ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাকালে শিশুর বেড়ে ওঠা

প্রকাশিত: ১৯:২৭, ৭ জুন ২০২১

করোনাকালে শিশুর বেড়ে ওঠা

করোনার সর্বনাশা কবলে সারা বিশ্ব থমকে গেছে। বহুল সংক্রমণ এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত বাংলাদেশও সীমাহীন ক্রান্তিকাল পার করছে। প্রতিদিনের জীবন দুঃসহ অভিজ্ঞতার এক অন্যরকম পালাক্রম। তার পরও নিত্য জীবন থেমে থাকে না। সময়ের অনিবার্য গতিধারায় হরেক রকম বিপর্যয়কে সামলিয়ে এগিয়ে যেতে বাধ্যও হয়। করোনার নৃশংস ছোবলে তেমন যাত্রাপথের আমরা এখন ক্লান্ত পথিক। সবচেয়ে বিপন্ন কাল পার করছে কোমলমতি শিশুরা। তারা করোনার প্রবল ঝাপটায় এক প্রকার বন্দী অবস্থায় ঘরে বসেই তাদের মূল্যবান সময় পার করছে। বর্তমান সময়ের ব্যস্ত বাবা-মা ঘরে থাকলেও দাফতরিক কার্যক্রম গৃহকোনটিতেই সারতে হয়। তথ্যপ্রযুক্তির সমৃদ্ধ বলয়ে ভার্চুয়াল জগতে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম এখন সময়ের অনিবার্য চাহিদা। সঙ্গত কারণে কর্মজীবী মা-বাবা ঘরে থাকলেও শিশু সন্তানটিকে পর্যাপ্ত সাহচর্য দিয়ে অনেকটাই হিমশিম খায়। ফলে শিশুটিও নিজের মতো করে একটি সুন্দর আনন্দঘন পরিবেশে তার সময় কাটাতে এক প্রকার অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। যেমন আমরা করোনাকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে স্বাস্থ্যবিধি পালনে নিয়মিত সুরক্ষাতেও নিজেদের মানিয়ে নিয়েছি। শিশুরা টিভিতে যেমন তাদের পছন্দনীয় কার্টুন দেখে সময় কাটায় পাশাপাশি খেলনা নিয়েও মনোযোগ তেরি করে নিজেদের ভরিয়ে রাখতে আনন্দ পায়। এমন একটি নিজের তৈরি করা ভুবনে সে মগ্ন হতেও সময় নেয় না। পাশে বাবা কিংবা মা তার পেশাগত দায়িত্বটি সামলাচ্ছেন তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিক বলয়ে। এক সময় পিতা-মাতা সন্তানদের নিয়ে ধারেকাছে শিশু পার্ক কিংবা কোন দর্শনীয় স্থানে ঘুরে আসতেন। গত এক বছরেরও বেশি সময় শিশুরা তেমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশ থেকে এক প্রকার বঞ্চিতই বলা যেতে পারে। কিন্তু অবোধ শিশুটি কোন কিছুর অভাবকে যেভাবে এখনও ভাবতে শেখেনি। ফলে ঘরে বসেই সে তার নিত্য জীবনের প্রয়োজনীয় সময়গুলো হরেক রকম খেলনার মধ্যে মগ্ন হয়ে কি সুন্দরভাবে নিজের মানসিক স্বাচ্ছন্দ্যকে ভরিয়ে তুলছে। করোনা সব মানুষকে যে ভাবে নতুন জগতই শুধু নয় ভিন্ন মাত্রার অভিজ্ঞতায় অন্য কিছু শেখাচ্ছে সেটাই এখন সবার জন্য এক আকর্ষণীয় উপহার। আর শিশুর ক্ষেত্রে তেমন অভাবনীয় মনোসংযোগ তাকে নতুন এক জীবনের অনুষঙ্গ করেছে যাকে সে সহজেই আয়ত্তে আনতে একবারেই পারদর্শী। করোনায় গৃহবন্দী শিশুরা নিজের আনন্দ আর খেলার বহুবিধ উপকরণ দক্ষ হাতে তৈরি করে বর্তমান সময়কে কতভাবেই না আপন করে নিয়েছে। বিভিন্ন রকম খেলার সামগ্রী সাজিয়ে গুছিয়ে মনোযোগ নিবন্ধ করে একাকিত্বের বোঝাও হাল্কা করছে। কর্মজীবী বাবা-মায়ের সন্তান এভাবেই তার নিঃসঙ্গতাকে ভরিয়ে তুলছে খেলনার বহুবিধ সামগ্রীতে। শিশুরা মূলত নরম মাটির মতো স্পর্শকাতরই শুধু নয় ফুলের কলির আভরণে নিজেকে সুশোভিত করারও এক চমৎকার ও অভিনব ক্ষুদে কারিগর যারা ক্রমান্বয়ে জাতির কর্ণধারের ভূমিকায় নিজেদের অপ্রতিরোধ্য করতে সম্মুখ সমরকে পাড়িও দেবে। আগামীর বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় শিশুরাই জাতি গঠনের যথার্থ উত্তরাধিকার। যারা জন্ম থেকেই যেন নিজের নিরাপত্তা বেষ্টনীই শুধু নয় আনন্দঘন মুহূর্তকেও গভীরতার বোধ থেকে চালিত করতে পারে। নিজের জগত তৈরি করে মূল্যবান সময়টুকু কাটানোও এক ধরনের স্বস্তি এবং শান্তির বিষয়। এই মুহূর্তে বাইরে যাওয়ার সুযোগ ব্যতিরেকে তাদের গড়ে ওঠার মুহূর্তটা অনেক কঠিন হওয়া স্বাভাবিক হলেও শিশুরা সেই পথ পাড়ি দিচ্ছে নিজের ক্ষুদ্র ক্ষমতা এবং পারদর্শিতায়। খেলনার মধ্যে মগ্ন থাকা শিশুর এমন চমৎকার চিত্র নতুন কিছু নয়। কিন্তু সময়টা যখন করোনার দুঃসহ যাত্রাপথ এবং পিতা-মাতা দু’জনই কর্মজীবী তেমন বিবেচনায় শিশুর আপন খেয়ালে বেড়ে ওঠা সময়ের চাহিদাও বটে। বাবা-মায়ের সযত্ন পরিচর্যাও কোনভাবেই যেন ব্যত্যয় না ঘটে। নিজেদের কর্মব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে সন্তানের প্রতি নজরদারি এবং খেয়াল রাখাও একান্ত দায়বদ্ধতা। নিজেরা যেমন নির্মল পারিবারিক আবহে গড়ে উঠে সফলকাম হয়েছেন আপন যোগ্যতা ও দক্ষতায়। চোখের সামনে বেড়ে ওঠা সন্তানটিও যেন সাংসারিক স্নেহঘন পরিবেশে তার শৈশবকাল পার করে নিজেকে তৈরি করতে পিছপা না হয়। বাইরের আনন্দঘন বিনোদনে এখন সেভাবে নেয়াও সম্ভব নয় মহামারীর অসহনীয় দাপটে। ঘরে বসেই সে তার বিনোদনের উপকরণগুলো নিজের পছন্দ আর ইচ্ছাতেই সাজিয়ে নিক।
×