ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এবিএস ফরহাদ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ॥ লালমাটি আর সবুজের অরণ্য

প্রকাশিত: ২১:৪১, ৩০ মে ২০২১

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ॥ লালমাটি আর সবুজের অরণ্য

চারদিকে লালমাটির পাহাড় আর সবুজ অরণ্য। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বয়ে চলেছে ছোট ছোট পাহাড়। যেখানটায় লালমাটির সঙ্গে সবুজ অরণ্য মিলেমিশে একাকার। সবুজের বুক ছিড়ে ছোট ছোট পাহাড়ি টিলার ওপর দাঁড়িয়ে আছে সাদা রঙের ভবনগুলো। এ যেন পাহাড়ের বুকে এক মায়াবী আবাহ। কথা বলছি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বেষ্টিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। ইংরেজ আমল থেকে ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লার মানুষের দাবি ছিল একটি উচ্চ শিক্ষালয়ের। কুমিল্লাবাসীর সে দাবি পূরণ হয় ২০০৬ সালের ২৮ মে। এই দিনে দেশের ২৬তম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে লালামাই পাহাড়ের পাদদেশে প্রতিষ্ঠিত হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৭ সালের ২৮ মে ১৫জন শিক্ষক ও ৩০০জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়টি আজ ১৬ বছরে পদার্পণ করল। প্রথমে ৪টি অনুষদে ৭টি বিভাগ নিয়ে শুরু করে আজ ৬টি অনুষদে ১৯টি বিভাগে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। নবীন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮টি ব্যাচ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষে দেশ ও মানব সেবায় ছড়িয়ে পড়েছে। ২০২০ সালের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত। ৫০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশসেরা আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে ১৬শ’ ৫৫ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন। ঐতিহ্যের ধারক বিশ্ববিদ্যালয় : ঐতিহাসিক শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ধারণা করা হয় প্রায় ১৩০০ বছর পূর্বে এ অঞ্চলে একটি বিহার ছিল। বিহার অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়। পরবর্তীতে এখানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান এই অঞ্চলের মানুষ। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা ধারণা করেন শালবন বিহারে একসময় শিক্ষালয় ছিল, তাই পরে এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি : দেশের মধ্য-পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। লালমাটির ওপর প্রতিষ্ঠিত এ ক্যাম্পাস সবুজের এক অরণ্য। সবুজ ক্যাম্পাস ভিন্ন ভিন্ন তুতে সাজে আপন মহিমায়। গ্রীষ্মে এখানে আম-কাঁঠালের গন্ধে ভরে উঠে। বর্ষার কৃষ্ণচূড়া, সোনালু, জারুলে ছেয়ে যায় ক্যাম্পাস। আর শরতের শুভ্র কাশফুলে মুগ্ধ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। ক্যাম্পাসের এই মহারানী সাজে আড্ডায় মেতে উঠে তারা। প্রকৃতির টানে এখানে ভিড় জমে পর্যটকদের। গবেষণায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় : শিক্ষাবিস্তারে অন্যান্য শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিন্ন হলো গবেষণাধর্মী শিক্ষা। কারণ এখানে জ্ঞান উৎপাদিত হয়। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে প্রয়োজন গবেষণাধর্মী শিক্ষাব্যবস্থা। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এগিয়ে যাচ্ছেন গবেষণায়। যার প্রতিফলন দেখা যায় দেশের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ। এছাড়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন। সহশিক্ষা কার্যক্রমে এগিয়ে : প্রতিটি শিক্ষার পূর্ণতা দেয় একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ। অঙ্কুরিত প্রতিভার বিকাশ ঘটে এ সকল কার্যক্রমে। ছোট ক্যাম্পাস হলেও এখানে নিয়মিতচর্চা হয় সহশিক্ষা কার্যক্রমের। এখানে গড়ে উঠেছে থিয়েটার, প্রতিবর্তন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ডিবেটিং সোসাইটি, অনুপ্রাস. সায়েন্স ক্লাব, বন্ধু রক্তদান সংগঠন, আইটি সোসাইটিসহ বিভিন্ন সংগঠন। উপাচার্যের কথা : করোনার কারণে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এবার কোন অনুষ্ঠান করা যাচ্ছে না। যদি সশরীরে উপস্থিত থেকে কোন অনুষ্ঠান করতে না পারে তাহলে অনলাইনে হলেও একটি অনুষ্ঠান করার কথা ভাবছেন। তিনি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সবাই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ মেন।
×