ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ১১ জুন ২০২১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ আমাদের আর লজ্জা হলো না। কিছুদিন পরপরই রাজধানী শহর ঢাকাকে বসবাসের অযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নানা সূচক পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে জানাচ্ছে, সারাবিশ্বে বসবাস অযোগ্য শহরের তালিকায় শীর্ষে যে ক’টি শহর, ঢাকা তার একটি। এমন তথ্য গোটা দুনিয়ার কাছে বাংলাদেশকে ছোট করছে। কিন্তু ওই যে বললাম, আমাদের আর লজ্জা হলো না। অধিকাংশ নাগরিকের কোন কাÐজ্ঞান নেই। আইন মানতে নারাজ। বিধির ধার ধারেন না। যার যা খুশি করে অভ্যস্থ। শহরে কত নেতা! কত শত ক্ষমতাধর! পৃথিবীর সব বিখ্যাত শহরে তারা ঘুরে বেড়ান। সন্তানদের সেসব শহরে রেখে বড় করেন। অথচ নিজের শহরটা দুনিয়ার কাছে কেবল ছোটই হচ্ছে। নীতি নির্ধারকদের তাতে কিছু যাচ্ছে বা আসছে না। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের রুচিটাই গড়ে উঠল না আজ পর্যন্ত। স্বাধীনতার বয়স ৫০ বছর হয়ে গেল। দীর্ঘ এ সময়ের মধ্যে রাজধানী শহরটাকে আমরা শুধু নোংরাই করে গেলাম। কোন কাজে, পরিকল্পনায় আজ পর্যন্ত শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করতে পারলাম না। কমিটমেন্ট নেই। ভিশন নেই। মিশন নেই। গোটা শহরটা, চারপাশে তাকালে মনে হয়, ভাগাড়। সড়কের ওপর ময়লা-আবর্জনার স্ত‚প। একটা রাজধানী শহরে হাঁটার উপযোগী ফুটপাথ নেই। ফুটপাথ মানেই খানাখন্দ। ফুটপাথ মানে দখল। ফুটপাথে বসে বা দাঁড়িয়ে মূত্রত্যাগ করে ভাসিয়ে দিয়ে দিব্যি চলে যাচ্ছেন ‘ভদ্রলোকরা।’ ভাবতে অবাক লাগে! ৫০ বছরেও হাঁটার জন্য ফুটপাথ দিতে পারল না কেউ। এ কাজ কি এতই কঠিন? শহরের দেয়ালগুলো পোস্টারে ঢাকা। কী যে নোংরা একটা ছবি। কর্তাব্যক্তিরা প্রতিদিন দেখছেন। দেখতে দেখতে অভ্যস্থ হয়ে গেছেন। রুচিতে আর বাধে না। কী করে সম্ভব? নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বলতে কি আছে ঢাকায়? এভাবে একটি রাজধানী শহর টিকে থাকতে পারে? ঢাকা সরকার ও প্রশাসন পরিচালনার নিয়ন্ত্রণের মূল কেন্দ্র। দুই সিটি কর্পোরেশনে ভাগ করা শহরে আছে দুজন মেয়রও। তারা চেষ্টা করছেন না, তা নয়। তবে দৃশ্যমান কোন পরিবর্তন আসেনি। একই কারণে ঘুচছে না ঢাকার বদনাম। আবারও বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় নাম লিখিয়েছে ঢাকা। সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের শহরের ওপর জরিপ চালিয়ে ১৪০টি শহরের র‌্যাঙ্কিং প্রকাশ করেছে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)। এ তালিকায় ১৩৭ নম্বরে রয়েছে ঢাকা। জরিপ বলছে, তলানিতে থাকা ১০ দেশের শহরের মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ঢাকা। বসবাসযোগ্যতার দিক দিয়ে ১৪০ শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান এখন ১৩৭তম। বসবাস যোগ্যতা পরিমাপ করতে শহরগুলোর মোট পাঁচটি বিষয়কে আমলে নেয়া হয়। মোট নম্বর ছিল ১০০। ঢাকা পেয়েছে ৩৩ দশমিক ৫ নম্বর। শহরের স্থিতিশীলতার দিক থেকে ৫৫, স্বাস্থ্যসেবায় ১৬ দশমিক ৭, সংস্কৃতি ও পরিবেশে ৩০ দশমিক ৮, শিক্ষায় ৩৩ দশমিক ৩ এবং অবকাঠামোতে ২৬ দশমিক ৮ নম্বর পেয়েছে ঢাকা। এর আগে ২০১৯ সালে ঢাকা পেয়েছিল ৩৯ দশমিক ২ নম্বর। এভাবে বহু বছর ধরেই লজ্জায় ডুবছে ঢাকা। এবং আমাদের তাতে কিছু যাচ্ছে বা আসছে না! বস্তি নয় কপাল পুড়েছে গরিবের \ আবারও বস্তিতে আগুন। সোমবার ভোরে লাগা আগুনে পুড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে মহাখালীর সাততলা বস্তি। দরিদ্র-অসহায় মানুষের মাথার উপরে আর কোন ছাদ নেই। সামান্য ঘর, ঘরের ভেতরের মালামাল কিছুই বাঁচানো যায়নি। আগুনে আসলে কপাল পুড়েছে বস্তিবাসীর। এমনিতেই নিঃস্ব তারা। আরও নিঃস্ব হলো। এখন খোলা আকাশের নিচে। কেউ কাঁদছেন। কারও চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। আহারে জীবন! শহরের কিছু মানুষ আরও বড়লোক হচ্ছেন। বিত্তবানের বিত্ত বেড়ে চলেছে শুধু। অন্যদিকে কিছু মানুষ আর মানুষের পরিচয়ে সামনে আসতে পারছেন না। বৈষম্য কেবলই বাড়ছে। কবে দূর হবে এ বৈষম্য? সমতার সমাজ কবে প্রতিষ্ঠিত হবে? কোনদিন কি হবে? সংশয় জাগে বৈকি। প্রামাণ্যচিত্রে মুক্তি ও মানবাধিকার \ মুক্তি ও মানবাধিকার বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্রের একটি বেশ বড়সড় উৎসব। ‘লিবারেশন ডকফেস্ট বাংলাদেশ’ নামে ভার্চুয়াল এ উৎসব আয়োজন করেছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। গত মঙ্গলবার উদ্বোধন করার পর থেকে ঘরে বসেই পৃথিবীর নানা দেশের চলচ্চিত্র দেখা যাচ্ছে। বিনা টিকেটে শুধু রেজিস্ট্রেশন করে উৎসবের ছবি দেখার সুযোগ পাচ্ছেন দর্শক। ডকফেস্টের নবম আসরে ৫১ দেশের মোট ১৬৪ প্রমাণ্যচিত্র দেখানো হবে। প্রতিদিন প্রদর্শিত হবে ৩০টির বেশি প্রামাণ্যচিত্র। এছাড়া অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ আলোচনা। এখনও যারা জানেন না বা যোগ দেননি তাদের জন্য বলি, উৎসবের ওয়েবসাইট িি.িষরনবৎধঃরড়হফড়পভবংঃনফ.ড়ৎম -এ ঢু মারুন। রেজিস্ট্রেশন করে নিন। টানা প্রদর্শনী। যখন সুযোগ পান, দেখুন। উৎসব আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত চলবে।
×