ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সুবর্ণ রুই মাছ চাষের জন্য অবমুক্ত

প্রকাশিত: ১৯:৩৫, ১০ জুন ২০২১

সুবর্ণ রুই মাছ চাষের জন্য অবমুক্ত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ স্বাদু পানির অন্যতম প্রধান মৎস্য প্রজাতি হচ্ছে রুই। বাংলাদেশে চাষযোগ্য মাছের মধ্যে সবচেয়ে বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন মাছ হল এই রুই। এ মাছের জেনেটিক গবেষণার মাধ্যমে এবার নতুন জাত উদ্ভাবনে সফল হয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নয়া এ জাতটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘সুবর্ণ রুই’। বিএফআরআই বলছে, রুই মাছের নতুন ওই জাতটি দ্রুত বর্ধনশীল ও স্থানীয় জাতের চেয়ে ২০.১২ শতাংশ বেশি উৎপাদনশীল। মাছটি খেতে খুবই সুস্বাদু এবং দেখতে লালচে ও আকর্ষণীয়। নতুন উদ্ভাবিত এ মাছ মাঠপর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হলে দেশে প্রায় ৮০ হাজার কেজি মাছ বেশি উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য দাঁড়াবে দুই কোটি ৪০ লাখ টাকায়। বৃহস্পতিবার (১০ জুন) বিএফআরআইয়ের ময়মনসিংহস্থ সদর দফতরে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ‘সুবর্ণ রুই’ মাছ অবমুক্ত করা হয়েছে। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রওনক মাহমুদ। বিএফআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক কাজী শামস আফরোজ, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জোনায়রা রশিদ। অনুষ্ঠানে মৎস্য অধিদফতর ও হ্যাচারি মালিকদের হাতে ‘সুবর্ণ রুই’ মাছের পোনা ও ব্রুড মাছ হস্তান্তর করা হয়। বিএফআরআই জানায়, বর্তমানে মাছ চাষ প্রায় সম্পূর্ণভাবে হ্যাচারি উৎপাদিত পোনার ওপর নির্ভরশীল। তবে হ্যাচারিতে উৎপাদিত রুই মাছের পোনার কৌলিতাত্ত্বিক অবক্ষয় ও অন্তঃপ্রজননজনিত সমস্যা মৎস্য চাষ উন্নয়নের অন্যতম অন্তরায়। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে কৌলিতাত্ত্বিক গবেষণার মাধ্যমে রুই মাছের নতুন উন্নত জাত উন্নয়নে গবেষণা চালানো হয়। এক্ষেত্রে যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও হালদা নদীর প্রাকৃতিক উৎসের রুই মাছ সংগ্রহ করে ধারাবাহিক গবেষণায় ২০২০ সালে রুই মাছের চতুর্থ প্রজন্ম উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়। জাত উন্নয়নের কৌশল ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিএফআরআইয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জোনায়রা রশিদ বলেন, ভিন্ন ভিন্ন নদীর উৎস থেকে সংগৃহীত স্থানীয় জাতের রুই মাছের মধ্যে দ্বৈত অ্যালিল ক্রসিংয়ের মাধ্যমে ৯টি গ্রুপ থেকে প্রথমে বেইস পপুলেশন তৈরি করা হয়। এরপর বেইস পপুলেশন থেকে সিলেকটিভ ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে ২০০৯ সালে রুই মাছের উন্নত জাতের প্রথম প্রজন্মের মাছ উদ্ভাবন করা হয়েছে। যা বেইস পপুলেশন থেকে ৭.৫ শতাংশ অধিক উৎপাদনশীল। পরবর্তীতে সিলেকটিভ ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে রুই মাছের দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের যথাক্রমে ১২.৩৮ শতাংশ ও ১৬.৮৩ শতাংশ অধিক উৎপাদনশীল জাত উদ্ভাবন করা হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালে উন্নত জাতের চতুর্থ প্রজন্মের নতুন রুই মাছের জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে। বিএফআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, উন্নতজাতের চতুর্থ প্রজন্মের ‘সুবর্ণ রুই’ মাছ স্বাদু পানি ও আধা-লবণাক্ত পানির পুকুর, বিল, বাঁওড় এবং হাওরে চাষ করা যাবে। তাছাড়া উন্নত এ জাতের রেণু পোনা হ্যাচারি থেকে সংগ্রহ করে নার্সারি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অনেকেই লাভবান হতে পারবে। তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রাক্কালে এটি যেহেতু উদ্ভাবন হয়েছে সেজন্য আমরা এর নাম দিয়েছি ‘সুবর্ণ রুই’। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সঙ্গে যেহেতু ‘সুবর্ণ’ নামের সামঞ্জস্য রয়েছে, আমরা আশা করছি মাঠপর্যায়ে এর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে এবং সহজেই সম্প্রসারিত হবে। সেই সঙ্গে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
×