ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে জলাবদ্ধতা

সারাদেশে ঝড়বৃষ্টি বজ্রপাতে ১৬ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ২২:৪৭, ১৯ মে ২০২১

সারাদেশে ঝড়বৃষ্টি বজ্রপাতে ১৬ জনের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গত কয়েকদিনের প্রচ- দাবদাহের পর মঙ্গলবার সারাদেশে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত হয়েছে। দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টির সময়ে বজ্রপাতে সারাদেশে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে নেত্রকোনায় ৯, ফরিদপুরে ৩, মানিকগঞ্জে ২, সুনামগঞ্জে ১ এবং মির্জাপুরে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া পৃথক পৃথক ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও আটজন। সারাদিন আকাশ মেঘলা থাকলেও রাজধানীতে বিকেল সোয়া চারটা নাগাদ শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। ঘণ্টাব্যাপী এই বৃষ্টিতে রাজধানীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। হঠাৎ বৃষ্টি সাময়িক স্বস্তি দিলেও পথচারীদের ভোগান্তি বাড়িয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, সারাদিন আকাশ মেঘলা থাকলেও রাজধানীতে বিকেল চারটার পর হঠাৎ করেই ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। ঘণ্টাব্যাপী বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটেছে। টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর মতিঝিল, আরামবাগ, শান্তিনগর, মালিবাগে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ঢাকার আবহাওয়া এমনটাই থাকবে। থেমে থেমে বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে কোথাও কোথাও দমকা হাওয়া থাকতে পারে। তিনি বলেন, টানা ভারি বৃষ্টি না হলে তাপমাত্রা খুব একটা কমবে না। ঢাকা ছাড়াও দেশের উত্তরাঞ্চলের দিকে ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার রাতেও কোথাও কোথাও ঝড়-বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, ঢাকা, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, মাগুরা, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে অস্থায়ীভাবে পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিমি. বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। তাই এসব এলাকার নদীবন্দরসমূহকে এক নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানিয়েছে, জেলার পৃথক তিন উপজেলায় বজ্রপাতের ঘটনায় দুই কৃষকসহ নয় জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আটজন। নিহতদের মধ্যে কেন্দুয়ার দুইজন, খালিয়াজুরীর তিনজন ও মদনের দুইজন। মঙ্গলবার বিকাল দুইটা থেকে তিনটার মধ্যে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। বজ্রপাতে নিহতরা হলেন, কেন্দুয়া উপজেলার পাইকুড়া ইউনিয়নের বৈরাটি গ্রামের বায়েজিদ মিয়া (৪২) ও কান্দিউড়া ইউনিয়নের কু-লী গ্রামের ফজলুর রহমান (৫৫), খালিয়াজুরী উপজেলার মেন্দিপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের অছেক মিয়া (৩২), বিপুল মিয়া (২৮), গাজীপুর ইউনিয়নের বাতুয়াইল গ্রামের মনির হোসেন (৩০) ও মদন উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ফতেপুর গ্রামের হাফেজ মোহাম্মদ শরীফ (১৮) এবং মাওলানা আতাবুর রহমান (২১)। জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুর দুইটা থেকে প্রায় তিনটা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে ভারি বৃষ্টি ও বজ্রপাত হয়। এ সময় কেন্দুয়া উপজেলার বৈরাটি গ্রামের কৃষক বায়েজিদ মিয়া ও কু-লী গ্রামের কৃষক ফজলুর রহমান তাদের নিজ নিজ বাড়ির সামনের ক্ষেতে কাজ করা অবস্থায় বজ্রপাতে মারা যান। অপরদিকে খালিয়াজুরি উপজেলার জগন্নাথপুর ও বাতুয়াইল গ্রামের সাত যুবক বিকেল পৌনে তিনটার দিকে স্থানীয় পুটিয়ার খালে মাছ ধরছিলেন। এ সময় বজ্রপাতে তারা প্রত্যেকে আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জগন্নাথপুর গ্রামের অছেক মিয়া, বিপুল মিয়া ও বাতুয়াইল গ্রামের মনির হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত অপর চারজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠান। অন্যদিকে বিকেল তিনটার দিকে মদন উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ফতেপুর গ্রামের ছেলেরা স্থানীয় একটি পতিত জমিতে ফুটবল খেলার সময় বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে ওই গ্রামের হাফেজ মোহাম্মদ শরীফ (১৮) ও মাওলানা আতাবুর রহমান (২১) ঘটনাস্থলেই মারা যান। একই সময়ে ওই গ্রামের কিশোর রুবিন, রুমান ও তিয়শ্রী ইউনিয়নের বাস্তা গ্রামের ভিক্ষু মিয়ার স্ত্রী কণা বেগম (৪৫) এবং চন্দন মিয়ার স্ত্রী সুরমা আক্তার (৩৮) আহত হন। তাদের মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। কেন্দুয়া থানার ওসি কাজি শাহনেওয়াজ, খালিয়াজুরী থানার ওসি মজিবুর রহমান ও মদন থানার ওসি ফেরদৌস আলম ঘটনাসমূহের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। খালিয়াজুরি উপজেলার ইউএনও এএইচএম আরিফুল ইসলাম জানান, নিহত যুবকদের মরদেহ তাদের পরিবার বাড়িতে নিয়ে গেছেন। মির্জাপুরে নারী ॥ নিজস্ব সংবাদাতা মির্জাপুর থেকে জানান, বজ্রপাতে কোহিনুর বেগম (৩৬) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সন্ধায় উপজেলার আজগানা ইউনিয়নের চিতেশ্বরী টান পলাশতলী গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। আজগানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যার রফিক সিকদারও নারী সদস্য আলেয়া ভুইয়া মঙ্গলবার দুপুরে এই তথ্য নিশ্চিত করেন। কহিনুর বেগম ওই গ্রামের মোঃ লতিফ মিয়ার স্ত্রী বলে জানা গেছে। ফরিদপুরে দুজন ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, ফরিদপুর থেকে জানান, ফরিদপুরে বজ্রপাতে নারীসহ দুজন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ও সাড়ে ৪টার দিকে ফরিদপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে পশ্চিম গঙ্গাবর্দী ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লাডাঙ্গী মহল্লায় এ ঘটনা ঘটে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ফরিদপুর পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লাডাঙ্গী মহল্লায় বজ্রপাতে নিহত হন আনোয়ারা বেগম (৪৫) নামে এক নারী। ঘটনার সময় ওই নারী স্বামী ও ছেলের সঙ্গে মাঠ থেকে ধান নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন। এ সময় বজ্রপাতের এ ঘটনায় তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আনোয়ারা বেগম মোল্লাডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা কৃষক কাবুল শেখের স্ত্রী। তিনি এক মেয়ে ও দুই ছেলের মা। এদিকে বিকেল ৪টার দিকে বজ্রপাতে মারা গেছেন কৃষক কবির মোল্লা (৪৮)। তিনি ফরিদপুর পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম গঙ্গাবর্দী মহল্লার গোপাল মোল্লার ছেলে। মঙ্গলবার তিনি ধান নিয়ে মাঠ থেকে বাড়ি ফেরার পথে এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। কবির মোল্লা বিবাহিত, তিনি দুই মেয়ে, এক ছেলের বাবা। ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। মানিকগঞ্জে ২ জন ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা মানিকগঞ্জ থেকে জানান, মানিকগঞ্জের সদর উপজেলার গিলন্ড পৌলী গ্রামে পৃথক বজ্রপাতে এক স্কুল ছাত্র ও এক দিন মজুর নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন ঘিওর উপজেলার দিন মুজুর আজমত আলী (৫০) ও সদর উপজেলার গিলন্ড গ্রামের স্কুল ছাত্র আসিফ মোল্লা। এ সময় আসিফের বন্ধু আহত হয়, তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সুনামগঞ্জে যুবক ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, সুনামগঞ্জ থেকে জানান, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় বজ্রপাতে আবু তাহের (৩৫) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে। তিনি দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়নের তেগাঙ্গা গ্রামের তাজউদ্দিনের ছেলে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত যুবক হাওড়ে টেলাজাল নিয়ে পার্শ্ববর্তী হাওড়ে মাছ ধরতে যান। এ সময় হঠাৎ করে ঝড়ো বাতাস ও প্রচ- বৃষ্টি শুরু হলে ওই যুবক ঝড়ের কবলে পরেন এবং পরে বৃষ্টিপাত থেকে রক্ষা পেতে দৌড়ে দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দিকে আশ্রয় নিতে গেলে পথেই বজ্রপাত তার মৃত্যু হয়।
×