ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রাম মেয়রের জন্য কোটি টাকার গাড়ি কেনার উদ্যোগ!

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ৫ জুন ২০২১

চট্টগ্রাম মেয়রের জন্য কোটি টাকার গাড়ি কেনার উদ্যোগ!

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ঠিকাদার উন্নয়ন বিল, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আনুতোষিক ও ভবিষ্যত তহবিল খাতসহ বিভিন্ন খাতে প্রায় আট শ’ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। কিন্তু সেই বকেয়ার বোঝা মাথায় নিয়েই মেয়রের জন্য কোটি টাকার গাড়ি কিনছে সিটি কর্পোরেশন। কর্পোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকেই কেনা হচ্ছে এ গাড়ি। ইতোমধ্যে নতুন গাড়ি কেনার জন্য দরপত্রও পড়েছে একটি। র‌্যাংগস মোটরস লিমিটেড এই গাড়ির জন্য দর দিয়েছে ১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, গাড়ি কেনার জন্য টেন্ডার হয়েছে কিন্তু কেনার জন্য অনুমতি দিইনি। আসলে গাড়ি কেনার পক্ষপাতী আমি নই। কিন্তু মেয়রের ব্যবহারের জন্য একটি গাড়িই আছে। এটি ১৫ বছরের পুরনো হওয়ায় কোন স্থানে যাওয়ার পথে খারাপ হয়ে যায়। তিনি বলেন, সেদিন সরাইপাড়ার এক অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে বন্ধ হয়ে যায়। পরে আরেকটি গাড়ি নিয়ে যেতে হয়েছে। প্রকৌশল বিভাগ থেকে বলছে, বর্তমান গাড়িটি ঠিক করার জন্য অনেক টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। তারা বলছে একটা নতুন গাড়ি কিনলেই হয়। আমি বলছি, ঠিক আছে, দেখি চিন্তা করে। যান্ত্রিক বিভাগ টেন্ডার দিয়ে রেখেছে, এখনও আমি কেনার জন্য বলিনি। মেয়র বলেন, বর্তমান গাড়িটি ২০০৬ সালে কেনা হয়েছিল। তখন মহিউদ্দিন চৌধুরী গাড়িটি কিনেছিলেন ১ কোটি ১০ লাখ টাকা দিয়ে। এখন তারা (সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের যান্ত্রিক শাখা) একটা নতুন গাড়ি কেনার জন্য ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার একটি টেন্ডার করেছে। গাড়ি কেনার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন খাতে বকেয়া রয়েছে আট শ’ কোটি টাকার ওপরে। গাড়ি কেনার জন্য আমি এত আগ্রহী না। বর্তমান গাড়িটি যদি ঠিক করে চালানো যায় তাহলে চলবে। আর যদি না চলে তাহলে চিন্তা করব। গাড়ি কেনার চেয়ে বেশি চিন্তা হচ্ছে শহরকে গুছিয়ে উন্নয়ন করা। চলতি মাসের ৪ মে মেয়রের গাড়ি কেনার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয় সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের যান্ত্রিক শাখা। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এরপর ২৭ মে মাত্র একটি কোম্পানি গাড়ি কিনে দেয়ার জন্য দরপত্র জমা দেয়। নতুন গাড়ি কেনার বিষয়টি নিশ্চিত করে সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) সুদীপ বসাক বলেন, মেয়রের জন্য গাড়ি কেনার অনুমতি মন্ত্রণালয় থেকে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে মেয়র যে গাড়িটি ব্যবহার করছেন সেটি ১৫ বছর আগের। পুরনো হয়ে যাওয়ার কারণে গাড়িতে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। দেখা যাচ্ছে মেয়র কোন অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য গাড়ি নিয়ে বের হলেন, কিন্তু গাড়ির সমস্যার কারণে মাঝপথে আটকে গেলেন। একজন মেয়রের গাড়ি ১৫ বছরের পুরনো, বিষয়টি কেমন দেখায় না। এ জন্য সিটি কর্পেরেশনের পক্ষ থেকে নতুড়ি নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বলেন, এমনিতে মেয়রের জন্য দুটি গাড়ি থাকা উচিত। কোন জায়গায় রিপ্লেসমেন্টের প্রয়োজন হলে যাতে দেয়া যায়। পুরনো গাড়িও থাকবে। পুরনো গাড়িটি মডিফাই করে দিব। সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব ফান্ড থেকে এ গাড়ি কেনা হচ্ছে। দরপত্র জমা পড়ার বিষয়ে সুদীপ বসাক বলেন, গাড়ি কেনার জন্য মাত্র একটি কোম্পানি দরপত্র দিয়েছে। এখন দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি দরপত্রদাতার কাগজপত্র যাচাই বাছাই করবে। এরপর কমিটি গাড়ি কেনার কার্যাদেশ দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। র‌্যাংগস মোটরস লিমিটেড এ গাড়ির জন্য দর দিয়েছে ১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। গত ২৭ জানুয়ারির নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন চট্টগ্রাম সিটি কর্পেরেশনের যুগ্ম-াধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী। ১৫ ফেব্রুয়ারি মেয়রের দায়িত্ব নেন তিনি। সিটি কর্পেরেশন সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে তৎকালীন মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সময় সর্বশেষ ১ কোটি ১০ লাখ টাকায় পাজেরো গাড়ি কেনা হয়েছিল। মহিউদ্দিন চৌধুরীর পর সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলমও এ গাড়ি (চট্ট-মেট্রো ঘ-১১-০৭৩৭) ব্যবহার করতেন। তবে আরেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ব্যবহার করতেন নিজের গাড়ি। অবশ্য বিদায়ী প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম মেয়রের জন্য নির্ধারিত গাড়ি ব্যবহার করতেন।
×