ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আজ এনইসি সভায় অনুমোদন পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ ৬১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা শিক্ষা ও প্রযুক্তি থেকে বিদ্যুত খাতে যাচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্প স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পাচ্ছে ১৭ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা

সোয়া দুই লাখ কোটি টাকার এডিপি

প্রকাশিত: ২৩:০৭, ১৮ মে ২০২১

সোয়া দুই লাখ কোটি টাকার এডিপি

কাওসার রহমান ॥ আসছে নতুন অর্থবছরের বাজেট। বাজেট মানেই নতুন উন্নয়ন পরিকল্পনা। নতুন নতুন প্রকল্পের সমাবেশ, চলমান প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ বৃদ্ধি। সে লক্ষ্যেই পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় নতুন অর্থবছরের বাজেটের নতুন উন্নয়ন কর্মসূচী চূড়ান্ত করেছে। সোয়া ২ লাখ কোটি টাকার বেশি নতুন এই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় অনুমোদন করা হবে। গত ৯ মে পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় প্রস্তাবটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। চূড়ান্ত করা প্রস্তাবে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা; যা চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির চেয়ে ২০ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা বেশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার এনইসি সভায় উত্থাপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী কোন খাতে বরাদ্দ সংযোজন বা বিয়োজন না করলে এডিপির এই প্রাক্কলনই অনুমোদন পাবে বলে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা আশা করছেন। উল্লেখ্য, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার। আগামী অর্থবছরের জন্য এডিপির যে প্রাক্কলন পরিকল্পনা কমিশনের সভায় চূড়ান্ত করা হয়েছে, তার মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা বা মোট এডিপির ৬১ শতাংশ। আর বাকি ৮৮ হাজার ২৫ কোটি টাকা পাওয়া যাবে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে। এবারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে খাতভিত্তিক বরাদ্দের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আসছে। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে বিদ্যুত মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তরিত হচ্ছে। শুরু থেকেই পাঁচ বছর ধরে প্রকল্পটি দেখভাল করে আসছিল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। সোয়া লাখ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার এই বিদ্যুত কেন্দ্রটির নতুন দায়িত্ব পাচ্ছে বিদ্যুত ও জ্বালানি খাত। যেহেতু বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিদ্যুত উৎপাদনের কোন সম্পর্ক নেই, সে জন্য প্রকল্পটি শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত থেকে আগামী অর্থবছরে চলে যাচ্ছে বিদ্যুত খাতে। ফলে ১০ বছর মেয়াদের রূপপুর বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্পটি আগামী পাঁচ বছর বিদ্যুত খাতেই থাকবে। বর্তমানে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পারমাণবিক শক্তি কমিশন। আগামীতেও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, তবে এই প্রকল্পের বরাদ্দ দেখানো হবে বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে। এবারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর বিশেষ বৈশিষ্ট্য এটিই। এর ফলে সর্বোচ্চ বরাদ্দের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ওঠানামা হবে এডিপিতে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরে এডিপিতে রূপপুর বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। ফলে, বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের বরাদ্দ দাঁড়াচ্ছে ৪৫ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র থেকেই আসছে এ খাতের প্রায় ৪০ শতাংশ বরাদ্দ। সেই সুবাদে বিদ্যুত ও জ্বালানি খাত এডিপিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে। অর্থাৎ এডিপিতে মোট ১৫টি খাতের বরাদ্দের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দের তালিকায় উঠে আসছে বিদ্যুত ও জ্বালানি খাত। অন্যদিকে, দীর্ঘদিন ধরে বরাদ্দের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করা শিক্ষা, ধর্ম ও প্রযুক্তি খাত এবার দ্বিতীয় স্থান থেকে চতুর্থ স্থানে নেমে যাবে। আগামী অর্থবছরে শিক্ষা খাত বরাদ্দ পাচ্ছে ২৩ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা। আর বরাবরের মতো ৬১ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যোগাযোগ খাতই বরাদ্দ তালিকায় প্রথম স্থানে আছে। উল্লেখ্য, গত পাঁচ বছর ধরে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পেই সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে এডিপিতে সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ নিয়ে একক প্রকল্প হিসেবে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে রূপপুর বিদ্যুত কেন্দ্র। নতুন অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটে ১৫টি খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত এ খাতের জন্য ৬১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাজেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেতে যাচ্ছে বিদ্যুত ও জ্বালানি খাত। এই খাতে ৪৫ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে গৃহায়ণ খাতে, ২৩ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা। এর পর চতুর্থ অবস্থানে আছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ২৩ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা। কোন্ খাতে বরাদ্দ বাড়ল বা কমল সেটা নিয়ে অবশ্য চলমান করোনা মহামারীর মধ্যে মানুষের আগ্রহ কম। মানুষের আগ্রহ বেশি স্থাস্থ্য খাত নিয়ে। যদিও স্বাস্থ্য খাতে টাকা বরাদ্দ দিলেও সেই টাকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় খরচ করতে পারে না। ফলে বছর শেষে টাকা ফেরত যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তা সত্ত্বেও আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে ১৭ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৪ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। এছাড়া, করোনা মোকাবেলায় চলতি বাজেটের মতো আগামী বাজেটেও টিকা কেনার জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। মহামারী কোভিড-১৯ করোনার মধ্যে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকার বড় প্রকল্পগুলোর প্রতি আগামী অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটে গুরুত্ব দিচ্ছে। ফলে এসকল প্রকল্পে হয় বরাদ্দ বেড়েছে না হয় আগের মতোই বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ সকল প্রকল্পের মধ্যে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রকল্পটি হচ্ছে পদ্মা সেতু। সরকার ২০২২ সালের জুনের মধ্যে স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু করতে চায়। ওই সময়ের মধ্যে প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে পদ্মা সেতুর বিপরীতে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। সর্বোচ্চ বরাদ্দের প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য আগামী অর্থবছরে ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে একক প্রকল্প হিসেবে রূপপুর বিদ্যুত কেন্দ্র সবচেয়ে বেশি অর্থ বরাদ্দ পেতে যাচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে রাজধানীর আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল উদ্বোধন করতে চায় সরকার। তাই নতুন বাজেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে মেট্রোরেল প্রকল্পটি। যার পরিমাণ ৪ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে মাতারবাড়ী বিদ্যুত কেন্দ্র। এই প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রাখতে আগামী বছরের উন্নয়ন বাজেটে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পে ৩ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পে ১ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা, পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল নির্মাণে ১ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা এবং পায়রা বন্দর বরাদ্দ পেতে যাচ্ছে ১ হাজার ১০৯ কোটি টাকা। নতুন ১৫১৫ প্রকল্প ॥ আগামী অর্থবছরের এডিপিতে মোট ১ হাজার ৫১৫টি নতুন প্রকল্প যুক্ত হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ৩০৮টি। কারিগরি সহায়তার প্রকল্প ১১৮টি এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত হবে এমন প্রকল্প ৮৯টি। এ ছাড়া আগামী অর্থবছরের এডিপিতে সরকারী-বেসরকারী অংশীদারত্ব বা পিপিপিতে ৮৮টি প্রকল্প রাখা হচ্ছে। যদিও গত কয়েক বছরে এডিপিতে পিপিপি খাতে প্রকল্প রাখা হলেও কাক্সিক্ষত হারে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ ছাড়া আগামী অর্থবছরের এডিপিতে ৬৭৮টি প্রকল্প রাখা হয়েছে, যেসব প্রকল্প আগামী অর্থবছরের মধ্যেই শেষ করতে হবে।
×