ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শীঘ্রই দেশে করোনা টিকার যৌথ উৎপাদন ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ১১ জুন ২০২১

শীঘ্রই দেশে করোনা টিকার যৌথ উৎপাদন ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনার টিকার আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকে স্থানীয় আবহাওয়ার উপযোগী সহজে সংরক্ষণ ও পরিবহনযোগ্য টিকা চেয়েছে বাংলাদেশ। শীঘ্রই দেশে করোনা টিকার যৌথ উৎপাদন শুরু হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি কর্তৃক ফিলিস্তিনকে জরুরী ওষুধ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যৌথভাবে টিকা উৎপাদনের বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। তবে দেশের কোন্ ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি টিকা তৈরি করবে সেটা সংশ্লিষ্টরা দেখবেন। শীঘ্রই এই সংক্রান্ত ঘোষণা আসবে। যেসব কোম্পানির সক্ষমতা আছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তারা উৎপাদনে যেতে পারে। টিকা উৎপাদনে সফল হলে বাংলাদেশ পরবর্তীতে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে টিকা রফতানি করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ড. মোমেন। তিনি আরও বলেছেন, উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর কাছে টিকার সহায়তা চাইলে যাদের কাছে টিকা আছে, তারা সবাই বলে দেবে। কিন্তু কখন দেবে, সে বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম থেকেই বলে আসছেন, করোনা প্রতিরোধে টিকা যেন সর্বজনীন পণ্য হয় এবং সব দেশের লোকের বৈষম্যহীনভাবে পাওয়া উচিত। এ বিষয়ে আমরা জোরালো বক্তব্য দিয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মোট টিকার ৯৯.৭ শতাংশ আছে ধনী দেশের কাছে। মাত্র ০.৩ শতাংশ গরিব দেশগুলোর কাছে। এজন্য হাহাকার এবং কেউ পাচ্ছে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের কাছে একটি প্রতিবেদন আছে অস্ট্রেলিয়ার মোট লোক সংখ্যা হচ্ছে ২৫ মিলিয়ন। তারা টিকা সংগ্রহ করেছে ৯৩.৮ মিলিয়ন। আমরা তাদের কাছে চেয়েছি। তাদের টিকা দেয়ার জন্য বলেছি। তারা বলেছে দেবে। সবাই বলে দেবে, কিন্তু হাতে আসছে না। যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকা আনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে টিকার জন্য অনুরোধ করেছি। আমাদের দেশে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ প্রথম ডোজ নিয়েছেন। টিকা না পেলে তারা দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারছেন না। আমরা জরুরীভিত্তিতে তাদের কাছে টিকা চেয়েছি। ইতোমধ্যে এক হাজার ৬৫৪ বাংলাদেশী-আমেরিকান হোয়াইট হাউজে একটি পিটিশন করেছে বাংলাদেশের সমস্যার বিষয়ে। আমেরিকানদের বক্তব্য হলো : বাংলাদেশে এই রোগের প্রভাব কম এবং সেজন্য তারা আমাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করছে না বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, আমাদেরকে টিকা দেবে, তবে কবে দেবে সেটি এখনও বলেনি। তাদের কাছে ঘাটতি টিকার চাহিদা মেটাতে এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সহায়তা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বলেছে, তারা এ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অন্যান্য টিকা কোভ্যাক্সের অধীনে দেবে। সহজে ব্যবহারের টিকা চায় বাংলাদেশ ॥ করোনা টিকার আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকে স্থানীয় আবহাওয়ার ‘উপযোগী’ সহজে সংরক্ষণ ও পরিবহনযোগ্য টিকা চেয়েছে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, কোভ্যাক্স থেকে এ বিষয়ে জানতে চাওয়ার পর বাংলাদেশ বলেছে, কোভ্যাক্স থেকে দেয়া টিকা বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী না হলে ম্যানেজ করা কঠিন হয়ে যাবে। বাংলাদেশের জন্য চীনের সিনোফার্ম, সিনোভ্যাক, রাশিয়ার স্পুটনিক ভি এবং যুক্তরাষ্ট্রের জনসন এ্যান্ড জনসনের টিকা উপযোগী বলে স্বাস্থ্য অধিদফতর মনে করে। তিনি জানান, কোভ্যাক্সের চিঠি পাওয়ার পর ইতোমধ্যে তারা টেলিফোনে কথা বলেছেন। শীঘ্রই চিঠি দিয়েও বাংলাদেশের প্রত্যাশার বিষয়গুলো জানিয়ে দেয়া হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, আমরা সেটাই চেয়েছি। বলেছি, তোমরা এমন কিছু দিও না, যেটা আমাদের জন্য সংরক্ষণ করা কঠিন। কোল্ড চেন মেনটেইন করতে আমাদের অনেক টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। সে টাকা কে দেবে। কোভ্যাক্স থেকে ৬ কোটি ডোজের বেশি টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের। এর মধ্যে ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি ১ লাখ ৬২০ ডোজ টিকা গত ১ জুন বাংলাদেশ হাতে পেয়েছে। ফাইজার-বায়োএনটেক ছাড়া বাকি চার কোম্পানির টিকাই সাধারণ রেফ্রিজারেটরের তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়, যা বাংলাদেশের জন্য সুবিধাজনক। কিন্তু ফাইজার-বায়োএনটেকের ওই টিকা সংরক্ষণ করতে হয় হিমাঙ্কের নিচে মাইনাস ৯০ ডিগ্রী থেকে মাইনাস ৬০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে। ফলে এ টিকা সংরক্ষণ করতে আল্ট্রা কোল্ড ফ্রিজারের প্রয়োজন হয়। আর পরিবহনের জন্য থার্মাল শিপিং কনটেনার বা আল্ট্রা ফ্রিজার ভ্যান লাগে। সাধারণ রেফ্রিজারেটরে ২ ডিগ্রী থেকে ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখা হলে এ টিকা ৫ দিন পর্যন্ত ব্যবহারের উপযোগী থাকে। আর রেফ্রিজারেটরের বাইরে ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এ টিকা দুই ঘণ্টা টেকে। অন্যগুলো হলো ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড, রাশিয়ার তৈরি স্পুটনিক-ভি, চীনের সিনোফার্মের তৈরি টিকার বিবিআইবিপি-সিওরভি এবং চীনের সিনোভ্যাক লাইফ সায়েন্সেস কোম্পানির তৈরি ‘করোনা ভ্যাক’। ডাঃ খুরশীদ আলম বলেন, আমরা ফাইজারের টিকা মাইনাস ৭০ ডিগ্রী তাপমাত্রায় রেখেছি। এটা গলানোর জন্য ডাইলুয়েন্ট লাগে। টিকা বানিয়ে তা মানুষের শরীরে দিতে হয়। এটা টেকনিক্যালি আমাদের জন্য ঝামেলা। আমরা বলেছি, মাইনাস ৮০ ডিগ্রী তাপমাত্রায় রাখা, এটাকে গ্রাম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন। অনুন্নত ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোও যাতে করোনার টিকার ন্যায্য হিস্যা পায়, তা নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিøউএইচও) ও গ্যাভির নেতৃত্বে গঠিত কোভ্যাক্স ডবিøউএইচওর অনুমোদন পাওয়া টিকাই দিচ্ছে বিভিন্ন দেশকে।
×