীর নয়জন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনজন। বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বিভিন্ন সময় তারা মারা যান বলে জানান হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাঃ সাইফুল ফেরদৌস। এ নিয়ে চলতি মাসের ১০ দিনেই রাজশাহীতে করোনায় প্রাণ হারালেন ৯২ জন। রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক জানান, সর্বশেষ মৃত ১২ জনের মধ্যে সাতজন করোনা শনাক্ত হওয়ার পর মারা যান। বাকিরা মারা যান নমুনা পরীক্ষার আগে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। আর করোনা শনাক্ত সাতজনের মধ্যে রাজশাহীর পাঁচজন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুইজন। ডাঃ সাইফুল জানান, গত ১০ দিনে এ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেছেন ৯২ জন। এর মধ্যে ৫৬ জনই মারা গেছেন করোনা শনাক্ত হওয়ার পর। বাকিরা উপসর্গ নিয়ে মারা যান। উপ-পরিচালক ডাঃ সাইফুল জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন ৪২ জন। এর মধ্যে রাজশাহীর ১৮, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৬, নওগাঁর ৭, নাটোরের একজন। একই সময় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৫ জন। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত রামেকের করোনা ওয়ার্ডের ২৭১ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি রয়েছেন ২৯০ জন। এর মধ্যে রাজশাহীর ১৪২, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১১১, নওগাঁর ১৫, নাটোরের ১৫, পাবনার ৩, কুষ্টিয়ার ৩ জন ও চুয়াডাঙ্গার একজন। আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন ১৮ জন। এদিকে মহামারী করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় রাজশাহী চরম হটস্পট হয়ে উঠলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদাসীন সাধারণ মানুষ। গণপরিবহনে চলাফেরার ক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার হচ্ছে না। দূরত্ব মানা হলেও ছোট-ছোট যানবাহনগুলোয় এসবের তোয়াক্কা করছে না কেউ। ঈদের পর থেকে সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনববাগঞ্জ থেকে বিস্তার লাভ করে এখন রাজশাহীতে মহামারীর ছোবল ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এখন শুধু করোনার থাবা শহরে নয়, ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামাঞ্চলেও। গোদাগাড়ী, বাঘা, চারঘাট ও বাগমারায় বিস্তার লাভ করেছে করোনা। এর মধ্যে একদিনেই বাগমারায় করোনায় মারা গেছেন ৫ জন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানুষের শারীরিক অবস্থা বুঝে নিজ উদ্যোগে করোনা পরীক্ষা করা উচিত। কিন্তু বাস্তবে সেটি হচ্ছে না। ফলে মহামারী করোনায় প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এদিকে করোনার ‘নতুন হটস্পট’ রাজশাহীতে আবার বেড়েছে সংক্রমণের হার। বুধবার দুটি ল্যাবে রাজশাহীর ৪০৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ১৬৯ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে। রাতে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল দুটি পিসিআর ল্যাবের নমুনা পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। রামেক হাসপাতাল পরিস্থিতি \ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনার নির্ধারিত বেডের চেয়ে এখন রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। এ কারণে অনেকটাই অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে হাসপাতাল। সংক্রমিত রোগীর স্বজনদের হাসপাতালে অবাধ যাতায়াত রাজশাহীতে করোনা ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা বন্ধ করে সেসব ওয়ার্ডে করোনা ও উপসর্গে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ফাঁকা না থাকায় আইসিইউ বেডের জন্য বেড়েছে হাহাকার। হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীদের চেয়ে তিনগুণ বেশি স্বজন হাসপাতালে অবস্থান করছে। এরা নিয়মিত হাসপাতালসহ আশপাশের এলাকায় ঘোরাফেরা করছেন। এতে রাজশাহীতে সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বেড়ে গেছে। ভ্রাম্যমাণ র‌্যাপিড এ্যান্টিজেন টেস্টে দেখা গেছে নগরীর ১৩টি মোড়ের মধ্যে হাসপাতাল এলাকা ল²ীপুর ও জনবহুল সাহেববাজার এলাকায় সংক্রমণ বেশি। সর্বশেষ রামেক হাসপাতালের দেয়া তথ্যমতে, করোনা ওয়ার্ডের ২৭১ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি রয়েছেন ২৯০ জন। ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ১৩৩ জন করোনা পজিটিভ। অন্যদের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন সুবিধা সমৃদ্ধ আরও একটি ওয়ার্ড করোনা রোগীদের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। ভর্তি রোগীদের প্রত্যেকেরই অক্সিজেন লেভেল কম থাকায় তাদের জন্য অক্সিজেন সঙ্কুলান করতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম যেসব ওয়ার্ডে চালু আছে সেসব ওয়ার্ড করোনা রোগীদের জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় প্রতিদিন অন্তত ৮ হাজার লিটার অক্সিজেন প্রয়োজন পড়ছে। নওগাঁয় নতুন আক্রান্ত ৯৪ জন \ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, নওগাঁয় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৪ জন। বৃহস্পতিবার দুপুরে সিভিল সার্জন ডাঃ এবিএম আবু হানিফ জানিয়েছেন, মোট ৩৭২ ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। দিনাজপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান আক্রান্ত \ স্টাফ রিপোর্টার জানান, নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আতাউর রহমান (৬০) করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। উখিয়ায় স্বাস্থ্যবিধি তোয়াক্কা করছে না অর্ধশতাধিক এনজিও \ সংবাদদাতা জানান, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় উখিয়ার রাজাপালং চার ওয়ার্ডকে রেড জোন ঘোষণা করা হলেও এই নির্দেশ মানছে না কিছু এনজিও। তারা গাড়িতে গাদাগাদি করে বসে রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মস্থলে যাচ্ছে প্রতিদিন। খুলনা করোনা হাসপাতালে সিট খালি নেই \ স্টাফ রিপোর্টার জানান, খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে রোগীর চাপ অস্বাভাবিক বেড়েছে। কোন সিট খালি নেই। বেড ফাঁকা না হলে নতুন রোগী ভর্তি নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ১০০ শয্যার এ হাসপাতালে ৩০টি বেড বাড়ানো হয়েছে। এখন তার সব কয়টিতে রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বেড ফাঁকা হওয়া সাপেক্ষে নতুন রোগী ভর্তি নেয়া হচ্ছে। ঝালকাঠিতে আরও পাঁচজন আক্রান্ত \ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ঝালকাঠিতে করোনায় বৃহস্পতিবার আরও পাঁচজন আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে ঝালকাঠি জেলায় ৫৭২৫টি নমুনা পরীক্ষা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এর মধ্যে ১৩৬৮ জন পজিটিভ ও ৪১৭৮ জন নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেছে। সুস্থ হয়েছে ১২৯৫ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩১ জনের। বর্তমানে ৩৪ জন হোম ও চারজন হাসপাতাল আইসোলেশনে রয়েছে। ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডাঃ রতন কুমার ঢালী এই তথ্য প্রদান করেন। বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা উপসর্গ নিয়ে সুলতান মাহমুদ (২৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার রাত ৯টায় বিরামপুর হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ওই যুবক। সাতক্ষীরায় লকডাউন সাতদিন বাড়ল ॥ স্টাফ রিপোর্টার সাতক্ষীরা থেকে জানান, জেলার করোনার সংক্রমণ ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্বিতীয় দফায় আরও এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দ্বিতীয় দফায় এই লকডাউন চলবে ১৭ জুন পর্যন্ত।
×