ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা সহজ করার সূচক সম্পর্কে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান

তিন-চার বছর ধরে সংস্কার শুরু করেছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২৩:২২, ১৮ মে ২০২১

তিন-চার বছর ধরে সংস্কার শুরু করেছে বাংলাদেশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তিন-চার বছর ধরে বিশ্বব্যাংকের সূচক ধরে সংস্কার শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা সহজ করার সূচকে এখনই বাংলাদেশ ৯৯ নম্বরে উঠে আসবে, বিষয়টি এত সহজ নয়। এটি আর এখন বিশ্বাস করি না। কারণ, ব্যবসা পরিস্থিতির উন্নতির কথা যতক্ষণ ব্যবসায়ীরা না বলবেন, ততক্ষণ বিশ্বব্যাংক পয়েন্ট দেবে না। আবার ব্যবসায়ীরাও বিশ্বব্যাংকের উপসূচকগুলো সম্পর্কে তেমন একটা সচেতন নন। সোমবার ব্যবসা সহজ করার সূচক নিয়ে এক ওয়েবিনারে সিরাজুল ইসলাম এসব কথা বলেন। ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা সহজ করার সূচকে বাংলাদেশ দুই অঙ্কের ঘরে (৯৯ নম্বর) নামানোর লক্ষ্য ঠিক করা হয়। সর্বশেষ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৮তম। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট (বিইআই) যৌথভাবে এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের কাছে সরকারী প্রতিষ্ঠানের অনেক কর্মকর্তার অনৈতিকভাবে টাকা চাওয়ার বিষয়টিও স্বীকার করেন সিরাজুল ইসলাম। সিরাজুল ইসলাম একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, কিছুদিন আগে একজন বিদেশী বিনিয়োগকারী আমার কাছে অভিযোগ করেন যে তাঁর কাছে অনৈতিকভাবে অর্থ চেয়ে নাজেহাল করা হয়েছে। অনৈতিক অর্থ না দেয়ায় যা করযোগ্য নয়, তা-ও কর দাবি করা হয়েছে। ওই বিদেশী বিনিয়োগকারী বিডার কাছে সমাধান চেয়েছেন। এই ধরনের অনৈতিক লেনদেনের বিষয় আছে, যা ব্যবসা সহজ করার ক্ষেত্রে বাধা। অনুষ্ঠানের কয়েকজন ব্যবসায়ী এই ধরনের অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ করলেও বিডার চেয়ারম্যান তা স্বীকার করে নেন। ওই অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী, সাবেক আমলাসহ বিভিন্ন পেশাজীবী শ্রেণীর প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। বিডার পরিচালক জীবন কে সাহা রায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সেখানে বিডা গত কয়েক বছরে কী ধরনের সংস্কার করা হয়েছে, তা তুলে ধরা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, মাঠপর্যায়ে এক জমি নামজারি করতে ৭২ হাজার টাকা লাগে। কেন চাওয়া হয়, এর কোন উত্তর নেই। আরজেএসসিতে নিবন্ধন নিতে গেলে সরাসরি কাজ হয় না। সেখানে গেলে বলা হয়, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আসতে হবে। এভাবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের চক্র গড়ে উঠেছে। বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ন কবির বলেন, কোন অফিসে ফাইল আটকে থাকলে কাউকে বললেও বিপদে পড়বেন। আপনাকে বলবে, ফাইল তো পাওয়া যাচ্ছে না। অনুষ্ঠানের সভাপতি ও ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) সভাপতি হুমায়ন রশিদ বলেন, এমন খাতও আছে, যেখানে ব্যবসা শুরু করতে ২৮টি লাইসেন্স লাগে। প্রতিটি লাইসেন্সের আবেদন যদি নির্দিষ্ট কার্যালয়ে এক মাস পড়ে থাকে, তাহলে ২৮ মাস লাগবে। এমন পরিস্থিতিতে কে ব্যবসা করতে আসবে? চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যাডমিরাল এম শাহজাহান জানান, সরকারী উন্নয়ন সংস্থা ঠেঙ্গামারা সবুজ সংঘের (টিএমএসএস) নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা বলেন, নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা মনে করে, তাদের কাজ নিয়ন্ত্রণ করা। তারা ব্যবসা সহজ করায় মনোযোগ দেয় না। ব্যবসা করতে মাঠপর্যায়ে কী সমস্যা হয়, তা নিয়ন্ত্রণকারীরা শোনেন না। বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ন কবির বলেন, কোন অফিসে ফাইল আটকে থাকলে কাউকে বললেও বিপদে পড়বেন। আপনাকে বলবে, ফাইল তো পাওয়া যাচ্ছে না। অনুষ্ঠানের সভাপতি ও ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) সভাপতি হুমায়ন রশিদ বলেন, এমন খাতও আছে, যেখানে ব্যবসা শুরু করতে ২৮টি লাইসেন্স লাগে। প্রতিটি লাইসেন্সের আবেদন যদি নির্দিষ্ট কার্যালয়ে এক মাস পড়ে থাকে, তাহলে ২৮ মাস লাগবে। এমন পরিস্থিতিতে কে ব্যবসা করতে আসবে? লে. জেনারেল (অব) হারুন অর রশিদ বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পগুলোকে সহযোগিতার জন্য সরকার ক্ষুদ্র ব্যবসায় গত দেড় বছর বিভিন্ন সেক্টরে কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছে। আমাদের এই পোল্ট্রি শিল্প সেক্টরেও সরকার হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছে। কিন্তু কোথায় গেল সেই সব প্রণোদনা, আমি জানি না। গেল ঈদে আমাদের কর্মীরা সবাই ঈদি চায়, কিন্তু আমরা তাদের হাতে কিছুই দিতে পারিনি। তিনি বলেন, একটি ক্ষুদ্র ব্যবসা করতে গেলে দেশে ৯টা অথরিটির কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। আবার প্রতিবছরে সেগুলো রিনিউ করতে হয়। অফিসে দৌড়াদৌড়ি করতেই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের হতাশ হয়ে যেতে হয়। ফলে ব্যবসা করার আগেই আবার তাই তারা হাত গুটিয়ে ফেলে।
×