ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

লে. কর্ণেল নাসির উদ্দিন আহমদ

কোভিডে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা ও করণীয়

প্রকাশিত: ২১:২৭, ৮ জুন ২০২১

কোভিডে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা ও করণীয়

সন্দেহ নেই কোভিড-১৯ একটি জটিল রোগ। এই রোগটির আক্রমণে ক্ষেত্র বিশেষে কোন উপসর্গই থাকে না। আবার কখনও এটি টেনে নিয়ে যায় মৃত্যুর দরোজায়। সর্দি, কাশি, জ্বর, গলা ব্যথা, শ্বাস-কষ্ট, অরুচী, ঘ্রাণ উবে যাওয়া এই রোগের সাধারণ লক্ষণ হলেও এটি কখনো দেহের সমস্ত অঙ্গ বিকল করে দিতে পারে। কোভিড-১৯ এর একটি জটিলতা হলো এটি শরীরের রক্তনালীতে বহমান রক্ত জমাট বাঁধিয়ে ফেলে। আর তখনই শুরু হয়ে যায় তুলকালাম কা-। তখন ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ভয়ানক শ্বাসকষ্ট জেঁকে বসে আক্রান্ত ব্যক্তির ওপর। হৃৎপি-ের রক্ত নালী আটকে গেলে হতে পারে হার্ট এ্যাটাক। মস্তিষ্কের রক্তনালী আটকে ধেয়ে আসতে পারে স্ট্রোক। এছাড়া অন্ত্রনালী, কিডনি, হাত-পা এসব অঙ্গের রক্তনালী আটকে বিষম বিপত্তি সৃষ্টি হতে পারে। কেন করোনা ভাইরাস রক্তনালী আটকে দেয় এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলছে। তবে প্রকৃত কারণ উদঘাটন করা এখনো পুরোটা সম্ভব হয়ে উঠেনি। ধারণা করা হয় ভাইরাস সৃষ্ট প্রদাহে ক্ষুদে রক্তনালী যাকে আমরা বলি কৌশিক জালিকা তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আমাদের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা যখন উদ্দীপ্ত হয় তখন এমন কিছু উপাদান তৈরি হয় যা রক্ত জমাট বাঁধতে ইন্ধন জোগায়। রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষেত্রে কারও কারও ঝুঁকি অনেক বেশি। বিশেষত যারা বয়স্ক, মোটাসোটা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগে আক্রান্ত তাদের রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বেশি। ধূমপানের কারণে রক্তনালী এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার ওপর করোনাভাইরাসের আক্রমণ হলে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া আরও শাণিত হতে পারে। এছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়িসহ কিছু ওষুধ রক্ত জমাট বাঁধাকে উসকে দিতে পারে। করোনাভাইরাসের ভ্যাক্সিন নেয়ার পর কোথাও রক্ত জমাট বাঁধার যে নজির মিলেছে সেখানেও জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ির যোগসূত্র রয়েছে বলে গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে। রক্ত জমাট বাঁধা রোধকল্পে করণীয় জানা জরুরী। এক্ষেত্রে প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা হলো : ক্স নিজেকে সচল রাখা। দীর্ঘ সময় শুয়ে-বসে থাকলে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। সেজন্য কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলেও নিজেকে সচল রাখা জরুরী। হাসপাতালে বয়স্ক ব্যক্তিদের নিয়মিত শরীর নড়াচড়ার ব্যবস্থা করা জরুরী। ক্স ওজোন নিয়ন্ত্রণে রাখা। স্থূলতা অনেক ক্ষেত্রেই ঝুঁকির সৃষ্টি করে। ক্স ধূমপান বর্জন করা। ক্স চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে রক্ত জমাট বাঁধায় সহায়তাকারী ওষুধ বন্ধ রাখা। বিশেষত জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি, হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপী ইত্যাদি। ক্স পর্যাপ্ত পানি পান করা। পানিশূন্যতা রক্ত জমাট বাঁধার নিয়ামক। ক্স রক্ত পরীক্ষা করে ঝুঁকি নির্ণয় করা। রক্তে ডি-ডাইমার নামক একটি উপাদান বেড়ে গেলে বুঝতে হবে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া উদ্দীপ্ত হচ্ছে। এমনটি হলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে রক্ত পাতলা করার (ব্ল্যাড থিনার) ওষুধ শুরু করা দরকার। সবচেয়ে বড় কথা হলো করোনাভাইরাস যাতে আক্রমণ ছড়াতে না পারে সেজন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা মেনে চলা জরুরী। আর তা হলো- সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরিধান করা, নিয়মিত হাত ধৌত করা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। লেখক : ক্লাসিফাইড মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট সিএমএইচ, ঢাকা।
×