ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এলপি গ্যাসের বাজার দরে হযবরল

প্রকাশিত: ১৮:০৬, ১৫ মে ২০২১

এলপি গ্যাসের বাজার দরে হযবরল

অনলাইন রিপোর্টার ॥ বিইআরসির নির্ধারিত এলপি গ্যাসের দর অনেক ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না। কিছু জায়গায় কম দামে বিক্রি হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চমূল্যে বিক্রি করার খবর পাওয়া গেছে। বিইআরসি আদেশ দিয়ে নিবর, যে কারণে ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা দাম আদায় করছেন নিজের খেয়াল-খুশি মতো। ঝালকাঠি শহরে কারেন্ট ট্রেডার্সের মালিক শংকর বলেন, আগের মাসের তুলনায় চলতি মাসে অনেক কোম্পানি কিছুটা করে দর কমিয়েছে। তবে বেক্সিমকো তাদের গ্যাসের দাম কমায় নি। বেক্সিমকোর ১২ কেজি সিলিন্ডার ঈদের তিন দিন আগেও ৯৬০ টাকা দরে কিনে এনেছি। আমরা বিক্রি করছি ৯৮০ থেকে ৯৯০ টাকায়। অন্যান্য সকল কোম্পানি ৯০০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে। ওমেরা কিনেছি ৮৯০ টাকা, বিক্রি করছি ৯২০ থেকে ৯৩০ টাকা, বসুন্ধরা ৮৯০ কিনে বিক্রি করছি ৯৩০ টাকা, বিএম ৮৮০ টাকা কিনে বিক্রি করছি ৯১০ টাকা। বেক্সিমকো এলপি গ্যাসের মূল্য বেশি হওয়ার কারণ কি। এমন প্রশ্নে শংকর বলেন, আমিও ডিলার রব ট্রেডার্সকে প্রশ্ন করেছিলাম। তারা বলেছে লাভ হয় না, কোম্পানি দাম কমায় নি আমরা দেবো কোথা থেকে। অনেক চেষ্টা করেও রব ট্রের্ডাসের মালিক রহিম চেয়ারম্যানের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয় নি। অথচ উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর সঙ্গে নৌ যোগাযোগ খুবই উন্নত। গলাচিপা নদীর তীরে অবস্থিত শহরটিতে স্বল্প খরচে সিলিন্ডার আনা নেওয়া করা সম্ভব। রয়েছে মোংলার সঙ্গে উন্নত সড়ক যোগাযোগ। যেখানে অবস্থিত বেশিরভাগ কোম্পানির বোটলিং প্লান্ট। চট্টগ্রাম ও খুলনার পর বরিশাল অঞ্চলে এলপিজির সরবরাহ খরচ তুলনামূলক কম। তাই এসব অঞ্চলে দামও কম হওয়ার কথা কিন্তু চিত্র পুরাই বিপরীত। এখানে সিন্ডিকেট করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে রংপুর অঞ্চলে কোথাও কোথাও সরকার নির্ধারিত দরের চেয়েও কম দামে এলপি গ্যাস কেনা-বেচার খবর মিলেছে। রংপুরের খালাশপীর বন্দরের খুচরা বিক্রেতা আব্দুল কাফী মন্ডল বলেছেন, তারা কোম্পানি ভেদে সিলিন্ডার প্রতি ৮৯০ থেকে ৯২০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। ডিলাররা তাদের নিজেদের গাড়িতে করে সিলিন্ডার দোকানে পৌঁছে দিয়ে যান। বসুন্ধরা এলপিজি ৮৮০, ফ্রেস ৮৭০ এবং নাভানা ৮৭০ টাকা। রাজশাহীতে এলপি গ্যাস ৯২০ থেকে ৯৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এখানেই সরকারের প্রভাবশালী উপদেষ্টার কোম্পানির বেক্সিমকোর দাম সবার চেয়ে বেশি। খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, কোম্পানিটির ডিলার ৮৯০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। পরিবহন খরচসহ দোকানে আসছে ৯১০ টাকায়। যে কারণে ৯৫০ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। যমুনা, বিএম ও টোটাল গ্যাস ৯২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বরিশালের উজিরপুরে অবস্থিত মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজের মালিক জাহিদুর রহমান বলেছেন, আমার টিকে গ্রুপের ডেল্টা গ্যাস এবং এনার্জিপ্যাকের জি-গ্যাসে ডিলারশীপ রয়েছে। আমরা নিজেদের গাড়িতে করে খুচরা বিক্রেতার দোকানে পৌঁছে দিচ্ছি ৮৪০ টাকায়। আর খুচরা বিক্রি করছি ৯০০ টাকায়। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গত ২৮ এপ্রিল এলপি গ্যাসের দর ঘোষণা করে। বেসরকারি এলপিজির সিলিন্ডারের (১২ কেজি) দর ৯৭৫ টাকা থেকে কমিয়ে ৯০৬ পুনঃনির্ধারণ করে। অটোগ্যাস লিটার প্রতি ৪৪.৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি মাসের শেষ সপ্তাহে পরবর্তী মাসের দর জানাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে বিইআরসি। কমিশন, কোম্পানির প্রফিট, পরিবহন খরচ অন্যান্য খরচ অপরিবর্তিত থাকবে। শুধু সৌদি আরামকোর নির্ধারিত এলপিজির আমদানি মূল্য সমন্বয় করা হবে এতে। প্রথম এপ্রিল মাসের জন্য দর ঘোষণা করা হয়। এরপর গ্যাসের দাম কমে গেলে মে মাসে দাম কমিয়ে দেয় বিইআরসি। চলতি মাসে আরও দাম কমে গেছে। যে কারণে আসছে জুন মাসে আরও দাম কমে যাবে বলে বিইআরসি সূত্র জানিয়েছে। মার্চে সৌদি সিপি(সৌদী আরামকো কন্ট্রাক্ট প্রাইস)ছিল যথাক্রমে প্রতি টন প্রোপেন বিউটেন ৬২৫ ও ৫৯৫ ডলার। সেই দর এপ্রিল হয় যথাক্রমে ৫৬০ ও ৫৩০ ইউএস ডলার। মে মাসে যথাক্রমে ৪৯৫ ও ৪৭৫ ডলারে নেমে এসেছে। বিইআরসির চেয়ারম্যান আবদুল জলিল মে মাসের দর ঘোষণা অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, বিগত মাসের ঘোষিত দর বাস্তবায়ন হয়নি এ কথায় বলা যাবে না। সম্পুর্ণ বাস্তবায়ন হয়েছে এ কথায় বলা যাবে না। তবে হ্যাঁ কোনো কিছু বাস্তবায়ন করতে একটু সময় লাগে। কমিশন একক প্রতিষ্ঠান নয়, এরসঙ্গে অনেক দপ্তর অধিপ্তর রয়েছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। প্রশাসনিক বিভাগ এবং আমরা আমাদের আইনি ক্ষমতা প্রয়োগ করবো। সুনির্দিষ্টভাবে লিখিত অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপনারা আমাদেরকে সময় দেন অবশ্যই বাজার স্বাভাবিক করা হবে। বিইআরসির গ্যাস (গ্যাস) মকবুল ই এলাহী চৌধুরী বলেন, আমার প্রথম অনুরোধ থাকবে গ্রাহকদের প্রতি, তারা যেনো দোকানে গিয়ে প্রথমে সরকারি দরটা জানতে চান। বেশি দর হলে সুনির্দিষ্ট করে আমাদেরকে লিখে জানালে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি জনগণকে সচেতন করতে মিডিয়াকে আরও ভূমিকা রাখার অনুরোধ করবো। তারা যেনো আরও বেশি বেশি প্রচার করেন।
×