ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মৃত্যুর ঝুঁকি যেনেও নাড়ির টানে ঘরমুখো মানুষ

প্রকাশিত: ১৩:০৭, ১৩ মে ২০২১

মৃত্যুর ঝুঁকি যেনেও নাড়ির টানে ঘরমুখো মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা সদরের বাসিন্দা রাকিব হোসেন। পড়াশুনা শেষ করে চাকরির খোঁজে ঢাকার এক আত্মীয়র বাসায় উঠেছিলো। কিন্তু করোনার কারণে চাকরি না পেয়ে সে অনেতটা হতাশ হয়ে পরেন। এরমধ্যে গ্রাম থেকে বাবার পাঠানো টাকা দিয়ে তার কোনোভাবে চলছিলো। কিন্তু লকডাউন আর ঈদের কারণে ঢাকায় থাকাটা তার কাছে অযথা মনে হয়েছে। ফলে ব্যাগ কাঁধে তুলে যাত্রা শুরু করেন গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে। তবে দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল না করায় তিনগুনেরও বেশি সময় ও অর্থ ব্যয় করে চরম দুর্ভোগ মেনেই তাকে বাড়িতে পৌঁছতে হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় নগরীতে বসে কথা হয় রাকিবের সাথে। সে জানান, সব চেয়ে বেশি কষ্ট হয়েছে মাওয়া ফেরী ঘাটে। প্রচুর মানুষ তার ওপর নদী পার হওয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। যে যার মতো করে চেষ্টা চালাচ্ছেন পদ্মা পার হওয়ার, কিন্তু সবাইকে ফেরীতেই পার হতে দেখেছেন তিনি। তিনি বলেন, ফেরীতে পদ্মা পার হতে গিয়ে করোনা বলতে যে কিছু আছে তাইতো মনে হয়নি। যে যার মতো করে গাদাগাদি করে ফেরীতে রয়েছেন। শিশু থেকে বৃদ্ধ, যার ইচ্ছে হয়েছে মাস্ক পরেছেন, যার হয়নি পরেননি। যারা পরেননি তাদের কেউ বলেনিও মাস্ক পরার জন্য। এরপর এপাড়ে এসে অনেক কষ্ট করে একটি মাহিন্দ্রাযোগে বরিশাল নগরীতে এসে পৌঁছেছেন। তবে পথে আসতে আসতে দেখেছি অনেকেই আন্তঃজেলা বাসের পাশাপাশি পিকআপ ও ট্রাকেও উঠে আসছেন। বরিশালের নথুল্লাবাদ বাস-টার্মিনালে বসে কথা হয় পটুয়াখালীগামী একটি পিকআপের চালক মাসুদের সাথে। যার পিকআপে দক্ষিণাঞ্চলগামী মানুষ যাত্রী হয়ে উঠেছেন। মাসুদ বলেন, মানুষ আসতে চাইলে কি-ই বা করার আছে। আর খালি আসার চেয়ে কয়েকজন যাত্রী নিয়ে আসায় ঈদের আগে কিছুটা বাড়তি আয়তো হয়েছে। তিনি বলেন, পথে পথে প্রশাসনসহ বিভিন্নস্থানে টাকা দিয়েই যাত্রীদের নিয়ে মাওয়া থেকে নথুল্লাবাদ পর্যন্ত এসেছেন। তবে যাত্রীরা বলেন, পিকআপ ও ট্রাকে চড়ে দুর্ভোগের মধ্যে তারা বাড়িতে ফিরছেন। আর এক্ষেত্রে তাদের গুনতে হচ্ছে দ্বিগুন ভাড়া। বরিশাল থেকে মাওয়ার বাস ভাড়া তিনশ’ টাকা হলেও এখন মাহিন্দ্রাতেই সেই ভাড়া গুনতে হচ্ছে ছয়শ’ টাকা। আর ভেঙে ভেঙে যারা আসছেন তাদের খরচের হিসেবটা আরও অনেক বেশি। নগরীর প্রবেশদ্বার গড়িয়ারপাড়ে দেখা গেছে, যে যেভাবে যে যানবাহনে পারছেন বরিশালমুখী হচ্ছেন। তবে এরমধ্যে বেশিরভাগ লোকই বরিশালসহ বিভাগের অন্য পাঁচ জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। যাদেরমধ্যে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরে আসা মানুষের সংখ্যা বেশি। এদের কারোরই স্বাস্থ্যবিধি মানার যেমন কোনো বালাই নেই। তেমনি সড়কজুড়ে প্রশাসনিক কোনো তৎপরতাও লক্ষ্য করা যায়নি। আর প্রশাসনিক তৎপরতা তেমন একটা না থাকায় যানবাহনগুলো বেপরোয়াগতিতে মহাসড়কে চলাচল করছে। বেপরোয়াগতির কারণে বুধবার সকালে গৌরনদীতে সড়ক দুর্ঘটনায় থ্রি-হুইলারের যাত্রী দুইজন পোশাক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। যারা চট্টগ্রাম থেকে বরিশাল ও ঝালকাঠিতে যাচ্ছিলেন। এছাড়া ভোরে অন্ধকারের মধ্যেই বরিশাল সদর উপজেলার লাহারহাট ঘাটে দুটো ট্রলারের সংঘর্ষ হয়। এতে কয়েকজন ঘরমুখো ট্রলারের যাত্রী ও তাদের বহনকারী দুটি মোটরসাইকেল নদীতে পরে যায়। তবে যাত্রীরা সাঁতরে নদী তীরে উঠে গেলে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
×