ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পেনশনের টাকায় প্রতিষ্ঠিত পাঠাগার তালাবদ্ধ

প্রকাশিত: ১৩:১৪, ১৮ মে ২০২১

পেনশনের টাকায় প্রতিষ্ঠিত পাঠাগার তালাবদ্ধ

নিজস্ব সংবাদদাতা, হবিগঞ্জ ॥ হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার উত্তরসুর গ্রামে জন্ম নেওয়া সৈয়দ আব্দুল্লাহ গুরুতর অসুস্থ। তিনি খ্যাতিমান ইতিহাসবিদ, বহু কালজয়ী ঐতিহাসিক গ্রন্থের লেখক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বঙ্গবন্ধু গবেষক ও তরফ সাহিত্য পরিষদের সভাপতি। তিনি অসুস্থ থাকায় নিজ বাড়িতে তার প্রতিষ্ঠিত পাঠাগারটি আজ তালাবদ্ধ রয়েছে। তৃণমূল মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াতে তিনি পেনশনের টাকা দিয়ে এ পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর মলদ্বারের ফেস্টুলা-পাইলস এখন জটিল আকার ধারণ করেছে। খ্যাতিমান এই লেখকের উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রচুর অর্থ প্রয়োজন। জরুরী ভিত্তিতে দরকার সরকারী ও বেসরকারীভাবে আর্থিক সহযোগীতার। বাহুবল উপজেলার এই কৃতি সন্তান বর্তমানে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সার্জারী বিভাগের একজন ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার একমাত্র সন্তান সাংবাদিক সৈয়দ আনোয়ার আব্দুল্লাহ জানান, সিলেটের পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তিনি অনেকদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় কিছুদিন হোমিওপ্যাথি ঔষধ সেবন করেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। বর্তমানে সাভারে ভাড়া বাসায় রেখে চিকিৎসা চলছে। তার ব্যয়বহুল চিকিৎসা শেষ পর্যন্ত কতটুকু চালিয়ে যাওয়া যাবে এনিয়ে তারা শঙ্কায় রয়েছেন। আফসোস করে তার ছেলে বলেন, তিনি রাজধানীতে থেকে সাহিত্যচর্চা করলে আজ সরকারী খরচে হয়তো বিদেশে চিকিৎসা হতো তার। কিন্তু জীবনের পড়ন্ত বেলায় মফস্বলে থাকা এই সুবিখ্যাত লেখকের খোঁজ নেয়ার লোকও আজ নেই। বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান এই ইতিহাসবিদ লিখছেন ষাটের দশক থেকে। শেকড়সন্ধানী গবেষক হিসেবে সর্বমহলে সমাদৃত তিনি। উনসত্তরের গণআন্দোলনে তিনি রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক হিসেবেও তিনি সর্বজন স্বীকৃত। পলাশি থেকে শুরু করে একাত্তরের মুক্তিসংগ্রাম পর্যন্ত দেশের প্রতিটি স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস ও সেই ইতিহাসের নায়কদের নিয়ে সৈয়দ আব্দুল্লাহ লিখেছেন অনেক গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও গ্রন্থ। তার সর্বশেষ সাড়া জাগানো গ্রন্থ ‘সিলেটে বঙ্গবন্ধু’। গ্রন্থটি ইতিহাসের পাঠকের গুরুত্বপূর্ণ আকড় হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আঞ্চলিক ইতিহাসভিত্তিক গ্রন্থ বাংলাদেশে এটাই প্রথম। সাহিত্য সাধনা ও স্বাধীনতা আন্দোলনে এ পরিবারের অবদান অনেক। বাংলা রম্য গদ্যের নির্মাতা বহুভাষাবিদ পন্ডিত কালজয়ী কথাসাহিত্যিক ড. সৈয়দ মুজতবা আলী এই পরিবারেরই কৃতিসন্তান। সৈয়দ আব্দুল্লাহ সিলেট অঞ্চলের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের জীবন্ত কিংবদন্তি বলা চলে। তার জীবন ও কর্ম নিয়ে ব্রিটেনের জনপ্রিয় টিভি ‘চ্যানেল-এস’ দীর্ঘ প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করে প্রচার করেছে। শিক্ষকতার চাকরি অবসর গ্রহণের পর এই সাহিত্যসাধক পেনশনের সমুদয় অর্থ দিয়ে প্রকাশ করেছেন নিজের লেখা বেশ কিছু ঐতিহাসিক গবেষণাগ্রন্থ। নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন পাঠাগার। তিনি অসুস্থ থাকায় তার বিশাল বইয়ের সংগ্রহশালা তালাবদ্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় পাঠাগারের মূল্যবান বইগুলো নষ্ট হচ্ছে। অসুস্থ অবস্থায় এসব জেনে সৈয়দ আব্দুল্লাহ আরো ভেঙ্গে পড়েছেন। কারণ জীবনের সব উপার্জন এ পাঠাগারে তিনি বিলিয়ে দিয়েছেন। সংগ্রহশালায় বইগুলো নষ্ট হচ্ছে জেনে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, জীবনে কি পেলাম চিন্তা করার সময় প্রায় শেষ। তবে সারা জীবনের সংগ্রহ পাঠাগারটি রক্ষার জন্য তার আকুতি। বাহুবল প্রেসক্লাবের সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ আব্দুল মান্নান বলেন, সৈয়দ আব্দুল্লাহ স্যার গুরুত্বর অসুস্থ। তার চিকিৎসা ব্যয়বহুল। নিজ নিজ অবস্থান থেকে আর্থিক অনুদান নিয়ে স্যারের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানাই।
×