ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পে হাজারও মানুষের ঢল

ঈদের উৎসবে করোনায় মৃত্যুর ভীতি উত্তরের মানুষের আনন্দে বাধা হতে পারেনি

প্রকাশিত: ১৮:০৫, ১৬ মে ২০২১

ঈদের উৎসবে করোনায় মৃত্যুর ভীতি উত্তরের মানুষের আনন্দে বাধা হতে পারেনি

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট ॥ আজ রবিবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে জেলার হাতিবান্ধা উপজলোর দোয়ানীতে অবস্থিত দেশের বৃহত্তর সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ও নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে সপরিবারে হাজারো মানুষরে ঢল নেমেছে। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রনে দেশে সরকারি ভাবে দ্বিতীয় লকডাউন চলছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি মারাতœক আকার ধারণ করেছে। সেই দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের ও সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে গেছে। সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট সীমান্ত পয়েন্ট গুলো এক রকম সীলগালা করা হয়েছে। দেশে অভ্যন্তরিন সকল প্রকার যানবাহন ও গণ পরিবহন বন্ধ রয়েছে। তারপরও সাধারণ মানুষ করোনা সংক্রমণ ভীতি কে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছে। ঈদের আনন্দের মাঝে করোনা সংক্রমণ ভীতি নিয়ে কোন সচেতনতা নেই। কোন স্বাস্থ্য বিধি মানা হয়নি। মানা হয়নি কোন সামাজিক বা শারীরকি দূরত্ব। এমনকি মানুষ জনের অধিকাংশের মুখে ছিলনা মাস্ক। স্থানীয় প্রশাসন অবাধে চলাফেরায় কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। সব কিছু চলছিল ঢিলেঢালা । ঈদের দিন দুপুরের পর হতে ব্যারাজ এলাকায় বাগানে ও সেচ কাজের অবকাঠামো গুলোতে নানা বয়সের নারী পুরুষ ও সাধারণ মানুষের জমতে শুরু কর। দূর-দূরান্ত থেকে নিজেদের উদ্যোগ্যে মোটরসাইকলে, রিক্সা, ভ্যান, অটোরিক্সা, পিকাপ, কার, মাইক্রোবাসে চেপে নদী ও নদী তীরের প্রাকৃতিক মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছে। দর্শনার্থীদের ভীরের কারণে ব্যারাজ এলাকায় গ্রামীণ মেলার পরিবেশ সৃষ্টি হয় ৷ দর্শনার্থীদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ছোট্ট ছোট্ট অস্থায়ী নানা পণ্যের দোকান বসেছে। এসব পণ্যের দোকানে খাবার পণ্য ও শিশুদের খেলা সামগ্রী পসরা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। বেচা বিক্রি বেশ জমে উঠেছে। ঈদের আমেজে এভাবে কয়েকদিন চলবে। ব্যারেজ পাড়ের অধিবাসী রমজান মিয়া(৪৫) জানান, করোনা সংক্রমণ ভীতি নিয়ে কত প্রচার প্রচারণা চলছে কিন্তু তিস্তা পাড়ের মানুষের মাঝে তাঁর কোন প্রভাব আজকের সমাবেশ দেখে বুঝার উপায় নেই। স্বাস্থ্য বিধি, সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব কেউ মানছে না। এমন কি কোন কোন মানুষ মুখে মাস্ক পর্যন্ত পড়েনি। গাদাগাদি করে মানুষ যানবাহনে চেপে আসছে। তারা হাত ধরে ব্যারাজ ও নদী তীরে ঘুরতে দেখা গেছে। কয়েক যুবক, তরুন ও তরুণীকে তিন জন করে মোটরসাইকেলে চেপে আসতে দেখা গেছে। শারীরিক দূরত্ব মানার কোন বালাই নেই। প্রতি বছরই ব্যারাজে ঈদ, পুজা, নানা উৎসব ও লোকজ সংস্কৃতিক উৎসবে লোক সমাগম হয় থাকে। এ বছর দেশীয় কোন উৎসবে ও পুজোয় ব্যারেজ এলাকায় জনসমাগম হয়নি। এরকারণ হচ্ছে বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি চলছে। এই মহামারি বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের ছিল বিধি নিষেধ। তাই লোক সমাগম না হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঈদের আনন্দের কাছে এসব বিধি ও করোনা ভীতি কোন বাধা হতে পারেনি। বরং এতো বেশি দর্শনার্থী এসেছে স্থানীয় প্রশাসন কে সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। উপজলো প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, তিস্তা ব্যারেজের প্রশাসন ও হাইওয়ে থানা পুলিশ প্রথমের দিকে জনসমাবেশ করতে দর্শনার্থীদের প্রতিবন্ধকতার চেষ্টা করে ছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। ঘুরতে আসা পর্যটকের একজন দর্শনার্থী জাহানারা বেগম রেখা(৪৫) জানান, নগর জীবনে বন্দী থাকতে থাকতে হাপিয়ে পড়েছি। বহু কষ্টে ঢাকা হতে গ্রামে স্বজনদের কাছে ঈদ করতে এসেছি। তাই মানুষিক চাপমুক্ত ভারমুক্ত রাখতে বাচ্চাদের সাথে একটু ঘুরতে এসেছি। মনে করেছিলাম খোলামেলা প্রাকৃতিক পরিবেশে একটু ফ্রেস হব। বাস্তবে এসে দেখি উল্টো। এখানেও জনসমুদ্র। দীর্ঘদিন লকডাউন থাকার ফলে এমনটি হয়েছে। বন্দী মানুষ ঈদের দিনটি কে মুক্তির দিন মনে করছে। তাই ভয়ডর নেই। দোয়ানী পুলশি ফাঁড়ির দায়িত্বরত এসআই সিদ্দিক জানান, সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য বিধি বজায় রাখে দর্শনার্থীদের অনুরোধ করতে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্য গণ মাঠে কাজ করছে। এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মানুষকে ঘুরতে আসতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। কিন্তু মানুষ শুনছে না। এমন আচরণ এই করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে কাহারও কাম্য নয়। আমরা তাদের সন্ধ্যার আগে নিজনিজ গন্তব্যে চলে যেতে অনুরোধে করে মাইকিং করছি। ঈদের দিন তাই বিনয়ের সাথে অনুরোধ করছি। দেশবাসীকে মেসেজ দিতে চাই । কেউ যেন, তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় এভাবে ঘুরতে না আসে। কে শুনে কার কথা । আজ রবিবার ঈদের দ্বিতীয় দিনেও তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় হাজারো মানুষের ঢল নামে।
×