ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মধু মাসের জনপ্রিয় ফল কচি তাল

প্রকাশিত: ১২:৪৪, ১৮ মে ২০২১

মধু মাসের জনপ্রিয় ফল কচি তাল

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ প্রচন্ড তাপদাহে দুর্বিষহ হয়ে উঠছে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন। গত এক সপ্তাহ থেকে বরিশালের কোথাও বৃষ্টির দেখা নেই। আর এর মাঝেই একটু স্বস্তি পেতে সৌখিন ক্রেতা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের কাছে মধু মাসের ফল কচি তালের শাঁসের কদর বেড়ে গেছে। বরিশাল নগরীসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর সদরগুলোর মোড়ে মোড়ে হরদমে বিক্রি হচ্ছে তাল শাঁস। আবার কোথাও কোথাও ভ্যানযোগে পাড়া-মহল্লাতেও ঘুরে ঘুরে তাল শাঁস বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে। জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলা সদরে তাল শাঁস বিক্রেতা ইসমাইল হোসেন জানান, স্থানীয়ভাবে তাল শাঁসকে পানিতাল বলা হয়। প্রতিবছর মধু মাসে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে পাইকারী দামে তাল শাঁস ক্রয় করে এনে ক্রেতাদের কাছে তিনি বিক্রি করে থাকেন। সেক্ষেত্রে গাছ থেকে পাড়া এবং বিক্রির উদ্দেশ্যে বাজার পর্যন্ত আনা সবখরচই তাকে বহন করতে হয়। আর গাছ মালিককে তাল কেটে নামানোর আগেই টাকা পরিশোধ করতে হয়। তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলায় উপজেলার অসংখ্য তাল গাছ বিনষ্ট হয়ে গেছে। আর সরকারের উদ্যোগে বজ্রপাত মোকাবেলায় নতুন করে যে তাল গাছ রোপন করা হয়েছে সেগুলো এখন অনেক ছোট। আরো বেশ কয়েক বছর পর সেগুলোতে ফল দেখা যাবে। তিনি বলেন, এবার ফলন কমের কারণে তাল শাঁসের কিছুটা সংকটও রয়েছে। তবে তাল শাঁসের দাম বেশ ভালো পাওয়া যাচ্ছে। উজিরপুর উপজেলা সদরের বিক্রেতা ননী গোপাল বলেন, তাল শাঁস সংকটের কারণে কিছুটা চড়ামূল্যে এ মৌসুমী ফল বিক্রি করতে হচ্ছে। শহর এলাকায় তালের প্রতিটি শাঁস (স্থানীয়ভাবে চোখ বলা হয়) পাঁচ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেক্ষেত্রে একটি তিনচোখের পানিতাল ১৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আর গ্রামাঞ্চলে বহন খরচের উপর নির্ভর করে সেটি ১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, গরম বাড়ার কারণে বর্তমানে তাল শাঁসের বিক্রি বেশ ভালো। কেউ একটা দুইটা কিনছেন, আবার অনেক সৌখিন ক্রেতা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য পীর (একবোটা) হিসেবে তাল ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন। ক্রেতা জহির খান বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার তাল শাঁসের দাম অনেকটাই বেশি। তারপরেও মৌসুমী ও সুস্বাদু ফল হওয়ায় তাল শাঁসের প্রতি তাদের আগ্রহের কোন কমতি নেই। নগরীর নতুন বাজার এলাকার খুচরা তাল শাঁস বিক্রেতা সুজন ঘরামী জানান, প্রতিদিন তিনি দুই থেকে তিনশ’ তাল বিক্রি করেন। খরচ বাদে তার দৈনিক গড়ে সাত থেকে আটশ’ টাকা আয় হয়। বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা গ্রামের ফোরকান আলী তাল শাঁস নিয়ে এসেছেন বরিশাল শহরে। তিনি জানান, প্রতিবছর এ মৌসুমে তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে পানি তাল সংগ্রহ করেন। প্রত্যেকটি গাছ তাল অনুপাতে চার থেকে পাঁচশ’ টাকায় কিনে রাখেন। এছাড়া গাছ থেকে তাল পাড়তে গাছ প্রতি দুই থেকে আড়াইশ’ টাকা মজুরী দিতে হয়। এছাড়া শহরে আনতে পরিবহণ খরচ লাগে। তাতে প্রতিটি তাল কিনতে গড়ে পাঁচ টাকা খরচ হয়। আর তিনি প্রত্যেকটি তাল গড়ে সাত থেকে আট টাকা হিসেবে পাইকারী বিক্রি করেন।
×