ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের বাঘ

প্রকাশিত: ২১:১২, ১১ জুন ২০২১

বাংলাদেশের বাঘ

এই না হলে বাংলাদেশের বাঘ! ব্রিটিশরা কি আর সাদ আহ্লাদ করে গালভরা নাম রেখেছিল রয়েল বেঙ্গল টাইগার। ভারত থেকে সুদীর্ঘ ১০০ কিলোমিটার দুর্গম অরণ্যসঙ্কুল নদ-নদী পরিবেষ্টিত বিপদাপন্ন পথঘাট পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের অসীম সাহসী বাঘটি ফিরে এসেছে নিজ বাসভূমি সুন্দরবনে। খবরটি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ও ভারতীয় বন বিভাগের কর্মকর্তারা। বাঘটির গলায় ছিল রেডিও কলার, যা থেকে পাওয়া যেত রেডিও সিগন্যাল। ফলে সহজেই এর গতিবিধি চিহ্নিত করা যেত। ২০১৭ সালে বাঘ শুমারির সময় তার গলায় পরিয়ে দেয়া হয় রেডিও কলারটি। বর্তমানে ৮-৯ বছরের বাঘটির ছবিও তোলা তখন। ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অংশের বসিরহাটে চিহ্নিত করা বাঘটিকে। এরপর এটি ২০২১ সালের ১০ মে পর্যন্ত পাড়ি দেয় ১০০ কিলোমিটার পথ, অতিক্রম করে ৩টি নদী। অবশেষে ফিরে এসেছে সুন্দরবনে। উল্লেখ্য, দুদেশের মধ্যে বাঘ, হাতি, হরিণসহ বিভিন্ন বন্যপ্রজাতির প্রাণীর স্বাভাবিক চলাচল রয়েছে। পাখিদের তো অবাধ উড়াল আছেই উন্মুক্ত আকাশে। একটি অতিবিপন্ন প্রজাতি বলে বাঘ চিহ্নিত সমগ্র বিশ্বজুড়েই। সুন্দরবনেই সাকল্যে বাঘ রয়েছে ৩০০-৩৫০টি। মানুষের হাতে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন বিপন্ন হচ্ছে দিন দিন। ফলে হুমকির সম্মুখীন ব্যাঘ্র প্রজাতি। সেই প্রেক্ষাপটে বাঘের সুরক্ষাসহ এর খাদ্যশৃঙ্খল চিতল হরিণ, বুনো শুয়োর ইত্যাদি রক্ষণাবেক্ষণ জরুরী ও অত্যাবশক হয়ে পড়েছে। শুধু একটি বা কয়েকটি দেশ নয়; বরং গোটা বিশ্বের প্রকৃতি, পরিবেশ, আবহাওয়া ও জলবায়ু সুরক্ষায় বনের এবং সেই সঙ্গে জীববৈচিত্র্যের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম। যে কোন দেশের পরিবেশ সুষ্ঠু, সুস্থ, সুন্দর ও স্বাস্থ্যসম্মত রাখার জন্য ভূখণ্ডের আয়তন অনুপাতে ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা আবশ্যক। অথচ বর্তমানে বাংলাদেশে বনভূমি রয়েছে মাত্র ৭-৮ শতাংশ। পরিবেশ ও জলবায়ুর জন্য রীতিমতো যা হুমকিস্বরূপ। বনের জায়গা দখল ও উৎখাত করে নির্মিত হয়েছে শিল্প-কারখানা, ইটভাঁটি, পর্যটন কেন্দ্র, কৃষি জমি ও ঘরবাড়ি। এসব নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এর পেছনে রয়েছে বন বিভাগের তদারকির অভাব, গাফিলতি, ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতিসহ বনখেকোদের যোগসাজশ। সুন্দরবনের সার্বিক সুরক্ষার জন্য আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য ও জরুরী হয়ে পড়েছে। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এই ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলটি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সুরক্ষাও বটে। বন না থাকলে একদিকে যেমন বাঘ, চিত্রল হরিণসহ অমূল্য বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্ন হবে, অন্যদিকে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ বিবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপন্ন হবে জনপদ ও বসতি। সুন্দরবনের সুরক্ষায় সরকার গৃহীত বিবিধ পদক্ষেপের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে স্মার্ট প্যাট্রোলিং সিস্টেম, যা মূলত স্পেশিয়াল মনিটরিং এ্যানালাইজিং এ্যান্ড রিপোর্টিং টুল। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে স্মার্ট প্রযুক্তির আওতায় বনজসম্পদ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সুন্দরবনকে চারটি রেঞ্জে ভাগ করা হয়েছে। এতে ব্যবহৃত হবে প্যাথেরা নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রস্তুতকৃত অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থা। এর ভিত্তিতে প্রতিমাসে হাল নাগাদ করা হবে সুন্দরবন সম্পর্কিত প্রতিবেদন। পাশাপাশি দেশের অন্যান্য বনাঞ্চলের সুরক্ষাসহ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ বাঞ্ছনীয়।
×