চা গাছ থেকেই চা পাতা উৎপ্নন হয়। অন্য কোনো গাছে চা ধরা সম্ভব নয়। কিন্তু কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) একটি লেবু গাছে চা ধরেছে! ফলের মত করে ঝুলে রয়েছে চা (টি-ব্যাগ)। বাঁদরের মত ঝুলে থাকায় অনেক শিক্ষার্থী মজা করে এটিকে ‘বাঁদর চা’ গাছও বলে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন একাডেমিক ভবনের নিচতলায় গেলে দেখা মিলবে গাছটির। তবে ঝুলে থাকা চা এই গাছ থেকে উৎপন্ন নয় বরং অসচেতনতা আর অবহেলার ফসল।
শিক্ষার্থীরা মনে করেন, এসব টি-ব্যাগ ঝুলে থাকার মূল কারণ অফিস সহকারীদের অবহেলা। তিনতলা বিশিষ্ট ভবনটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার বিভাগীয় অফিস সহকারীরা চা বানানোর পর জানালা দিয়ে এবং করিডোর থেকে ছুড়ে ফেলে এসব টি-ব্যাগ। পাশাপাশি পলিথিল, ব্যবহৃত ট্যিসুপ্যাপার, বিস্কুটের প্যাকেটসহ নানা আবজর্নায় ফেলেও তারা।
আবজর্না ফেলার জন্য প্রতি তলায় ডাস্টবিন ও প্রতিটি অফিস কক্ষে ঝুড়ি থাকা সত্বেও তারা এসব আবজর্না নিচে ছুড়ে ফেলে। ফলে ছুড়ে ফেলা আবর্জনা আটকে থাকে গাছের উপর।
এছাড়া ভবনের নিচতলার ক্যান্টিনে চা খাওয়ার পরও টি-ব্যাগ ছুড়ে ফেলা হয় গাছটির দিকে। এভাবেই ধীরে ধীরে টিব্যাগসহ নানা আবর্জনায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে গাছটি। ভবনের নিচে থাকা এ গাছটিতে ফুল-ফলের দেখা মেলেনা কখনো। কারণ হলো গাছটিতে ঝুলে থাকা বিভিন্ন আবর্জনা আর টি-ব্যাগের সাথে থাকা গরম পানি। আর গরম পানি গাছের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
অযত্ন আর অবহেলার কারণে গাছটি এখন প্রায় মৃত। পাশাপাশি যত্রতত্র টি-ব্যাগ ফেলায় পরিবেশেরও ক্ষতিসাধন হচ্ছে। পাশাপাশি ভবনের নিচের ওই জায়গাটি অনেকটা ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এ গাছটি নিয়ে মজা করলেও নজরে পড়েনা সংশ্লিষ্টদের। ফলে লেবু গাছ হয়েও লেবুর পরিবর্তে চা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে গাছটিকে।
ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুপ্রিয়া কুন্ডু বলেন, ‘প্রথমে আমিও গাছটি দেখে অবাক হয়েছিলাম। দূর থেকে দেখে বুঝতে পারিনি গাছটিতে কী ঝুলছে। কাছে গিয়ে দেখতে পেলাম ওগুলো টি-ব্যাগ। লেবু গাছে চায়ের ব্যাগ দেখে মজাই পেয়েছিলাম। তবে গাছটির জন্য মায়া লাগে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিষয়গুলোতে সতর্ক হওয়া উচিত।’
লোকপ্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী আখতার হোসেন আজাদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিত ও সচেতন ব্যক্তিদের বিচরণ ক্ষেত্র হলেও হেয়ালি বশত কিছু কাজ পরিবেশ দূষণ এবং সৌন্দর্য নষ্ট করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ জীববৈচিত্র্য রক্ষা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যবর্ধক ক্ষেত্র হবার বদলে এহেন কা- প্রকারান্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। দীর্ঘদিন ধরে গাছের উপর উচ্ছিষ্ট অংশ নিক্ষেপের বিষয়টি বিশেষ করে শিক্ষকদের সুনজরে অনেক আগেই আসা উচিত ছিল।’