ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির দেউলিয়াত্ব

প্রকাশিত: ২০:৪৫, ১১ মে ২০২১

বিএনপির দেউলিয়াত্ব

কাল-মহাকাল নান্দনিক এবং ইতিহাস সম্পন্ন হয়ে ওঠে সাহিত্যিক এবং কবিগণের কলম জাদুতে। তবে সময় সময় এই মহতী কলম-কালির খরাও দেখেছে সমাজ, সংস্কৃতি এবং পরিবার। এই সৃষ্টিশূন্যতা সকল সাহিত্য স্রষ্টার মাঝেই অনুভূত হয়। তখন সহস্র চেষ্টার পরও লেখা ধরা দেয় না। একে ইংরেজীতে পোয়েটিক স্ট্রাইক বলা হয়। সৃষ্টির যাতনায় এই আত্ম-ক্রন্দন অসম বেদনার। কবি ও কবিতার মতো বাংলাদেশের রাজনীতিতেও এ ধরনের স্ট্রাইক চলমান। সাহিত্য উপমার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একে পলিটিক্যাল স্ট্রাইক বলা যায়। যদিও রাজনীতির ক্ষেত্রে এ ধরনের শব্দ সংযোজন যৌক্তিক কিনা সেই দায় সময়েরই। তবে সব হিসাবে এই শব্দটি সবচেয়ে বেশি এখন প্রযোজ্য বিএনপির ক্ষেত্রে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উন্নয়নমুখী রাজনীতির সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে পূর্বাপরই সহিংসতার রাজনীতিকে আপন করে নিয়েছে বিএনপি। এর সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্ত হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করা! আর শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি, তাঁর অবস্থা বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতার মতোই আরেক ১৫ আগস্ট হবে এমন মন্তব্যসম্পন্ন ধৃষ্টটা প্রদর্শন। ভিন্নভাবে বললে বলতে হয় হত্যার হুমকি, বাতুলতা এবং বাকসর্বস্ব বুলি আওড়ানোই এখন তাদের রাজনৈতিক ফ্যাশন বা স্ট্যান্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষমতাকেন্দ্রিক সমালোচনা গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। অতি পুরনো এই রীতি বৈশ্বিকভাবেই ক্ষমতাসীন দলের উন্নয়নমূলক কাজের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিয়ে। তবে এখানকার ক্ষেত্রে সেটা উল্টো। এক সময়ের সরকার ও বিরোধী দল বিএনপি ক্ষমতাকেন্দ্রিক এবং সাংগঠনিক কর্মপরিধির জবাবদিহিতার বদলে ব্যক্তি-পারিবারিক আক্রমণে উস্কানি দিতে ব্যস্ত। এ ধরনের রাজনৈতিক শিষ্টাচার এবং অসৌজন্যতাই বিএনপির বর্তমান রাজনীতির ধরন। তাছাড়া নিজেদের দুর্নীতি, অর্থ কেলেঙ্কারি, মানুষ হত্যার রাজনীতির কারণে জনগণের সঙ্গে রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা তো আছেই। ফলাফল মাঠের রাজনীতি ছেড়ে আক্রান্তের প্রচ্ছন্ন হুমকি-ধমকিতেই তারা ব্যস্ত। সম্প্রতি রাজশাহীর এক বিএনপি নেতা শেখ হাসিনার পরিণতি ১৫ আগস্ট অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর মতো হবে বলে বক্তব্যে প্রকাশ করেছেন, যা রাজনীতিতে ব্যাকফুটে থাকা বিএনপির জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। কারণ জনগণ এখন উন্নয়নমূলক রাজনীতিমুখী। কাজেই এই ধরনের বক্তব্য বিএনপির দলীয় স্ট্যান্ড নাকি সেই বিএনপি নেতার মানসিক অসুস্থতার ফলাফল সেটা দল হিসেবে বিএনপিকে পরিষ্কার করতে হবে। আর সেটা যদি তাদের পূর্ব রাজনৈতিক কৌশলের পুনঃসঞ্চালনই হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে বাঙালীর শান্ত সাহসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা আরও জোরদার এবং এই অপকৌশল মোকাবেলার কৌশল নির্ধারণ করা জরুরী। এক্ষেত্রে জনগণেরও দায় আছে। কারণ রাজনীতিতে সন্ত্রাস ও অসৌজন্যতা এক সঙ্গে চলতে পারে না। রাজনীতিতে প্রতিপক্ষ হিসেবে রাজনৈতিক চিন্তাসম্পন্ন বিরোধিতা দুই পক্ষকেই পরিপক্ক করে। তবে এটা সত্য যে, ইতিহাস বিকৃতি, শেখ হাসিনাকে হত্যা এবং আক্রমণ করা এসবের রাজনীতি না ছাড়া পর্যন্ত বিএনপির রাজনীতিতে রাজনৈতিক চিন্তা আসবে না। ফলাফল তাদের পলিটিক্যাল স্ট্রাইকও ছাড়বে না। তবে এসব ছেড়ে তাদের জনগণের হয়ে ওঠার চেষ্টা করাই জরুরী। পাশাপাশি দলীয় ‘আনুগত্য-মননে’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ধারণ করার প্রয়াস আবশ্যক। ভারতের অঙ্গরাজ্য রাজস্থানে রুদালি নামক এক শ্রেণীর নারী আছেন যারা কোন ব্যক্তি মারা গেলে তার জন্য মাতম বা কান্না করতে হাজির হন। পোশাক হিসেবে পরেন যমের পছন্দের কালো পোশাক। এটাই তাদের পেশা। তবে এই সেবার বিশেষ ভোক্তা আত্মীয়হীন মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধাচারণকারী যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের সঙ্গে জোট এবং রাজনৈতিকভাবে সহিংসতাকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি এখন আইসিইউতে। কাজেই এই সমস্ত সঙ্গ ত্যাগ না করলে তাদের জন্যও হয়ত রুদালি সম্প্রদায়ের প্রয়োজন পড়বে। কারণ এ প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা ভীষণ সচেতন। তারা জানেন মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শিবিরের সঙ্গে জোটবাঁধা এবং তাদের গাড়িতে রাষ্ট্রীয় পতাকা তুলে দিয়েছিল বিএনপিই। কাজেই দলীয়ভাবে মিথ্যাচার, দুর্নীতি, হত্যা এবং ষড়যন্ত্রের রাজনীতি ছেড়ে বেরোতে পারলেই কেবল বিএনপির পলিটিক্যাল স্ট্রাইক ঘোচা সম্ভব। লেখক : প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ [email protected]
×