ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রের ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ২১:১৭, ১১ জুন ২০২১

রাষ্ট্রের ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আয়তনের দিক থেকে বিশে^ বাংলাদেশের অবস্থান ৯৩তম, যা বিশে^র মোট আয়তনের দশমিক এক শতাংশের কম। তবে জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশে^ অষ্টম। আয়তনে ক্ষুদ্র হলেও জিডিপির প্রবৃদ্ধির দিক থেকে বাংলাদেশ বিশে^র ৪১তম দেশ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর বিজনেস এ্যান্ড ইকোনমিক রিসার্চ (সিবিইআর) অনুযায়ী এশিয়ার ৪৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৬তম, দক্ষিণ এশিয়ার ভারতের পরেই বাংলাদেশ। ইদানীং মাথাপিছু আয় এবং বিভিন্ন আর্থসামাজিক সূচকে বাংলাদেশ এ অঞ্চলের দেশগুলো থেকে এগিয়ে রয়েছে। কোন্ দেশের অর্থনীতি কত শক্তিশালী তা বিবেচনা করার জন্য ক্রয় ক্ষমতার সমতাকে (পিপিপি) ভিত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। সে হিসেবে বিশে^র ৩১তম বড় অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ। ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ বিশে^র ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। জন্মলগ্নে অনেকের কাছে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র দেশটি বর্তমান বিশে^র কাছে এক বিস্ময় ও উন্নয়নের রোল মডেল। আর এ রাষ্ট্রের ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডর হচ্ছেন রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রিলিফ নিয়ে যে জাতির যাত্রা শুরু হয়েছিল, সে জাতি এখন অন্যকে সঙ্কটের সময় রিলিফ দিতে পারে। ঋণগ্রহীতার তালিকা থেকে বাংলাদেশ এখন উঠে এসেছে ঋণদাতা দেশের কাতারে। ১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশের বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা, যা বর্তমানে (২০২১-২২) ছয় লাখ কোটি টাকার বেশি। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে পুরো বাজেটই ছিল সাহায্যনির্ভর। বর্তমানে রাজস্ব বাজেটের নব্বই ভাগ নিজেদের অর্থায়নে প্রণীত ও বাস্তবায়িত হচ্ছে। বাকি আট ভাগ সহজশর্তে বৈদেশিক ঋণ ও মাত্র দুই ভাগ সাহায্য থেকে আসে। করোনার সময়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার এ অঞ্চলে সর্বোচ্চ। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের তৃতীয় টারমিনাল নির্মাণ, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের মতো মেগা প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে চলেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছে, যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হয়েছে, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে, ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তি হয়েছে, মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্র বিজয় সহজ হয়েছে, বছরে ৩৫ কোটি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হয়েছে, রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে, ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির সুপারিশ লাভ করেছে। একসময় যে দেশকে নিয়ে বিদেশীরা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতেন, এখন তারাই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ও উন্নয়ন নিয়ে প্রশংসা করছেন। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল বিশে^র জন্য রোল মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন মনে করেন, ‘স্বাস্থ্য ও সামাজিক উন্নয়নের মানদণ্ডে বাংলাদেশের অবস্থান অতি উজ্জ্বল।’ তিনি আরও বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের চেয়ে ভারত পিছিয়ে। বর্তমান সরকারের সময় বাংলাদেশ উচ্চশিক্ষার যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট ১৯৭৪, জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০, বেসরকারী বিশ^বিদ্যালয় আইন-২০১০ এবং রিও২০+ সম্মেলনে গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে দেশের উচ্চশিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে সরকার স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ফর হায়ার এডুকেশন: ২০১৮-২০৩০ অনুমোদন দিয়েছে এবং সে মোতাবেক বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (বিমক) কাজ করে যাচ্ছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তরুণ প্রজন্মকে গড়ে তুলতে সরকার মানসম্মত শিক্ষা প্রযুক্তি ও গবেষণার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে বিমক ও বিশ^বিদ্যালয়সমূহের গবেষণা খাতে বরাদ্দ ছিল যথাক্রমে ১.৫৭ কোটি এবং ৬.১৪ কোটি টাকা, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৮ কোটি এবং ৯৯.৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ গবেষণা খাতে বরাদ্দ বিগত এক দশকে যথাক্রমে ১৬.৪৩ কোটি এবং ৯৩.৬০ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে, যার শতকরা হার যথাক্রমে ১০৪৬% ও ১৫২৪%। উল্লেখ্য, বিগত এক দশকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের অগ্রযাত্রা ও উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার বিকল্প নেই। কৃষি, স্বাস্থ্য, পোশাক শিল্প, রেমিট্যান্স প্রবাহ, পরিবহন ও যোগাযোগ, সামাজিক নিরাপত্তা, আইসিটি, প্রতিরক্ষাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রণীত হয়েছে কৌশলগত পরিকল্পনা। সে অনুযায়ী সেসব বাস্তবায়িত হচ্ছে। আর এসব সম্ভব হয়েছে রাষ্ট্রের ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী, কৌশলী, আত্মবিশ্বাসী ও রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের কারণে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষতার সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনাসহ উন্নয়নমূলক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন দেশ, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ৫০টির অধিক পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে এমডিজি এ্যাওয়ার্ড-২০১০, সাউথ-সাউথ এ্যাওয়ার্ড-২০১৩, গ্লোবাল ডাইভারসিটি এ্যাওয়ার্ড-২০১১, কালার ডাইভারসিটি পদক-২০১২, গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ এ্যাওয়ার্ড-২০০৮, এক্সিলেন্সি ম্যানহাটন-২০১৩, গ্লোবাল আইসিটি এ্যাওয়ার্ড-২০১৪, আইসিটি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট এ্যাওয়ার্ড-২০১৫, উইমেন ইন পার্লামেন্ট (ডব্লিউআইপি), গ্লোবাল এ্যাওয়ার্ড-২০১৫, চ্যাম্পিয়ন অব দি আর্থ-২০১৫, এজেন্ট অব চেঞ্জ এ্যাওয়ার্ড-২০১৬, প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন এ্যাওয়ার্ড-২০১৬, লাইফ টাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এ্যাম্পাওয়ারমেন্ট এ্যাওয়ার্ড-২০১৯, ড. কালাম স্মৃতি আন্তর্জাতিক এক্সিলেন্সি এ্যাওয়ার্ড-২০১৯, ভ্যাকসিন হিরো এ্যাওয়ার্ড-২০১৯, চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ এ্যাওয়ার্ড-২০১৯, ঠাকুর শান্তি এ্যাওয়ার্ড-২০১৯ ও মাদার অব হিউম্যানিটি এ্যাওয়ার্ড-২০২০ অন্যতম। দেশ পরিচালনায় সাফল্যের ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ ধরনের আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মাননা প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতি বিশে^ সম্মানিত হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুসহ বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে বিশ্বাসী জেনেছে বাংলাদেশের সামর্থ্য ও সক্ষমতা দুটোই বেড়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা বিশে^র অনেক দেশের উন্নয়ন অর্থনীতিবিদদের কাছে এখন আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে বিশ^ নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাঁর কাছে উন্নয়নের রহস্য জানতে চান। বাংলাদেশসহ বিশ^বাসী জানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৎ ও ব্যক্তিগত লোভ-লালসার অনেক উর্ধে। সদিচ্ছা, আন্তরিকতা, সততা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, দেশ-পরিচালনায় দক্ষতা ও দেশের মানুষের প্রতি ভালবাসা থাকলে প্রতিকূল পরিবেশেও যে অগ্রগতি অক্ষুণ্ন্ন রাখা যায়- তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন। তাই যথার্থ অর্থেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রের ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডর বলা যায়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বিজয় ও বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ ধরেই সকল ধরনের বাধা-বিপত্তি, দুর্যোগ-দুর্বিপাক, করোনা মোকাবেলা করে রাষ্ট্রের ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনা ও গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন বঙ্গবন্ধুর ন্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে বিশ^বাসী শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। লেখক : সদস্য, বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও ডিরেক্টর, বোর্ড অব ডিরেক্টরস, জীবন বীমা কর্পোরেশন
×