ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দুইজন গ্রেফতার

খিলক্ষেতে বন্দুকযুদ্ধে দুই ছিনতাইকারী নিহত

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ১৯ মে ২০২১

খিলক্ষেতে বন্দুকযুদ্ধে দুই ছিনতাইকারী নিহত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর খিলক্ষেতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে রাসেল (৩০) ও এনামুল (৩৬) নামে দুই ছিনতাইকারী নিহত হয়েছে। এ সময় দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, সোমবার রাত আড়াইটার দিকে খিলক্ষেত ফ্লাইওভারে চেকপোস্টে পুলিশ ও ছিনতাইকারী দলের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং গোলাগুলির ঘটনায় ওই দুই ছিনতাইকারী নিহত হয়েছে। নিহতরা চিহ্নিত ছিনতাইকারী। যারা অটোরিক্সা করে ছিনতাই করত। নির্মমভাবে নিরীহ মানুষকে হত্যা করত। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে সিএনজির ভেতর থেকে নয়ন ও ইয়াসিন নামে দুই ছিনকাইকারীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে সিএনজিচালিত ১টি অটোরিক্সা, ১টি বিদেশী পিস্তল, ২টি গুলিভর্তি ১টি ম্যাগাজিন, ১টি ছুরি, ২টি মলম, ১টি গামছা, ৯টি মুঠোফোন, ১৬টি ইয়াবা ও ৫ হাজার টাকা উদ্ধার করার। ডিএমপির গুলশান গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান জানান, পবিত্র রমজান ও ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে লাখ লাখ মানুষ নানা বাহনে ঢাকা ছেড়েছেন। ঢাকার ভেতরে গভীর রাতেও এই গমনাগমন অব্যাহত আছে। কিন্তু গভীর রাতে বাস-মিনিবাসের মতো গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অনেক সময় সিএনজি অটোরিক্সা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস এবং মালবাহী ছোট পিকআপও যাত্রী আনা- নেয়া করে থাকে। কয়েকটি ডাকাত চক্র গণপরিবহনের এই স্বল্পতাকে কাজে লাগিয়ে রাইড শেয়ারের নামে মানুষের সর্বস্ব ডাকাতি করে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল। এই ডাকাতি করতে গিয়ে দু-একজন নিরপরাধ ভিকটিমকে ফাঁস দিয়ে হত্যা করে ফেলে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এদের খিলক্ষেত ফ্লাইওভারের ওপর এক প্রবাসীকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যা করে নগদ টাকা ও মূল্যবান মালামাল ছিনিয়ে নিয়েছে। ঈদের পরেও অনেক মানুষ ঢাকা মহানগরীতে আসছে এবং রাতেও অনেক মানুষ ঢাকার ভেতর চলাফেরা করছে। ঈদফেরত নগরবাসীকে কেন্দ্র করে অপরাধীচক্র আবার তৎপর হয়ে উঠতে পারে এমন আশঙ্কায় গোয়েন্দা তথ্য, প্রযুক্তিগত উপাত্তের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের একাধিক টিম কুড়িল-বিশ্বরোড ফ্লাইওভার, খিলক্ষেত, কাওলা, ঢাকা-ময়মনসিংহ রোড ও পূর্বাচলগামী ৩০০ ফিট রাস্তাতে টহল জোরদার করেছে। ডিসি মশিউর রহমান বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার রাত সাড়ে ১২টা থেকে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের একাধিক টিম খিলক্ষেত থানা পুলিশের সঙ্গে নিরাপত্তা টহল দিচ্ছিল। ডিবি পুলিশের একটি দল কাওলা হয়ে পূর্বাচলগামী ফ্লাইওভারের প্রবেশমুখে, দ্বিতীয় দলটি পূর্বগামী ফ্লাইওভারের মাঝে অবস্থান নিয়ে তল্লাশি করছিল। রাত সোয়া ২টার দিকে কাওলা থেকে বিশ্ব রোডের দিকে একটা সবুজ রঙের সিএনজি কয়েকজন লোককে নিয়ে যাচ্ছিল। চেকপোস্টরত থানা পুলিশ এবং গোয়েন্দা পুলিশের প্রথম দলটি সিএনজিটিকে থামানোর ইশারা দিলে সেটি দ্রুতবেগে ৩০০ ফিট ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে পূর্বাচলের দিকে পালিয়ে যাচ্ছিল। ডিবি পুলিশের ওই দলটি ব্রিজের মাঝে থাকা ২য় দলকে ওয়্যারলেস দ্বারা সতর্ক করলে তারা তাদের মাইক্রোবাসকে আড়াআড়ি দাঁড় করিয়ে দেয় এবং প্রথম দলটি পেছন থেকে ধাওয়া করতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে সিএনজি থেকে দুজন সন্ত্রাসী নেমে দৌড়ে সামনে যেতে থাকে। পুলিশের একটি মাইক্রোবাস আড়াআড়ি দেখে সেটিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে ডিবি পুলিশের একটি মাইক্রোবাসের বাম দিকের কাঁচ ভেঙ্গে যায়। গুলশান বিভাগের ডিবি ডিসি মশিউর রহমান জানান, আত্মরক্ষার্থে আক্রান্ত মাইক্রোবাস থেকে ডিবি পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় সন্ত্রাসী এবং পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং গোলাগুলি চলে। এক পর্যায়ে গোলাগুলি থেমে গেলে সবুজ রঙের একটি সিএনজি অটোক্সিা (ঢাকা থ ১১- ৭৯৪৫) ফ্লাইওভারের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়া অবস্থায় পাওয়া যায়। সেটির ড্রাইভারের সিট এবং দ্বিতীয় সিট থেকে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। কিছুদূরে দুজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় ফ্লাইওভারের ওপর পড়ে থাকতে দেখা যায়। খিলক্ষেত থানা পুলিশের মাধ্যমে তাদের দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জরুরী বিভাগে আনা হয় । এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এই সময় তাদের দেহ তল্লাশি করে ৯ পিস ইয়াবা এবং দুটি মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। আহতদের একজনের ডান হাতের কাছ থেকে একটি বিদেশী পিস্তল এবং দুই রাউন্ড গুলি ভর্তি একটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়। অপরজনের হাত থেকে একটি পুরাতন কিন্তু ধারালো ছুরি উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত চালক এবং সহচালকের কাছ থেকে চারটি মোবাইল, ৭ পিস ইয়াবা এবং তাদের দেখানো মতে সিএনজির পেছনের সিটের নিচ থেকে তিনটি স্মার্টফোন, মলম, গামছা উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সিএনজির ড্রাইভারের নাম নয়ন এবং পাশের সিটে বসেছিল ইয়ামিন। তারা জানায়, ঘটনাস্থলে রক্তাক্ত দুজনের নাম হচ্ছে, এনামুল ও রাসেল। দুজনই সিএনজির পেছনে বসা ছিল। পুলিশের দুটি মাইক্রোবাসের দ্বারা ব্যারিকেড হওয়ায় তারা নেমে পালাচ্ছিল। তাদের সঙ্গে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি বর্ষণ করে। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত নয়ন ও ইয়ামিন জানান, তারা টঙ্গীর মধুমিতায় একত্রিত হয়ে প্রথমে আব্দুল্লাহপুর খন্দকার পেট্রোলপাম্পে যায়। সেখান থেকে বিমানবন্দর হয়ে কাওলার দিকে আসতে থাকেন। উদ্দেশ্য ছিল ঢাকার একাকী কোন ব্যক্তিকে টার্গেট করে সিএনজিতে তুলে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়া। তারা জানায়, গামছা এবং মলম দিয়েই তারা মানুষের সর্বস্ব কেড়ে নেয়। ভিকটিম জোরাজুরি করলে তাকে ফাঁস দিয়ে হত্যা করে ফেলে দিত। পুলিশের দ্বারা বা কোন সন্ত্রাসী গ্রুপের দ্বারা আক্রান্ত হলে নিজেদের রক্ষার জন্যই তারা সিএনজিতে আগ্নেয়াস্ত্র এবং ছুরি বহন করত। গ্রেফতারকৃতরা এবং নিহতরা ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যা এবং মাদকের একাধিক মামলার আসামি। তারা সবাই ইয়াবা এবং গাজায় নেশাসক্ত। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক এবং কর্তব্যকর্মে নিয়োজিত পুলিশকে আক্রান্ত করার অভিযোগে পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে।
×