ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে পড়তে আসা ফিলিস্তিনী শিক্ষার্থীরা উদ্বেগে

প্রকাশিত: ১২:৫১, ১৮ মে ২০২১

বরিশালে পড়তে আসা ফিলিস্তিনী শিক্ষার্থীরা উদ্বেগে

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ ইসরায়েলের নিক্ষিপ্ত বোমায় যখন ফিলিস্তিনের গাজার ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, তখন সেখান থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশের বরিশালে অবস্থান করা ৩০ জন ফিলিস্তিনী নাগরিক (শিক্ষার্থী) তাদের পরিবার ও স্বজনদের জন্য চিন্তিত হয়ে পরেছেন। তাদের কারো কারো বাড়ি ইতোমধ্যে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে মাটির সাথে। অনেকের পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। জীবদ্দশায় পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের সাথে এসব শিক্ষার্থীদের আর কোনদিন দেখা হবে কিনা তা নিয়ে তারা (শিক্ষার্থী) এখন চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পরেছেন। বরিশালে পড়তে এসেছেন ফিলিস্তিনী নাগরিকরা। এখানে মূলত চিকিৎসা ও প্রকৌশল বিদ্যায় পড়াশুনা করছেন তারা। এরকম ৩০ জন ফিলিস্তিনী শিক্ষার্থী রয়েছেন বরিশালে। তাদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থী রয়েছেন চারজন। পুরো বাংলাদেশে অধ্যয়নরত ফিলিস্তিনী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২০ জনের অধিক। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজের শেষবর্ষের শিক্ষার্থী এবং কলেজের মঈনুল হায়দার ছাত্রাবাসের আবাসিক ছাত্র মোহাম্মদ ইলিওয়ার বাড়ি ফিলিস্তিনের গাজায়। তিনি বলেন, নিরীহ মানুষকে গুলি করে মারা হচ্ছে। নারী শিশুদের ওপর বর্বর হামলা চালানো হচ্ছে। এখন সাংবাদিক ও প্রেস কর্মকর্তাদের ওপরও হামলা চালাচ্ছে সন্ত্রাসী ইসরায়েল। তিনি বলেন, আমাদের বাড়ির আশপাশে অনেক বোমা পরেছে। সেখানে কোনো মানুষই থাকছে না। আমার বাবা, মা, বড় বোন, বড় ভাই ও তিন ছোট ভাই এখন নিকট আত্মীয় বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। আমাদের বাড়ির এলাকা এখন রেড জোন। সেখাকার কী অবস্থা জানিনা। খোঁজ নিতে পারছি না। গাজায় এখন কোনো কিছুই নিরাপদ নয়। আমরা ফিলিস্তিনের জন্য সবার কাছে দোয়া চাচ্ছি। একই কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ আতিয়া বলেন, আমার বাড়ি ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে। সেখানেও প্রতিনিয়ত বোমা হামলা চালানো হচ্ছে। আমাদের ওখানে ১১ জন শহীদ হয়েছে ইসরায়েলের হামলায়। ওয়েস্ট ব্যাংকের অবস্থাও খুব কঠিন ও খারাপ। প্রতিনিয়ত সাংবাদিক ও মেডিক্যাল স্টাফদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। সিভিলিয়ানদের গুলি করে মারা হচ্ছে। বিশ্ব নেতাদের কাছে আমরা এর প্রতিকার চাই। আমাদের পরিবারের সদস্যরা সেখানে বেশ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। জীবদ্দশায় তাদের সাথে আমাদের আর কোনদিন দেখা হবে কিনা তা নিয়ে আমরা এখন চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পরেছি। বাংলাদেশে ফিলিস্তিন শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘ইউনিয়ন অফ প্যালেস্টাইন স্টুডেন্টস বাংলাদেশ’র সভাপতি ও বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজের শেষবর্ষের ছাত্র হাতেম কে ওয়াই রাবা অনেকটা ক্ষোভের সাথে বলেন, ইসরায়েল গাজার নিরীহ নাগরিক এবং শিশুদের টার্গেট করেছে। এয়ার স্ট্রাইক করে তাদের হত্যা করা হচ্ছে। এখন আন্তর্জাতিক কমিউনিটি কোথায়, আন্তর্জাতিক আইন কোথায়? এখানে মানবতা কোথায়? কী হচ্ছে গাজায়। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নীরবতা আজ আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। তিনি আরও বলেন, আমার বাড়ি নর্থ গাজায়। গত শনিবার আছরের নামাজের পর বোমা হামলা করে তা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। গাজায় কেহই সুরক্ষিত নয়। প্রতিনিয়ত বোমার শব্দে আমার ছোট ভাই আতঙ্কিত। আমার ছোট ভাই ও বোনকে নিয়ে বাবা-মা বর্তমানে নিকট স্বজনদের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন।
×