ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সব খাতে গবেষণায় আলাদা বরাদ্দ রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

দুই লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট অনুমোদন

প্রকাশিত: ২২:৪৭, ১৯ মে ২০২১

দুই লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট অনুমোদন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দুই লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে পাওয়া যাবে ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা। বাকি ৮৮ হাজার ২৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা আসবে বৈদেশিক উৎস থেকে আর স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা কর্পোরেশন থেকে পাওয়া যাবে ১১ হাজার ৪৬৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। মঙ্গলবার গণভবন থেকে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষ এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবরা বৈঠকে যুক্ত হন। বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান। এ সময় পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, সব খাতে গবেষণার জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের নিজেদের প্রয়োজনে গবেষণা করবে। কৃষি মন্ত্রণালয় করবে তাদের কৃষির প্রয়োজনে। এজন্য প্রত্যেক সেক্টরে গবেষণার জন্য আলাদা ফান্ড থাকতে হবে। বেশি বেশি গবেষণা করতে হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, করোনার কারণে অনেক প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারিনি। এগুলোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে শেষ করতে হবে। তার মধ্যে যেগুলো সরাসরি জনগণের কল্যাণের সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেগুলোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে বলেছেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, অন্যান্য বছরের মতো এবারও দেশজ সম্পদ, বৈদেশিক অর্থায়ন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, দারিদ্র্য হ্রাস তথা জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে দীর্ঘ ও মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা কৌশল এবং লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ২০২১-২২ অর্থবছরের এডিপি প্রণয়ন করা হয়েছে। এডিপিতে দারিদ্র্য বিমোচন, জিডিপির প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরণ, কর্মসংস্থান সৃজন ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার বিবেচনায় রেখে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ প্রদানের ক্ষেত্রে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাত, বিদ্যুত উৎপাদন, আইসিটি শিক্ষার উন্নয়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত প্রকল্প, সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে এলাকাভিত্তিক প্রকল্প ও সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে (পিপিপি) বাস্তবায়িত নতুন প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এম এ মান্নান বলেন, আগামী অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় ১ হাজার ৪২৬টি প্রকল্পের মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ৩০৮টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১১৮টি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা/কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে ৮৯টি প্রকল্পসহ মোট ১ হাজার ৫১৫টি প্রকল্পের অনুকূলে এডিপির এই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যে ১০টি খাত সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে ॥ পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৬১ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে; যা এডিপির মোট বরাদ্দের ২৭.৩৫ শতাংশ। বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে প্রায় ৪৫ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মোট এডিপির ২০.৩৬ শতাংশ বরাদ্দ পাচ্ছে খাতটি। গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলী খাতে প্রায় ২৩ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা মোট এডিপির ১০.৫৪ শতাংশ। শিক্ষা খাত পাচ্ছে প্রায় ২৩ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা। মোট এডিপির ১০.২৯ শতাংশ অর্থ এ খাত পাবে। স্বাস্থ্য খাত পাচ্ছে প্রায় ১৭ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে এ খাত মোট এডিপির ৭.৬৮ শতাংশ বরাদ্দ পাচ্ছে। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে প্রায় ১৪ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে; যা মোট এডিপির ৬.৩৪ শতাংশ। পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি বিভাগ পাচ্ছে প্রায় ৮ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা। যা মোট এডিপির ৩.৭৮ শতাংশ। নতুন অর্থবছরে কৃষিতে দেয়া হয়েছে প্রায় ৭ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। এটি মোট এডিপির ৩.৪০ শতাংশ। শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাত পাচ্ছে প্রায় ৪ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ খাত পাচ্ছে মোট বরাদ্দের ২.০৬ শতাংশ। বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রায় ৩ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে; যা মোট এডিপি বরাদ্দের ১.৫৯ শতাংশ। যে ১০টি বিভাগ মোট এডিপির ৯৩.৩৯ শতাংশ বরাদ্দ পেয়েছে ॥ স্থানীয় সরকার বিভাগ (প্রায় ৩৩ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা), সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ (প্রায় ২৮ হাজার ৪২ কোটি টাকা), বিদ্যুত বিভাগ (প্রায় ২৫ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় (প্রায় ২০ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা), রেলপথ মন্ত্রণালয় (প্রায় ১৩ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা), স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ (প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা), মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ (প্রায় ১১ হাজার ৯২০ কোটি টাকা), সেতু বিভাগ (৯ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা), প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় (প্রায় ৮ হাজার ২২ কোটি টাকা) ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় (প্রায় ৬ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা) বরাদ্দ পেয়েছে। সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত ১০টি প্রকল্প ॥ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প পেয়েছে প্রায় ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। মাতারবাড়ি ২ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল পাওয়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্ট পেয়েছে প্রায় ৬ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচী (পিইডিপি-৪) পেয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৬) পেয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ (১ম সংশোধিত) পেয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্পে মোট ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প পেয়েছে প্রায় ৩ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। এক্সপানশন এ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া প্রকল্পে দেয়া হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৫১ কোটি টাকা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (১ম পর্যায়) (১ম সংশোধিত) প্রকল্প পেয়েছে ২ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা।
×