ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাম্পার ফলনে খুশী কৃষক

জুনের শেষে বাজারে আসার অপেক্ষায় রংপুরের হাড়িভাঙ্গা আম

প্রকাশিত: ১৮:০৬, ১৬ মে ২০২১

জুনের শেষে বাজারে আসার অপেক্ষায় রংপুরের হাড়িভাঙ্গা আম

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর ॥ হাড়িভাঙ্গা আম সরকারিভাবে স্বীকৃতি পাওয়ায় রংপুরের তিন উপজেলায় গতবারের চেয়ে এই আমের চাষ অনেক বেড়েছে। এবারে ফলনও হয়েছে ভালো। মূলতঃ জেলার মিঠাপুকুর, রংপুর সদর, বদরগঞ্জ এই তিনটি উপজেলায় বানিজ্যিকভাবে হাড়িভাঙ্গা আমের চাষ হচ্ছে। আমটির অতুলনীয় স্বাদ ও গন্ধের কারণে দিনে দিনে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ফলে পাশর্^বর্তী জেলা এবং উপজেলাগুলোতেও এ আমের চাষ ছড়িয়ে পড়ছে। এতে শত শত আম চাষির ভাগ্যের চাকা ঘুরছে। ফিরে এসেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা । রংপুর কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জুন মাসের শেষ দিকে হাঁড়ি ভাঙ্গা আম বাজারে আসতে শুরু করবে। এবার ফলন ভালো হয়েছে। তাই বেশ খুশি এখানকার আম চাষিরা। তাদের বিশ্বাস এবারও তারা লাভের মুখ দেখবেন। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার আখিরাহাট, পদাগঞ্জ, মাঠেরহাট, বদরগঞ্জের গোপালপুর, নাগেরহাট, সর্দারপাড়া, রংপুর নগরের বড়বাড়ী, সদর উপজেলার সদ্যপুস্করণী ইউপির কাঁটাবাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বিশাল বিশাল বাগানে সারি সারি আম গাছ। থোকা থোকা সবুজ আমের ভাড়ে নুইয়ে পড়ছে গাছের ডাল। বাড়ির উঠান ও ধানের জমির আইলসহ চারিদিকে সারি সারি আমের বাগান। গ্রামের প্রতিটি সড়কের দুই ধারে, প্রতিটি বাসা-বাড়ির পরিত্যক্ত জায়গা লাগানো হয়েছে আমগাছ। প্রত্যেকটি গ্রাম যেন আমের গ্রাম। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, চলতি বছর রংপুরের আট উপজেলায় ১ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমির আমবাগানে ফলন এসেছে। এর মধ্যে রংপুর মেট্রপলিটন এলাকায় ২৫ হেক্টর, সদর উপজেলায় ৬০ হেক্টর, কাউনিয়া উপজেলায় ১০ হেক্টর, গংগাচড়া উপজেলায় ৩৫ হেক্টর, মিঠাপুকুর উপজেলায় ১ হাজার ২৫০ হেক্টর, পীরগঞ্জ উপজেলায় ৫০ হেক্টর, পীরগাছা উপজেলায় ৫ হেক্টর, বদরগঞ্জ উপজেলায় ৪০০ আর তারাগঞ্জ উপজেলায় ১৫ হেক্টর রয়েছে। মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জ এলাকার আমচাষী আশরাফুল ইসলাম জানান, ২৪ শতক জমিতে আম গাছ থাকে ৪০ থেকে ৪৫টি। কীটনাশক, সার আর শ্রমিকসহ খরচ হয় সর্বোচ্চ ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। আর আম বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। আম চাষি রিয়াজুল ইসলাম জানান, এ বছর এক একর জমির আম বাগানে মুকুল আসার পর তিনি দেড় লাখ টাকা বিক্রি করেছেন। আরো ৫টি বাগান আছে তার। আমে লাভ বেশি হওয়ায় ধান চাষ বাদ দিয়েছেন। বাড়ি ভিটায় এক একর জমিতে উঠান থেকে শুরু করে ১৫০টি আম গাছ লাগিয়েছেন। আমচাষি সবুজ আহমেদ বলেন, আট থেকে ১০ বছর আগেও জেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ চরম অভাবে ছিলেন। তিন বেলা তো দূরের কথা, অনেকের এক বেলাও খাবার জুটত না। এলাকার মাটি লাল হওয়ার কারণে এখানে বছরে একবার ধান হতো। বাকি আট মাস জমি পড়ে থাকত। কিন্তু হাঁড়িভাঙা আম ভাগ্য বদলে দিয়েছে। হাঁড়িভাঙ্গা আমকে ঘিরে রংপুরসহ আশপাশের কয়েকটি উপজেলায় বেকার মানুষের সংখ্যা কমেছে। বিশেষ করে মিঠাপুকুর উপজেলার লালপুর, পদাগঞ্জ, তেয়ানিসহ আশপাশের গ্রামের বেকার যুবকরা এখন আম ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে অর্থ উপার্জনের এক নুতন পথ খুঁজে পেয়েছে। রংপুরে হাঁড়িভাঙ্গা আমের সম্প্রসারক আব্দুস সালাম জানান, স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় এই হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাগান এখন উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় করা হয়েছে। আমটির ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় এই আমের সুনাম দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। রংপুর অঞ্চলের সার্বিক অর্থনীতির চিত্র বদলে দিচ্ছে । রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার জানান, রংপুরে এখন ব্যাপকভাবে এই আম চাষ হচ্ছে। এই আম চাষে খুব একটা পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয় না হওয়ায় মানুষ আম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তিনি বলেন, রংপুরের আট উপজেলায় এবার হাঁড়িভাঙ্গা আম চাষ হয়েছে ১ হাজার ৮৫০ হেক্টরে। অন্যান্য জাতের আম চাষ হয়েছে ৩ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে। শিলাবৃষ্টি বা ঘুর্ণি ঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে হাড়িভাঙ্গা বিদেশেও রপ্তানী করা যাবে। এ অঞ্চলে আম সংরক্ষণের জন্য বিশেষায়িত হিমাগার স্থাপনের দাবি জানান তিনি। জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, ‘আম বেচা-কেনায় যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয় এবং পরিবহনে ব্যবসায়ীদের কোনো হয়রানির শিকার হতে না হয় সে ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে প্রশাসন।
×