ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পরিবেশ বাঁচাতে টেকসই ফ্যাশনের গুরুত্ব

প্রকাশিত: ২০:০৮, ৩১ মে ২০২১

পরিবেশ বাঁচাতে টেকসই ফ্যাশনের গুরুত্ব

নিত্যনতুন ফ্যাশনের আবির্ভাবের কারণে বিশ্বব্যাপী নতুন স্টাইলের প্রতি আগ্রহ সকলের বেড়েই চলছে। ক্রেতার চাহিদার সঙ্গে তালমিলিয়ে বছরের বিভিন্ন সময়ে মৌসুম অনুযায়ী নানান রঙের, নানা ধরনের তৈরি পোশাক বাজারজাত করা হচ্ছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত দুই দশকে নতুন পোশাক ব্যবহারের পরিমাণ বেড়েছে চারশ শতাংশ। এসব নিত্যনতুন পোশাক টেকসই উন্নয়নে কতটা সহায়ক ভূমিকা পালন করছে তা নিয়ে আলোচনা করছেন- আবদুল্লাহ আল ইয়াসির আপনি জানেন কি!! আপনি যে কাপড়টি পরে আছেন, সেটি হয়ত প্রকৃতিতে ফিরে গিয়ে নষ্ট হতে প্রায় ৩০০ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। স্বল্পমূল্যের নতুন ফ্যাশন দুনিয়ার সঙ্গে পরিবেশের কি কোন সম্পর্ক আছে? দৈনন্দিন পোশাকে সহজলভ্যতায় পোশাকের ব্যবহার যেমন বেড়েছে তেমনি এর আসল মূল্য দিতে হচ্ছে পরিবেশকে। বার্ষিক পোশাক বর্জ্য মাথাপিছু ১৪ কেজি পরিবেশে ফিরিয়ে দিচ্ছে। তৈরি পোশাক বাণিজ্য বর্তমানে বিশ্বে দ্বিতীয় পরিবেশ দূষণকারী শিল্প হিসেবে খ্যাত। জাতিসংঘের মতে বার্ষিক দশ শতাংশ গ্রীনহাউস গ্যাসের গোড়াপত্তন এ শিল্প। ফলস্বরূপ, ‘টেকসই ফ্যাশন’ বর্তমান সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্পের দরুন বিশ্বকে হুমকির মুখ থেকে বাঁচাতে পোশাক তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল এবং উৎপাদন পদ্ধতিতে টেকসই উন্নয়নের বিষয়কেই প্রাধান্য দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। টেকসই ফ্যাশন বলতে কি বোঝায়? যে সকল পোশাক তৈরিতে পরিবেশ অনুকূল উপাদান ব্যবহার করা হয়, পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে না এবং যা ব্যবহার পরবর্তী পর্যায়ে পরিবেশের সঙ্গে সহজেই মিশে যেতে পারে অথবা পুনঃব্যবহার উপযোগী। বাংলাদেশের সবুজ পোশাক শিল্পের সর্বোচ্চ লক্ষ্য - বিশ্বকে টেকসই ফ্যাশন ও প্রক্রিয়ার সাথে পরিচিতকরণ এবং পরিবেশমুখী সর্বোচ্চমানের পোশাক সরবরাহকরণ। এক্ষেত্রে, উৎপাদন প্রক্রিয়ার গুরুত্ব সর্বাধিক। একটি পোশাক তৈরির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি প্রক্রিয়াতে টেকসই কাঁচামাল ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং পরিবেশ অনুকূল উৎপাদন প্রক্রিয়া টেকসই ফ্যাশনের প্রাথমিক বিষয়। টেকসই ফ্যাশনের বিবেচ্য বিষয় হলো: পরিবেশবান্ধব, জৈব চাষ, অপচয় রোধ ও কাপড়ের পুনর্ব্যবহার, নৈতিকভাবে সঠিক এবং গ্রহণযোগ্যতা, গ্রাহকদের সঙ্গে প্রক্রিয়াগুলো সম্পর্কে সচ্ছতা, শিশুশ্রম বন্ধ, শ্রমিকদের মৌলিক মানবাধিকার। বিশ্বের স্বনামধন্য ব্র্যান্ডগুলো ইতোমধ্যেই টেকসই ফ্যাশনের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। পরিবেশ অনুকূল উৎপাদন প্রক্রিয়াকে সাধুবাদ জানিয়েছে ইউরোপ এবং আমেরিকার অধিকাংশ ব্র্যান্ডগুলো যেমন: এইচ এ্যান্ড এম, জারা, বারাস্কা। বাংলাদেশের রফতানি খাতের উন্নতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পোশাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো টেকসই পোশাক উৎপাদনের প্রতি বিশেষ দৃষ্টিপাত করছেন। হেরা সোয়েটার্স লিমিটেড, একটি শতভাগ রফতানিমুখী সোয়েটার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান টেকসই ফ্যাশন ও নতুন স্টাইলের মেলবন্ধনে পরিবেশবান্ধব সোয়েটার রফতানি করছে। হেরা সোয়েটার্স লিমিটেড কেবল পরিবেশবান্ধব কাঁচামালই নয় বরং উৎপাদনের প্রতিটি স্তরে টেকসই ফ্যাশনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। পরিবেশকে বাঁচাতে শপিং-এর ক্ষেত্রে টেকসই ফ্যাশনের বিশেষজ্ঞরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন- সংখ্যা নয় বরং কাপড়ের মান বিবেচনা করে পোশাক কেনা উচিত। স্বল্পমূল্যে অধিক পোশাকের চেয়ে অধিকমূল্যের স্বল্প পোশাক পরিবেশকে অনেক ক্ষতি থেকে বাঁচাতে পারে। সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ফ্যাশনের উপযোগিতা, নকশা এবং ফ্যাশন বিষয়ক অধ্যাপক কেট ফ্লেচার। তিনি বলেছেন, ‘কম পোশাক কেনা মোটেও দেহের প্রতি মারাত্মক কোন অবিচার বা বঞ্চনা নয়। কেনাকাটা করার সময় মানুষ অত্যন্ত তৃপ্তি লাভ করে। কিন্তু পরক্ষণেই ওই কেনা বস্তু বা পোশাকের ওপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।’ সুতরাং মানসম্পন্ন পোশাক কেনার প্রতি বেশী খেয়াল রাখা উচিত। টেকসই বিষয়ক ব্লগাররা বলেন, যেকোন মূল্যে নতুন সিনথেটিক উপাদান দিয়ে তৈরি পোশাক কেনা বন্ধ করতে হবে। ফ্যাশন ব্লগার উইলো বলেন, ‘আমি হেম্প, লিনেন এবং জৈব সুতি বস্ত্র যা গ্লোবাল অরগানিক টেক্সটাইল স্ট্যান্ডার্ডের অনুমোদনের আওতায় পড়ে এমন পোশাক নিখুঁত না হলেও কিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের উচিত কাপড়ের দীর্ঘস্থায়িত্ব বাড়ানো। যাচাই করুন। যে কোন ব্র্যান্ড থেকে নতুন কাপড় কেনার আগে সেগুলো কোথায় এবং কারা বানিয়েছে সে বিষয়ে মানুষের প্রশ্ন করা উচিত। লিড, জিওটিএস, জিআরএস, আরডব্লিউএসের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অনুমোদন পাওয়া ব্র্যান্ডগুলোর কাপড় কেনা সময়ের দাবী। কারণ তারা টেকসই ফ্যাশনের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
×