ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নির্মূল কমিটির ওয়েবিনার

তরুণ সমাজকে নিয়ে সাইবার জিহাদ প্রতিহত করুন

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ১১ জুন ২০২১

তরুণ সমাজকে নিয়ে সাইবার জিহাদ প্রতিহত করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাম্প্রতিককালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহারে নানা অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে জঙ্গীগোষ্ঠী। ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে প্রায় তারা জিহাদের ঘোষণা দিচ্ছে। এমন বাস্তবতায় তরুণ সমাজকে নিয়ে সরকারকে এই মৌলবাদীদের সাইবার জিহাদ প্রতিহতের আহ্বান জানানো একাত্তরের দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে। বৃহস্পতিবার বিকেলে ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জঙ্গীদের জিহাদের বিরুদ্ধে তরুণ সমাজ : সরকারের করণীয়’ শীর্ষক এই ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। সভাপতিত্ব করেন নির্মূল কমিটির সভাপতি, লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। ওয়েবিনারে ধারণাপত্র পাঠ করেন নির্মূল কমিটির বহুভাষিক সাময়িকী ‘জাগরণ’-এর যুগ্ম সম্পাদক অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট লেখক মারুফ রসুল। সূচনা বক্তব্যে শাহরিয়ার কবির বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে সকল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং নাগরিক আন্দোলনে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ যে বলিষ্ঠ ইতিবাচক অবদান রেখেছে তা প্রতিবেশী অন্য কোন দেশে সেভাবে দৃশ্যমান নয়। এই তরুণরা শুধু স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী আন্দোলনে, একাত্তরের গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলনে নেতৃত্বই দেয়নি, জীবনও দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে তরুণরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে গণঅভ্যুত্থান ঘটাতে পারে। সেটা আমরা ২০১৩ সালে বাংলাদেশের শাহবাগে দেখেছি; সমসাময়িক কালে যুক্তরাষ্ট্র, তিউনিসিয়া, মিসর ও তুরস্কে দেখেছি। অন্যদিকে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেই মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গী মৌলবাদী সংগঠন দায়েশ বা আইএসআইএসের জিহাদী অভ্যুত্থান দেখেছি, যার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে হলি আর্টিজান ক্যাফের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশে সরকার মাঠ পর্যায়ে জঙ্গীবাদ দমনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য প্রদর্শন করলেও জঙ্গীদের সাইবার জিহাদ মোকাবেলায় তেমন কোন অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়। ইউটিউব ও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জঙ্গী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস কার্যকরভাবে মোকাবেলা করা একা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। এ কাজে সরকারের উচিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ তরুণ সমাজের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা। আমাদের তরুণরা মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হতে পারলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধেও তা পারবে। জনগণের, বিশেষভাবে তরুণ সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া সাইবার যুদ্ধে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির জঙ্গী জিহাদ মোকাবেলা সম্ভব হবে না। সাইবার যুদ্ধ সার্বক্ষণিক। এই যুদ্ধ কোন আন্তর্জাতিক আইন বা কনভেশন মানে না। এই যুদ্ধে যেভাবে সর্বত্র জিহাদের ভাইরাস ছড়ানো হচ্ছে তার ফলে ইরাক ও সিরিয়ার মতো ভবিষ্যতে বিশ্বে বহু গৃহযুদ্ধ ও গণহত্যা সংঘটিত হতে পারে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আমাদের জন্য খুবই জরুরী। বহু দেশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সম্পর্কে আইন তৈরি করেছে। আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত ফেসবুক, ইউটিউব মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এসব মাধ্যমের বিভিন্ন মৌলবাদী পোস্ট সম্পর্কে রিপোর্ট করলে তারা বলে, আমরা আমাদের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলি। এটি তো গণতান্ত্রিক অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার। ফেসবুক, ইউটিউবসহ অন্যান্য বিষয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে স্পষ্টভাবে নির্দেশনা দেয়া আছে। আগের চেয়ে ২০২১ সালে এসব মাধ্যমের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ অনেক বেড়েছে। কিন্তু সিঙ্গাপুরের মতো নিজেদের আইন অনুযায়ী এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম চালানোর পর্যায়ে এখনও পৌঁছতে পারিনি। এক্ষেত্রে আমরাও সিঙ্গাপুরের মতো কঠোর আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাইবার জিহাদের কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বর্তমান এই যুদ্ধ রাজনৈতিক যুদ্ধ। রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা না করে শুধু রিপোর্ট করে এই সাইবার জিহাদ প্রতিহত করা সম্ভব নয়। আমরা তাদের প্রতিহত করার মতো সুসংগঠিত নই। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে এখনও আমরা ডিজিটাল হতে পারিনি। এজন্য সোশ্যাল মিডিয়াগুলো মনিটরিংয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দক্ষ রাজনৈতিক কর্মীবাহিনী সম্মিলিতভাবে গড়ে তুলতে হবে। অনলাইনের এই রাজনৈতিক যুদ্ধ সম্মিলিতভাবে আমরা না করতে পারলে এক সময় বাংলাদেশ মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে চলে যাবে। কথাশিল্পী ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, সাইবার জগতের মাধ্যমেই বর্তমানে দেশবিরোধী, জঙ্গীবাদী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আমাকে যে ছেলেটি আক্রমণ করেছিল, তার সঙ্গে আমি পরবর্তীতে দেখা করেছিলাম। সে আমাকে বলেছিল যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকেই আমার ওপর আক্রমণ করার জন্য উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। তাই জঙ্গী মৌলবাদীদের সাইবার জিহাদ প্রতিরোধে সরকারকে অনুরোধ করি- আপনারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অসাম্প্রদায়িক তরুণ প্রজন্মে সাইবার যোদ্ধাদের ডাকুন। যারা সাইবার জগতে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন, তাদের সুনির্দিষ্ট মতামতের ভিত্তিতে সাইবার জিহাদ মোকাবেলায় কাজ করুন। ধারণাপত্রে মারুফ রসুল বলেন, সারা পৃথিবীতেই সাইবার জগত এতটাই বিস্তৃত হয়ে পড়েছে যে, এখনই যদি এর লাগাম ধরতে না পারলে ভবিষ্যতে তল খুঁজে পাওয়া যাবে না। এজন্য এ বিষয়ে স্বতন্ত্র অধিদফতর রাখা উচিত, যারা কেবল সাইবার জিহাদ মোকাবেলার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের উপস্থিতি নিশ্চিত করবেন এবং এ বিষয়ে আইনী দিকগুলো মোকাবেলা করবেন। ফেসবুক পেজ বা ইউটিউব চ্যানেলের কমেন্ট সেকশন বর্তমানে সাইবার জিহাদের উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র। তাই এ বিষয়ে বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে হবে। পদক্ষেপটি হলো যেহেতু সকল গণমাধ্যমই নিজস্ব ফেসবুক পেজ বা ইউটিউব চ্যানেল নিজেরাই অপারেট করে, তাই তাদের এ বিষয়ে দায়িত্বশীল করে তোলা।
×