ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জামিন পায়নি প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা, কারাগারে পাঠানোর আদেশ

প্রকাশিত: ১২:২৫, ১৮ মে ২০২১

জামিন পায়নি প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা, কারাগারে পাঠানোর আদেশ

অনলাইন ডেস্ক ॥ অনুমতি ছাড়া করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের সরকারী গুরুত্বপূর্ণ নথি শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকানো এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নথির ছবি তোলার অভিযোগে দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদন খারিজ করেছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার একটু পরে রোজিনা ইসলামকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে নেওয়া হয়। ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম তাঁর রিমান্ড নাকচ করেন। তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। জামিন শুনানির জন্য আগামী বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেছেন আদালত। মঙ্গলবার (১৮ মে) পুরান ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক এ নির্দেশ দেন। মঙ্গলবার (১৮ মে) সকাল পৌনে ৮টার দিকে শাহবাগ থানা থেকে তাকে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে নেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ১০টার পর তাকে আদালতে তোলা হয়। এ সময় পরবর্তী তদন্তের জন্য পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আসামিপক্ষের আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জামিনের আবেদন করেন। অপরদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক রিমান্ড নামঞ্জুর করেন। প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করা হয়। মামলার নম্বর ১৬। দন্ডবিধি ৩৭৯ এবং ৪১১ অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট ১৯২৩ এর ৩/ ৫ এর ধারায় এ মামলা করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপ-সচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী। এই মামলার একমাত্র আসামি করা হয়েছে রোজিনা ইসলামকে। সোমবার (১৭ মে) রাতে শাহবাগ থানার এডিসি হারুনুর রশিদ বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। এর আগে সোমবার (১৭ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে রোজিনা ইসলামকে সচিবালয় থেকে পুলিশি পাহারায় শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে সরকারী নথি সরানো ও ছবি তোলার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। মামলার অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে, সোমবার দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের একান্ত সচিবের দপ্তরে রোজিনা ইসলাম নামে একজন নারী প্রবেশ করে। এসময় একান্ত সচিব দাপ্তরিক কাজে সচিবের কক্ষে অবস্থান করছিলেন। উক্ত নারী দাফতরিক গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পত্র শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকানো এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছবি তোলেন। এসময় সচিব দপ্তরের দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য মো. মিজানুর রহমান খান তা দেখতে পান এবং বাধা প্রদান করেন এবং তিনি নির্ধারিত কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে কক্ষে কি করছেন মর্মে জানতে চান। এসময় তিনি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন। পরে অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেসা বেগম, উপসচিব জাকিয়া পারভিন, সিনিয়র সহকারী সচিব শারমিন সুলতানা, সচিবের একান্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম ভূঞা, সিনিয়র সহকারী সচিব মোসাদ্দেক মেহেদী ইমাম, অফিস সহায়ক মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম, সোহরাব হোসেনসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও স্টাফরা ঘটনাস্থলে আসেন। অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেসা বেগম তল্লাশি করে তার কাছ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, ডকুমেন্টসের ছবিসহ মোবাইল উদ্ধার করেন। এতে প্রতীয়মান হয় যে, তিনি ডকুমেন্টসগুলো চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে শাহবাগ থানার মহিলা পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে তাকে জিম্মায় নেন। বর্তমানে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ভ্যাকসিন ক্রয়/ সংগ্রহ সংক্রান্ত নেগোসিয়েশন চলমান রয়েছে এবং খসড়া সমঝোতা স্মারক ও নন ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট প্রণয়ন কাজ চলমান রয়েছে৷ সমঝোতা স্বাক্ষর নিয়ে পক্ষদ্বয়ের মাঝে প্রতিনিয়ত পত্র ও ই মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ হচ্ছে, যেখানে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সন্নিবেশিত রয়েছে। উক্ত নারী যেসব ছবি তুলেছেন তার মধ্যে উল্লিখিত কাগজপত্রও ছিল। এসকল তথ্য জনসমাগমে প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ট দেশ সমূহের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উল্লিখিত কাগজপত্র গুরুত্বপূর্ণ বিধায় মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত আছে, যা পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রদর্শন করা হবে। এ বিষয়ে, রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে রোজিনাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, উনি সরকারী গোপন নথি সরাচ্ছিলেন। ওনার দেহ তল্লাশি করে নথি পাওয়া গেছে। রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় অফিশিয়াল সিক্রেট আইনের (১৯২৩) ৩ ধারায় মামলা হয়েছে। উল্লেখ্য, অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩-এ আইনের ৩ ধারায় বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ স্থানে যদি কেউ যায় বা যেতে উদ্যত হয় কিংবা ওই স্থানের কোনো নকশা বা স্কেচ তৈরি করে বা কোনো গোপন তথ্য সংগ্রহ বা প্রকাশ করে তবে সে অপরাধী হবে। ৩ (ক) ধারায় বলা হয়েছে যে, নিষিদ্ধ স্থানের কোনো ফটো, স্কেচ বা নক্সা কেউ প্রকাশ করতে পারবে না। ৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনো বিদেশি এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে খবর সংগ্রহ করা যাবে না। ৫ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনো ব্যক্তি গোপনে কোনো সংবাদ পেয়ে থাকলে সেই সংবাদ প্রকাশ করতে পারবে না। কোনো সংবাদপত্র যদি কোনো গোপন সংবাদ প্রকাশ করে তবে প্রতিবেদক, সম্পাদক, মুদ্রাকর এবং প্রকাশক অপরাধী হবেন। এসব কাজে সহায়তা করা অপরাধ বলে গণ্য হবে। ৩৭৯/৪১১ এই ধারার অর্থ হলো,যদি কোন ব্যক্তি অন্যের অজান্তে কোন জিনিস চুরি করেন তবে ৩৭৯ ধারায় মামলা দেওয়া হয়,আর যদি উক্ত মালামাল সহ ঐ আসামিকে ধরা হয় বা গ্রেফতার করা হয় তবে ৪১১ ধারায় রিকভারি দেখানো হয় । এ ক্ষেত্রে আসামির সাজা হবেই বলে আইনে আছে ।
×